ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রত্যেক গানের পেছনে একেকটা স্বপ্ন ছিল

  জায়েদ হাসান

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:০৫  
আপডেট :
 ২৪ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:৩২

প্রত্যেক গানের পেছনে একেকটা স্বপ্ন ছিল

আইয়ুব বাচ্চু। বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের কিংবদন্তী। যার গিটার জাদুতে মুগ্ধ পুরো বিশ্ব। সংগীত জগতের জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের একজন। শুধু তাই নয়, মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও বিনয় তাকে নিয়ে গেছে আরো উচ্চমাত্রায়। সম্প্রতি এই সংগীত তারকা বাংলাদেশ জার্নালের মুখোমুখি হন। কথা বললেন নিজের জীবন, সংগীত নিয়ে নিজের ভাবনা, ব্যক্তিগত জীবনের নানা অব্যক্ত কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জায়েদ হাসান

বাংলাদেশ জার্নাল: কেমন আছেন?

আইয়ুব বাচ্চু: ভালো আছি। অনেক ভালো।

বাংলাদেশ জার্নাল: এখন কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন?

আইয়ুব বাচ্চু: আমার ব্যস্ততা তো গিটার, মিউজিক নিয়ে। এই দেখেন না এখনো গিটার হাতে নিয়ে বসে আছি।

বাংলাদেশ জার্নাল: না বলছিলাম গান নিয়ে কী করছেন?

আইয়ুব বাচ্চু: কনসার্ট করছি। নতুন নতুন গান মঞ্চে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করছি।

বাংলাদেশ জার্নাল: অনেক দিন হলো আপনার নতুন কোনো অ্যালবাম দেখা যাচ্ছে না।

এই তারকার পাল্টা প্রশ্ন, এখন কার নতুন অ্যালবাম দেখছেন? কে অ্যালবাম বের করছে?

বাংলাদেশ জার্নাল: তাহলে আমরা নতুন কোনো অ্যালবাম পাচ্ছি না?

আইয়ুব বাচ্চু: এই মুহূর্তে অ্যালবাম বের করার চিন্তা নেই। আগে টেলিকম কোম্পানির জন্য যে নতুন গান বের করতাম সেটাও এখন মৃত প্রায়। কারণ এখন আর কলার টোন তেমন ব্যবহার হয় না। বরং এর চেয়ে একটা নতুন গান তৈরি করে মঞ্চে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা ভালো। আর আমরা তাই করছি।

বাংলাদেশ জার্নাল: টেলিভিশনে যে মিউজিকের প্রোগ্রামগুলো হচ্ছে তাতে কি নতুনত্ব আনা দরকার বলে মনে করেন?

আইয়ুব বাচ্চু: এ বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করে ডিরেক্টরের উপর। তাকে আরো ভাবা দরকার। কী করলে প্রোগ্রামটি দর্শকদের কাছে ভালো লাগবে। উপস্থাপক যিনি আছেন তাকে অতিথি সম্পর্কে আগে থেকে জেনে আসতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল: মিউজিক ইন্ড্রাস্টির ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?

আইয়ুব বাচ্চু: ভবিষ্যৎ তো ভবিষ্যতই বলে দেবে। কিন্তু একটা জিনিস আমাদের আগে থেকে ঠিক করতে হবে। সেটা হচ্ছে আসলে আমরা কী করতে চাই। আমাদের গানটাকে কোথায় দেখতে চাচ্ছি, আন্তর্জাতিক বাজারে? দেখলে কীভাবে দেখতে চাচ্ছি। বাংলা গানকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাচ্ছি।

বাংলাদেশ জার্নাল: আগে তো দেখা যেত রাস্তার মোড়ে মোড়ে সিডির দোকান। এসব দোকানে গান বাজতো। নতুন গান আসলে একটা উৎসবের মত মনে হতো। কিন্তু এখন সেসব দেখা যায় না…

আইয়ুব বাচ্চু: ওই যে পুরনো গল্প ‘পাইরেসি’। পাইরেসি নামক একটি বিমার এসেছিল। যে বিমার বাংলাদেশ থেকে গান বাজনা বন্ধ করে দিয়েছিল। সবাই গান বন্ধ করে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সাধারণত এটার জন্য দায়ী এসব পাইরেসি সিডি বিক্রেতারা। সেই সঙ্গে ক্রেতারাও। তারা ফুটপাত থেকে পাইরেসি সিডি কিনে শিল্পীদের ঠকিয়েছেন। এখন তো ইউটিউব চলে এসেছে। এটা আরো খোলা যায়গা। এখন সব উন্মুক্ত। ইউটিউবে সব পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: এখন তো প্রযুক্তির সময়। ইউটিউব আসছে, আরো নতুন প্রযুক্তি আসবে। সেটা তো আর আটকানো যাবে না। সে ক্ষেত্রে বিকল্প কিছু ভাবা যায় না?

আইয়ুব বাচ্চু: এটা হুট করে বলা যাবে না। কারণ ইউটিউব এখন বিকল্প। এটা বিশ্ব জুড়ে। বরং এটার ভালো দিক আছে। বাংলাদেশি গান এর মাধ্যমে অন্যান্য দেশের মানুষরাও দেখতে পারছে। এটা যেহেতু আধুনিক মাধ্যম, তাই এটা নিয়ে চিন্তা না করে মেধাকে কীভাবে বিকশিত করা যায় তা নিয়ে ভাবা দরকার।

বাংলাদেশ জার্নাল: তরুণরা মিউজিকে আসছে বিষয়টি কেমন দেখছেন?

আইয়ুব বাচ্চু: খুবই পজিটিভ। কারণ এই তরুণরাই আগামীতে বাংলাদেশের সংগীতকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারা যে চেষ্টা করে যাচ্ছে সেটা ভালো দিক। তাদের বলবো যা করছো সুপার করছো, চালিয়ে যাও।

বাংলাদেশ জার্নাল: আপনার সংগীত জীবনের শুরুটা কেমন ছিল?

আইয়ুব বাচ্চু: আসলে মানুষের শুরুটা সুখকর হয় না। তাকে সংগ্রাম করে এগিয়ে যেতে হয়। আমার শুরুটাও তেমন ছিল। অনেক বাধা পেরিয়ে এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে। সংগীত জীবনের শুরুটা আমার কষ্টের ছিল। প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়েছে। কিন্তু আমি হারতে চাইনি। আমি মনে করি মানুষের কাজ হচ্ছে উঠে দাঁড়ানো। পড়ে যাওয়া নয়। আর সে কাজটিই আমি করেছি। আমার গিটার নিয়ে করেছি। ব্যান্ড নিয়ে করেছি। মানুষ বলে না ‘মিউজিকের পাশাপাশি আপনি কী করেন’? আমি বলি, মিউজিকের পাশাপাশি মিউজিক করি। এটাই আমার রিজিক আর অন্য কোনো রিজিক নাই।

বাংলাদেশ জার্নাল: আপনার সব গানই জনপ্রিয়। তবে এমন কিছু গান আছে যা আজীবন মানুষ মনে রাখবে। সে সব গানের পেছনের গল্প কেমন ছিল?

আইয়ুব বাচ্চু: একেকটা গানের একেক রকম গল্প। কিন্তু প্রত্যেক গানের পেছনে একেকটা স্বপ্ন ছিল। যেমন, ‘ফেরারী এই মনটা আমার’ এই গান একটা স্বপ্ন নিয়ে করেছিলাম। তাৎক্ষণিকভাবে করা হয়েছিল এটি। এর কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছিল না।

বাংলাদেশ জার্নাল: পাঠকদের জন্য কিছু বলার থাকলে বলুন।

আইয়ুব বাচ্চু: ভালো গান শুনুন। বাবা-মা’র কর্তব্য পালন করুন। ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, পরিবার, বন্ধু সবার খোঁজ-খবর নিন। ভালো থাকুন অনেক ভালো। কারণ জীবন একটাই। নিজেকে ভালোবাসুন।

বাংলাদেশ জার্নাল: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আইয়ুব বাচ্চু: আপনাকেও ধন্যবাদ, বাংলাদেশ জার্নালকেও।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত