ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

১২ বছর ধরে শিকলবন্দি আরশাদ!

  কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২০, ১১:১৯

১২ বছর ধরে শিকলবন্দি আরশাদ!

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় আরশাদ মিয়া (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে একটি খোলা ঘরে ১২ বছর ধরে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। পরিবারের আর্থিক দীনতার কারণে মানসিক ভারসাম্যহীন আরশাদ মিয়ার সুচিকিৎসাও করা যাচ্ছে না। তাদের ভিটামাটি ছাড়া নিজস্ব কোনো জমি নেই। উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের ছেলে তিনি।

জানা যায়, আরশাদ মিয়ার চার ভাই ও তিন বোন। এর মধ্যে তিনি তৃতীয়। আরশাদ মিয়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান ছিলেন। তবে মাঝে মধ্যে পাগলামি করতেন। এ কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বিয়ে করানো হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর আরশাদ মিয়া সম্পূর্ণ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তাই বউ তাকে ছেড়ে চলে যান। পাগলামি চরম আকার ধারণ করলে তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়।

সরেজমিনে আরশাদ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উত্তর পাশে দোচালা একটি টিনের ঘর। ঘরটির চারপাশ খোলা। মাঝখানে একটি পাকা পিলার। পিলারের সঙ্গে আরশাদ মিয়ার ডান পা শিকল দিয়ে বাঁধা। এই কনকনে শীতের মধ্যে মেঝেতে কিছু খড় ও ছেঁড়া দুটি কাঁথার বিছানায় তিনি উলঙ্গ হয়ে বসে আছেন। দীর্ঘদিন এভাবে থেকে অনেকটাই তিনি উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েছেন। মাঝে মধ্যে তিনি কিছু কথাবার্তাও বলেন। এখানেই তার থাকা-খাওয়া, প্রস্রাব-পায়খানা চলে।

আরশাদ মিয়ার বয়োবৃদ্ধ মা জাহেরা খাতুন জানান, ১২ বছর ধরে তার ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। বিয়ে করালে পাগলামি কমে যাবে- এলাকার লোকজনের এমন কথায় তাকে বিয়ে করানো হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর পাগলামি আরও বেড়ে যায়। এলাকার মানুষকে মারধর করতে শুরু করেন। একদিন তার বড় ভাবিকে পিটুনি দেন এবং তার মায়ের মাথাও ফাটিয়ে দেন। এর পর থেকে তাকে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে।

তার মা আরও জানান, গ্রাম্য কবিরাজি চিকিৎসাসহ দুলালপুর নামের একটি এলাকায় নিয়ে সেখানে ১৫ দিন থেকে কবিরাজের চিকিৎসা দেয়ায় কিছুদিন ভালো ছিলেন। পরে আবারও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এরপর কিশোরগঞ্জে নিয়ে একজন চিকিৎসক দেখানো হয়েছে; কিন্তু ভালো হয়নি। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে উন্নত চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য এলাকার অনেক লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তিনি; কিন্তু কারো কোনো সহযোগিতা পাননি।

আরশাদ মিয়ার ভাবি হামিদা খাতুন জানান, যে ঘরটিতে আরশাদ মিয়া আছেন, সেই ঘরের সব বেড়া ও বাঁশের খুঁটি আরশাদ মিয়া ভেঙে ফেলে দিয়েছেন। পরে একটি পাকা পিলার এনে ওই পিলারে তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে আরশাদ মিয়ার যদি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড না থাকে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা করে দিতে পারব। তাছাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্তৃক পরিচালিত রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে তার জন্য বিনা মূল্যে ওষুধের ব্যবস্থা করা যাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে তার খোঁজখবর নিতে এসি ল্যান্ডকে ওই বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। তিনি খোঁজখবর নিয়ে এসেছেন। শিগগিরই তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত