ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

শেরপুরে

হাট-বাজারে ঠেকানো যাচ্ছে না জনসমাগম

  শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২০, ১৫:৫০

হাট-বাজারে ঠেকানো যাচ্ছে না জনসমাগম

শেরপুরের নভেল করোনাভাইরাস সংক্রামণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারি বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করছে না প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা করেও বিধিনিষেধ মানাতে পারছেনা ওইসব গ্রামের মানুষদের।

প্রতিদিন বিকেল হলে জেলা সদরসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর শতশত গ্রামের হাটবাজার গুলোতে লাখো মানুষের সমাগম হচ্ছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা দিন রাত ঘাম ঝরিয়ে ওইসব বাজারগুলোতে সচেতনেতা অভিযান পরিচালনা করছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সাময়িক সময়ের জন্য লোকসমাগম কমে গেলেও প্রশাসনের লোকজন চলে যাওয়ার পরপরই বাজারগুলো ফিরে পায় আগের চেহারা। এতে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শেরপুরে আসা মানুষজনের মধ্যে কেউ করোনা সংক্রমিত হয়ে থাকলে তার দ্বারা অনেকেই সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর শেরপুরে অঘোষিত লকডাউনে জেলা ও উপজেলা শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রান্তিক জনপথ এবং গ্রামের হাটবাজারগুলো কোন ভাবেই লোকসমাগম কমানো যাচ্ছে না। তাই সচেতন মহলে দাবি উঠেছে স্থায়ীভাবে সেনা মোতায়েনেসহ প্রশাসনের নজরদারী আরো জোরদার করা। এছাড়া ছুটি ঘোষণার পরে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শেরপুরে আসা জনসাধারণকে হোমকোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গ্রামের হাটবাজারগুলোতে বিকেল না হতেই বেড়ে যাচ্ছে লোক সমাগম। প্রশাসনের অব্যাহত প্রচার প্রচারণার পরও করোনা ভাইরাস যে কতটা ভয়াবহ সে সম্পর্কে গ্রামের মানুষের মাঝে সেই উপলব্ধি এখনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনাভাইরাসের বিষয়ে অবগত করলেও অধিকাংশ মানুষই বিষয়টিকে আমলে নিচ্ছে না।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পিপিই না পাওয়ায় তারা আতঙ্কের মধ্যে কাজ করছেন।

এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডাঃ একেএম আনওয়াারুর রউফ জানিয়েছেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনেই পিপিই দেয়া হবে। এখন পর্যন্ত যেহেতু করোনা পজিটিভ কোন রোগী এখানে ধরা পরেনি তাই এখনই স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই প্রয়োজন হবেনা। যখন সেই ধরণের কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকবে তখন অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলার সদর উপজেলার পাকুরিয়া, কানাশাখোলা, রৌহা, গাজীরখামার, কুসুমহাটিসহ বেশ কিছু গ্রামের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অধিকাংশেরই করোনাভাইরাস নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই।

রৌহা গ্রামের কৃষক আলাউদ্দীন বলেন, কাম কইরা খাই করোনা টরোনা বুঝি না, এইসব ভাইরাস গ্রামে আসবো না, শহরেই থাকবো।

কানাশাখোলা গ্রামের মেহেদী হাসান শামীম নামে একজন কলেজ শিক্ষক বলেন, প্রতিদিন বিকেল হলে জেলার শতশত গ্রামের হাটবাজার গুলোতে লাখো মানুষের সমাগম হচ্ছে। তাতে যেকোন সময় আমরা বড় ধরণের বিপদে পড়তে পারি। এখনই প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে তিনি দাবি করেন।

ঘোঘরাকান্দী গ্রামে বসবাসকারি শেরপুর সরকারি বিশ্বিবদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা ফেরত প্রচুর লোক এলাকায় আসেছে । আল্লাহ ভাল জানেন আমাদের কি হবে। এখন জরুরী ভিত্তিতে সেই সব লোকদের হোম কোয়ারাইন্টাইন নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

পাকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হায়দার আলী বলেন, কোনভাবেই লোক সমাগম ঠেকাতে পারছিনা । গত কয়েকদিন ইউএনও স্যার, সদর থানার ওসি মামুন সাহেবসহ আমি নিজে জনগণকে বুঝাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিকেল হলে লোকজন বাজারে চলে আসে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন বলেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা টহল অব্যাহত রেখেছে। যেখানে লোক সমাগম থাকবে সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশেনা দেওয়া আছে আমাদের প্রতি। আমরা রাত দিন পরিশ্রম করছি। জনগণকে বুঝানো চেষ্টা করছি কিন্তু জনগণ সচেতন হচ্ছেনা।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয় তথ্য মতে, জেলায় ১৩৯ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। এর মধ্যে ৬৭ জনের হোম কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ৭২ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।

এ সম্পর্কে পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলা পুলিশের তরফ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থান নেওয়া হয়েছে। এজন্য বিদেশ ফেরত এবং রাজধানী ঢাকা ফেরত লোকজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে পুলিশী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। জেলা শহর ও উপজেলা সদরগুলোর পাশাপাশি এখন প্রতিটি উপজেলার হাটবাজারসহ প্রত্যন্ত এলাকায় ওইসব কার্যক্রম চলছে।

এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনগণকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ, পোস্টার, প্যানা, মাইকিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ও মসজিদে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত