‘নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদের ১০ টাকা কেজি চাল দেয়া হবে’
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২০, ১২:৩২ আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২০, ১৫:৫৪
করোনা মোকাবিলায় বিধবাভাতা, বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধীভাতা, ভিজিএফসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সুরক্ষার জন্য যেসব ভাতা বা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তা চালু থাকবে। এর বাইরে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, চায়ের দোকানদার, দিনমজুরের মতো খেটে খাওয়া মানুষ, যারা ভাতা পান না, কিন্তু করোনায় কাজ বন্ধ হয়ে গেছে, এমন অভাবী নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তদের ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়া হবে। এ জন্য ১০ টাকা কেজি চালের রেশনকার্ড দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৫টি জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়ের সময় এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না, কাজ করে খেতে পারছে না, জীবন-জীবিকার পথ অনেকটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো। যারা চাকরিজীবী বা বেতন পাচ্ছেন, তাদের কথা আলাদা। প্রতিদিন যারা দিন আনি দিন খাই, সেই ধরনের ছোটখাট ব্যবসা-বাণিজ্য করে যারা খেত, সামান্য কিছু টাকা উপার্জন করত, তাদের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। এভাবে বহু লোককে কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। আমাদের সাধ্যমতো আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা ১০ টাকায় চাল বিতরণের ব্যবস্থা করেছি। আমরা বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। সেই ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। আমাদের সামাজিক সুরক্ষামূলক যে কাজগুলো, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধীভাতাসহ- এমন ভাতাগুলো অব্যাহত থাকবে। ১০ টাকার চালের যে রেশনকার্ড আছে, সেটাও অব্যাহত থাকবে। এর বাইরে যারা হয়তো ভাতাপ্রাপ্ত না কিংবা যারা অনুদান নেবে না, কিন্তু তারা কিনে খেতে চায়, তাদের জন্য চালের ব্যবস্থা করতে হবে।’
আরও পড়ুন: করোনায় কাজ না করা চিকিৎসকদের প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি
তিনি বলেন, ‘যারা দৈনন্দিন কাজ করে খেত, এখন সেই উপায় বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের খুঁজে বের করে তালিকা করতে হবে। আমার অফিস থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং দুর্যোগ মন্ত্রণালয়কেও নির্দেশ দিতে হবে। যারা এ ধরনের একেবারে নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তের মধ্যে পড়ে, তাদেরও ১০ টাকা কেজি চালের রেশনকার্ড করে দিতে হবে।’
কীভাবে দেয়া হবে তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু আমরা যদি রেন্ডমলি দিতে থাকি, আমাদের কিছু মানুষের এত অভ্যাস খারাপ আছে, দেখা যাবে এগুলো কিনে নিয়ে নয়-ছয় করে ফেলেছে। ঠিক সুনির্দিষ্ট লোকটার কাছে পৌঁছাচ্ছে না। এখন যদি তাদের জন্য কার্ড তৈরি করে দিই, সবারই আইডি কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) আছে। আমরা যদি কার্ড করে দিই, কার্ডের মাধ্যমেই সকলের কাছে আমরা স্বল্পমূল্যে খাদ্য পৌঁছে দিতে পারব। যে তালিকাটা থাকলে সুবিধা হবে যে, তাদের আমরা জানতে পারব এবং সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে দিতে পারব।’
সার্বিক ব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই ক্ষেত্রে আমাদের প্রশাসন উদ্যোগ নেবেন। আমাদের জনপ্রতিনিধিরাও থাকবেন প্রত্যেক এলাকার। পাশাপাশি আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা থাকবে। আমাদের যারা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আছেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আছেন, অর্থাৎ এমপি, চেয়ারম্যান, মেয়র, কমিশনার- যারাই আছেন, সকলের কাছে আমার অনুরোধ, সকলকে মিলে কমিটি করে দিতে হবে। প্রত্যেকটা ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি থাকবে। আমরা সামাজিক সুরক্ষার যেসব ভাতা দিই, সেগুলো অব্যাহত থাকবে। এর বাইরে যে শ্রেণিটা, যারা হয়তো নিজেরা খেটে খেত, রিকশাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা থেকে ছোট দোকানদার বা চায়ের দোকানদার- এ রকম অনেক মানুষ জীবিকা করে খেত। তাদের একটা তালিকা করতে হবে। অনেকে হাতপাততে আসবে না, অনেকে চাইতে পারবে না, তাকে মুখ বুজে কষ্ট সহ্য করতে হবে। তারা যেন কষ্টে না থাকে। তাদের বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
আরও পড়ুন: করোনার প্রাদুর্ভাব রোধে সবাইকে একসাথে কাজ করার আহ্বান
চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে যেসব চিকিৎসক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন তাঁদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। তাঁদের নামে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবিমা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া তাঁদের জন্য রয়েছে আরো পুরষ্কার। আর যাঁরা জাতির এই দুর্দিনে কাজ করছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘যাঁরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মানুষের পাশে নেই তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তাঁরা আদৌ ডাক্তারি করতে পারবেন কি-না, তা আমি এখনই বলতে চাই না, তবে আমি তাঁদের কর্মকাণ্ড দেখতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘তাঁরা যদি এখনো ফিরে আসেন তবে আমি তাঁদের পরবর্তী তিন মাস দেখব। তাঁদের কাজের ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থার বিষয়টি বিবেচনা করব।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ত্রাণ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য কর্মচারীসহ যাঁরা কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানান।
দুঃসময়ে দুর্নীতি করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের দুর্ভোগের সময় ত্রাণ নিয়ে কেউ নয়-ছয় করবেন না। তাহলে কিন্তু রক্ষা পাবেন না। নয়-ছয় করলে আপনাকে ধরা পড়তেই হবে। টাকা-পয়সা কিন্তু লুকানো যায় না। দুঃসময়ে কেউ দুর্নীতি করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে, তাকে কিন্তু আমি ছাড়বো না।’
আরও পড়ুন: ‘দুঃসময়ে দুর্নীতি করলে তাকে ছাড়বো না’
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার সংখ্যা বেশি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একদিক থেকে ভালো খবর। তবে প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাক, এটা চাই না। আমরা চাই দ্রুত এটি নিয়ন্ত্রণ হোক। এর জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখন বিশ্বব্যাপী এই ঘটনা ঘটেছে, উন্নত দেশও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। বাঙালিরাও অনেক জায়গায় মৃত্যুবরণ করছে। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, আমি তাদের সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৩ জন, মৃতের সংখ্যা ১২। তবে যারা মারা গেছেন তারা বেশিরভাগই বয়স্ক, শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন। তাদের অন্যান্য জটিলতা ছিল বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তবে আরেকটি বিষয় দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী রোগাক্রান্ত, হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে সে চিকিৎসা পায়নি। এটি খুবই কষ্টকর। দুঃখজনক।’
আরও পড়ুন: করোনায় কাজ করা চিকিৎসকদের জন্য পুরস্কার: প্রধানমন্ত্রী
সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই সতর্ক থাকবেন। সতর্ক থাকলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে হলে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে সতর্কবাণী দিয়েছি এই সতর্কতা মেনে চলবেন। তাহলে অনেক জীবন রক্ষা পাবে। এপ্রিল মাসটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। তবে সতর্ক থাকলে আমাদের দুশ্চিন্তা অনেকটা কাটবে।’
উক্ত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই