সরকারি চালে অনিয়ম, ডিলার বললেন ‘ইউএনও জানে’
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২০, ১৭:৫৬
নড়াইলে করোনা মোকাবেলায় গত ৬ এপ্রিল থেকে সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু হয়েছে। হতদরিদ্র মানুষেরা নির্ধারিত কার্ডের বিনিময়ে ১০ টাকা করে প্রতি কেজি চাল কিনতে পারবেন। কিন্তু এই চাল বিক্রিতে কয়েকজন ডিলারের বিরুদ্ধে ওজন কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
হতদরিদ্র মানুষকে ৩’শ টাকার বিনিময়ে ৩০ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে ২৭/২৮ কেজি। এ নিয়ে ক্রেতাদের ক্ষোভ থাকলেও খাদ্য সহায়তা বন্ধ হবার আশঙ্কায় কথা বলছেন না অনেকে।
জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৩টি পৌরসভা ও ৩৯টি ইউনিয়নে মোট ৩৭ হাজার ৩’শ ৪ জন হতদরিদ্র মানুষ ১০ টাকা দরে চাল ক্রয় করতে পারবেন। ৩টি পৌরসভায় ১৪ জনসহ মোট ৯৪ জন ডিলার কার্ডের বিনিময়ে এই চাল বিতরণ করছেন। এর মধ্যে পৌর এলাকায় কার্ডপ্রতি ৫ কেজি করে সপ্তাতে ৩ দিন এবং গ্রাম পর্যায়ে জনপ্রতি ৩০ কেজি করে মাসে একবার এই চাল কিনতে পারবেন।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাচুড়ী ইউনিয়নের চাচুড়ি বাজারে ডিলার বিল্লাল মোল্যা। ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার এখানে এলাকার গরীব মানুষেরা চাল নিতে গেলে ৩০ কেজি চালের পরিবর্তে দেয়া হয়েছে ২৭ কেজি করে। সাংবাদিক এসেছে এমন খবর পেয়ে ২৮ কেজি করে দেয়া শুরু করে। এরপর যখন ক্যামেরা সামনে যায়, তখন দেয়া হয় ত্রিশ কেজি। সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলার সময় ওই ডিলারের কয়েকজন এসে হাজির হয়।
চাচুড়ী গ্রামের শিউলী বেগম বলেন, এখানে ৩’শ টাকা দিয়ে ২৮ কেজি চাল দিয়েছে।
একই গ্রামের ফরিদা বেগম বলেন, এই ওএমএস- এর দোকানে কার্ড নিয়ে চাল নিতে এসেছি। ৩’শ টাকায় ত্রিশ কেজি চাল পাওয়ার কথা, কিন্তু মেপে ২৮ কেজি দিয়েছে। এ কথা কাকে বলবো?
একই অবস্থা চাচুড়ী ইউনিয়নের আটলিয়া এলাকায় ডিলার মেজবাউর রহমানের গোডাউনে। ক্যামেরা দেখে চাল বিতরণ বন্ধ করে দেন ডিলার। এ সময় কয়েকটি বস্তা মেপে ২ কেজি করে চাল কম পাওয়া যায়।
এখান থেকে চাল নেয়া কৃষ্ণপুর গ্রামের আশরাফ মোল্যা ও বাদশা মোল্যা অভিযোগ করেন, আটলিয়ার মেজবাহর দোকান থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩’শ টাকার চাল কিনে অন্য জায়গায় মেপে দেখেছি ২৭ কেজি হয়েছে। এভাবে ওখান থেকে প্রতি জনকে ২/৩ কেজি করে চাল কম দিচ্ছে।
সরকারি ভর্তুকির চাল ওজনে কম দেয়ার বিষয়ে চাচুড়ী বাজারের ডিলার বিল্লাল মোল্যা জানান, সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে চাল আনার সময় ওনাদের ওজন যন্ত্র নষ্ট ছিলো। পরে স্থানীয়ভাবে ওজন দিয়ে দেখি বস্তায় চাল কম আছে। এই কারণে চাল কম দেয়া হচ্ছে। এটা ইউএনও জানে।
আরেক ডিলার মেজবাউর রহমান বলেন, ফুড গোডাউন থেকে বস্তায় চাল কম দেয়ায় আমরা ওজনে কম দিচ্ছি। তবে এটা আমাদের চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করেই করা হয়েছে। ২৯ কেজি করে দেয়ার কথা স্বীকার করেন এই ডিলার।
চাচুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম হিরক বলেন, ফুড অফিসের বস্তায় ওজনে কম দেবার কথা আমি শুনেছি। এখন তো মেপে দেখলাম সাড়ে আঠাশ কেজি। এ ব্যাপারে ইউএনও'র সাথে আলাপ করবো।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেখ মনির হাসান বলছেন, ফুড গোডাউনে চাল ওজনে কম দেবার কোন সুযোগ নেই। ডিলারদের মাল দেবার সময় সঠিক ওজনে মাল পেয়েছেন এটা লিখিত নেয়া হয়। তারা ওজন কম পেলে আবার মেপে সেটা পূরণ করে দেয়া হয়। ২/৩ কেজি করে মাল দেয়া এটা ডিলারদের কারসাজি।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে