ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

নড়াইলের হাসপাতালগুলোতে শুধু নাই আর নাই!

  শরিফুল ইসলাম, নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২০, ১৯:৫৯

নড়াইলের হাসপাতালগুলোতে শুধু নাই আর নাই!

করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত শ্বাসকষ্টের রোগীদের চিকিৎসায় হাইফ্লো অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ এর সাথে রক্তের প্লাজমা থেরাপি দেয়ার সুবিধা প্রয়োজন। নড়াইলের সরকারি-বেসরকারি কোন হাসপাতালে নেই এসব সুবিধা। মৃদু উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসা হলেও বাকীদের খুলনা বা ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। রোগী এবং স্বজনদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।

নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদন অনুসারে জানা যায়, ৩০ জুন পর্যন্ত নড়াইলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১৭৯ জনের মধ্যে ৭ জনের মৃত্যুবরণ করেছেন। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে জেলায় ৩০ জন চিকিৎসক এবং ৩৮ নার্স কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, নড়াইল সদর হাসপাতালে সংক্রামক ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঠিক তার পেছনের ভবনের ৪টি বেডে করোনা পজেটিভ রোগীদের চিকিৎসা চলছে। নড়াইল সদর হাসপাতালের মোট ২০টি বেড, শহরের ডুমুরতলায় এলাকার সরকারি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারকে কোডিভ বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করে ১০০টি বেডসহ জেলায় সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ১৯০টি বেড প্রস্তুত রয়েছে। তবে কেন্দ্রিয় অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বা এনআইসিইউ এর সুবিধা নেই।

নড়াইলের কামালপ্রতাপ গ্রামে করোনায় আক্রান্ত নয়ন শেখের বড় ভাই হুমায়ুন কবীর বলেন, এই মাসের প্রথম সপ্তাহে নয়নের জ্বর-শ্বাসকষ্ট হলে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালের সবাই খুব অমানবিক আচরণ করে। একদিন রাতে শ্বাসকষ্ট হলে কেউ কাছে আসেনি। নার্সদের ডাকলে রাগ করেছে। একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেখিয়ে দেয়, কিন্তু তাতে কোন অক্সিজেন ছিল না। পরে নয়নকে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখান সে চিকিৎসা নিচ্ছে এবং ভালো আছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মী জানান, সাধারণত দূর থেকেই হাসপাতালে কোডিভ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাবার রেখে আসা হয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়া আছে। রোগীরা প্রয়োজনমত তা ব্যবহার করে। এ্যান্টিবায়োটিক, ফেক্সোসহ প্রচলিত ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা করা হয়। উন্নত সুবিধা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেই রোগীকে বড় হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হয়। বিশ্বে আলোচিত রেমডিসিভির ওষুধের ব্যবহার করা হয় না। সাধারণত সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার এবং নাসরাই রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

সাপ্তাহিক 'নড়াইল কণ্ঠ'র সম্পাদক কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা গত ১২ এপ্রিল এক ভিডিও কনফারেন্সের প্রধানমন্ত্রীর নিকট নড়াইল সদর হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী গত ২ জুন সারাদেশের জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে কেন্দ্রিয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু নিদেশ দেন। অথচ এখন পর্যন্ত অবহেলিত নড়াইলে কোন কিছুই দৃশ্যমান হয়নি।

হাসপাতালে কেন্দ্রিয় অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বা এনআইসিইউ সুবিধা দ্রুত চালুর দাবি জানান তিনি।

এমপি মাশরাফি’র গড়া নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন করোনাকালের মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে জেলার রোগীদের সেবা প্রদানসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করেছে। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম অনিকে মা গত ২৬ জানু জ্বর-শ্বাসকষ্টে মারা যান।

তারিকুল ইসলাম অনিক এক ফেসবুক বার্তায় জানান, 'আমার মায়ের দুইবার স্যাম্পল কালেক্ট করা হয়। যদিও প্রথমবার যে স্যাম্পল কালেক্ট করে যশোর ল্যাবে পাঠিয়েছিলেন, চার দিন পর জানতে পারি তা নষ্ট হবার কারণে পরীক্ষা করা যায়নি। যশোর ল্যাবের চরম দায়িত্বহীনতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। ২৫ তারিখ দ্বিতীয়বার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। মায়ের মৃত্যুর পর ২৬ তারিখ রাতে জানানো হয় আমার মা করোনা পজেটিভ ছিলেন।'

নড়াইলের কুড়িগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ও শিক্ষক সুজিত কুমার সিকদার বলেন, দেশের শনাক্ত বিবেচনায় করোনায় মৃত্যুর শতকরা হার ২% এর নিচে, সেখানে নড়াইলে মৃত্যুর শতকরা হার ৩.৯%। এতে আমরা উদ্বিগ্ন। রোগীদের নমুনা পরীক্ষার জন্য অন্য জেলায় পাঠানো হয়। অনেক সময় নমুনা নষ্ট এবং ফলাফল পেতে দেরি হয়। নড়াইলে একটি ল্যাব স্থাপন এবং রোগীদের চিকিৎসায় রক্তের প্লাজমা থেরাপির দেয়ার ব্যবস্থা চালুর দাবি করছি।

নড়াইল সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. মশিউর রহমান বাবু বলেন, আমাদের সাধ্যমত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি। বতমানে নড়াইল সদর হাসপাতালের ৮ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এখানে কর্তব্যরত সকল ডাক্তার ও কর্মীরা রোস্টার অনুযায়ী রোগী দেখেন এবং বিধি মোতাবেক কোয়ারেন্টাইনে থাকেন। আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। তবে কেন্দ্রিয় অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বা এনআইসিইউ নাই।

নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল মোমেন বলেন, জেলায় মোট ২২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। এছাড়া কেন্দ্রিয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালুর জন্য একটা প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় বিতর্কিত রেমডিসিভির ওষুধের সরবরাহ নাই এবং এ করোনায় আক্রান্তদের জন্য এ ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে না।

নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং মাননীয় সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তির নির্দেশনায় আমরা জেলার করোনা পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা করছি। আমাদের জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার আরো উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এখন সরকারের পাশাপাশি বিত্তশালী ব্যক্তিদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত