ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় তোলপাড়

  সুশান্ত সাহা

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২০, ২২:২৭  
আপডেট :
 ০৫ আগস্ট ২০২০, ০০:২২

পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় তোলপাড়

কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া বিষয়টি সর্বত্র আলোচনা চলছে। বিভিন্ন মহলে চলছে বিচার-বিশ্লেষণ।

নিহতের পরিবারের দাবি, ‘হত্যার উদ্দেশ্যে’সিনহা মো. রাশেদকে পুলিশ গুলি করেছে। এই অভিযোগ এনে তারা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এদিকে সিনহা মো. রাশেদ খানের মা নাসিমা আক্তারকে ফোন করে সমবেদনা ও সান্ত্বনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী সিনহা রাশেদের মাকে ফোন করেন। প্রধানমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর রাশেদের মাকে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন বলে নিহত রাশেদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

অপরদিকে সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে সরকার যে কমিটি গঠন করেছে, সেটি মঙ্গলবার কাজ শুরু করেছে। ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই'র) তরফ থেকে ভিন্ন-ভিন্ন বক্তব্য আসছে। এমন প্রেক্ষাপটে কাজ শুরু করেছে সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটি। এর নেতৃত্বে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খানের মা নাসিমা আক্তার বলেন, সকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফোন করেছিলেন। ছেলের এমন মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, ‘আমিও একই পথের পথিক। আপনাকে কিছু বলার মতো ভাষা আমার নেই। আমিও পুরো পরিবার হারিয়েছি।’

নাসিমা আক্তার বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, ছেলেকে ফিরে পাব না। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার হবে।’

ঘটনা নিয়ে পুলিশের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকলে অস্ত্র বের করে গুলি করতে মাত্র ৪ সেকেন্ড সময় লাগত রাশেদের। সেটা সে করেনি; বরং তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে। আমরা হত্যা মামলা করব।

তিনি বলেন, বিচার পেতে হলে মামলা করতে হবে, সেজন্য আমরা গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করছি। সবার সাথে পরামর্শ নিয়ে ২/৩দিনের মধ্যে একটি হত্যা মামলা করা হবে।

এদিকে পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্তদলের প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় কক্সবাজার হিলডাউন সার্কিট হাউজে তদন্ত কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘ বৈঠকে তদন্তদলের সদস্যরা ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করেছেন। এতে তদন্ত দলের নির্দিষ্ট কর্ম-পরিকল্পনা তথা কর্মপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ অনুযায়ী কমিটির সদস্যরা ঘটনার তদন্তের স্বার্থে ঘটনাস্থলসহ মাঠ পর্যায়ে যেখানে যাওয়া দরকার সেখানে পরিদর্শন করবে। এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শীসহ যাদের দরকার তাদের সঙ্গে কথা বলবে তদন্ত দল।

মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া ৭ কর্ম-দিবসের মধ্যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার চেষ্টা করবে বলে জানান তদন্তদলের এ প্রধান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি বৈঠকের পর প্রয়োজনে তথ্য ও সাক্ষ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

সকাল সাড়ে ৯ টায় শুরু হওয়া তদন্ত কমিটির এ বৈঠক চলে দীর্ঘ প্রায় সাত ঘণ্টাব্যাপী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বিভাগে কর্মরত সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডারের মনোনীত প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাজ্জাদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মনোনীত প্রতিনিধি অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাধ ও অপারেশন) মো. জাকির হোসেন এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাহজাহান আলি।

জানাযায়, ৩৬ বছর বয়সী সিনহা ছিলেন অবিবাহিত। তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন, আর ছোট বোন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। তাদের বাড়ি যশোরের বীর হেমায়েত সড়কে হলেও বাবা মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ খানের সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জেলায় থাকতে হয়েছে। সবশেষ অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব ছিলেন এরশাদ খান। ২০০৭ সালে বাবা মারা যান। ৫১ বিএমএ লং কোর্সে অংশ নিয়ে সেনাবাহিনীতে কমিশন পাওয়া সিনহা ২০১৮ সালে সৈয়দপুর সেনানিবাসে থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছায় অবসরে যান। দুই বছর আগে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া সিনহা ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য গত প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। আরও তিন সঙ্গীকে নিয়ে তিনি উঠেছিলেন নীলিমা রিসোর্টে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের কথা জানিয়ে সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে পিস্তল বের করলে চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। তবে ঘটনার যে বিবরণ পুলিশ দিয়েছে, তা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। রাশেদ আদৌ অস্ত্র তাক করেছিলেন কি না, তা নিয়ে যেমন সন্দেহ তৈরি হয়েছে, তেমনি পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নিতে দুই ঘণ্টা দেরি হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।

যিনি সেদিন গুলি ছুড়েছিলেন, সেই পরিদর্শক লিয়াকত আলিসহ বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ২০ পুলিশ সদস্যকে ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রোববার বলেন, বিষয়টি নিয়ে যেহেতু তদন্ত চলছে, সেহেতু তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। তবে তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস/আরকে

আরো পড়ুন: সিনহা হত্যা: বিবিসি’র রিপোর্টে যা বলা হয়েছে

আরো পড়নু: নিহত মেজর সিনহার মাকে প্রধানমন্ত্রীর ফোন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত