ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

রাতভর মেয়র ও মন্ত্রীপুত্রের সমর্থকদের সংঘর্ষ

  নরসিংদী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:৫৮  
আপডেট :
 ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ২০:১৩

রাতভর মেয়র ও মন্ত্রীপুত্রের সমর্থকদের সংঘর্ষ
ছবি- প্রতিনিধি

নরসিংদীর মনোহরদীতে পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে কাউন্সিলর প্রার্থী, সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানোর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন।

বুধবার গভীর রাতে মনোহরদী হিন্দুপাড়াসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে এ হামলার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ, র‌্যাব ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনায় পুরো এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে বর্তমানে ৬টিতেই বিএনপির কাউন্সিলর দায়িত্ব পালন করছেন। যাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই বর্তমান মেয়র আমিনুর রশিদ সুজনের সখ্যতা রয়েছে এবং তারা এবারও নির্বাচনে অংশ নেয়। এদিকে তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি কাউন্সিলর প্রার্থীদের ৪টি ওয়ার্ডে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীদেরকে প্রার্থী দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রীর ছেলে মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদী। এ নিয়ে মেয়র সুজনের সঙ্গে মন্ত্রীপুত্র সাদীর মতবিরোধ দেখা দেয়।

এরই মধ্যে বুধবার রাত ৮টায় মনোহরদী হিন্দুপাড়া সার্বজনীন দুর্গাবাড়িতে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র আমিনুর রশিদ সুজনের সর্বশেষ উঠান বৈঠক হয়। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক বাবু প্রিয়াশীষ রায়, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শিল্পমন্ত্রীর ছোট ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যকরী সদস্য মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদীসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের সমর্থকদের নিয়ে যোগ দেয়।

রাত ১১টার দিকে সভা শেষে ফেরার পথে কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন মাঝি ও খোকন রায়ের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে হারুন মাঝির পক্ষে অবস্থান নেয় মেয়র সুজনের সমর্থকরা। আর খোকন রায়ের পক্ষে অবস্থান নেয় সাদীর সমর্থকরা। উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে মেয়রের দুই ভাইসহ কমপক্ষে ১২জন আহত হন। এ সময় উভয় পক্ষের ৮টি মোটরসাইকেল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট ফজলুল হকের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

এই খবর ছড়িয়ে পড়লে মেয়র সুজনের সমর্থকরা মনোহরদী বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হয়। সেখান থেকে মেয়রের সমর্থকরা প্রথমে মনোহরদী হিন্দুপাড়ার মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং দেশ রুপান্তর ও দেশ টিভির সাংবাদিক সুমন বর্মণ, কাউন্সিলর প্রার্থী পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খোকন রায়, সুকোমল সাহার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এসময় ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিহির রায়ের দোকান, চকপাড়া এলাকায় ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শরীফ রায়হানের অফিসে ভাঙচুর চালায়। এছাড়া ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোতাহার হোসেনের অফিস, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

হামলায় আহতদের মধ্যে চন্দনবাড়ি এলাকার মেয়র সুজনের বড় ভাই মামুনুর রশিদ (৩৫), ছোট ভাই হাসানুর রশিদ তন্ময় (২৫), ইমতিয়াজ মান্নান (৩০), আল সাঈদী সাম্মী (৩২), শফিকুল আলম (৪৫), সোহেল আকন্দ (২৬), মাঝিপাড়া এলাকার মাসুম হাসান শুভ (৩০), লেবুতলা এলাকার নজরুল ইসলামসহ ১২ জন আহত হন। তাদের মনোহরদী উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। তাদের মধ্যে মামুনুর রশিদ ও শফিকুল আলমকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী খোকন রায় বলেন, মেয়র সুজন ও কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন মাঝি আমার বাড়ি ও সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে এই বিশৃঙ্খলা ঘটিয়েছে যাতে ভোটের পরিবেশ নষ্ট হয়।

মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ রায় বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে হিন্দু বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা দুঃখজনক।

মনোহরদী পৌরসভার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আমিনুর রশিদ সুজন বলেন, আমরা হিন্দুপাড়ায় নির্বাচনী উঠান বৈঠক শেষ করে চলে যাওয়ার সময় মন্ত্রীর ছেলে সাদীর সমর্থকরা আমার ও আমার লোকজনের উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। আর একের পর এক গুলিবর্ষণ শুরু করে। এরই মধ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাকে আঘাত করার সময় আমার দুই ভাই আমাকে বাঁচাতে গেলে তারা গুরুতর জখম হয়। এ ঘটনায় আমার ১২জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। একই সাথে আমার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে সাংবাদিক সহ অন্যান্যদের বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়ে তিনি অস্বীকার করেন।

এদিকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনিবার্হী সদস্য মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদী বলেন, মেয়র নিজের সুবিধার জন্য বিএনপির কাউন্সিলরদের বিজয়ী করতে চায়। যেহেতু আমি দলীয় কাউন্সিলরের পক্ষে তাই এটাকে ইস্যু করে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থক ও মেয়রের সমর্থকরা নৌকার উঠান বৈঠক শেষে ফেরার পথে আমার উপর হামলা চালায়। পুলিশ আমাকে উদ্ধার করেছে। তারা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা চালিয়েছে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।

মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে। থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। বর্তমানে পরিস্থিতিতে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোনো আইনশৃঙ্খলার যাতে অবনতি না হয় সেজন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- যুক্তরাজ্য ফেরতদের কোয়ারেন্টাইন শিথিল

দিহানের সহযোগীদের নাম-পরিচয় প্রকাশের দাবি

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত