ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

সালথায় তাণ্ডবের ঘটনায় আরো চার মামলা: আটক ২৮

  ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২১, ০৮:১০  
আপডেট :
 ০৯ এপ্রিল ২০২১, ০৮:২৪

সালথায় তাণ্ডবের ঘটনায় আরো চার মামলা: আটক ২৮
সালথায় তাণ্ডব। ফাইল ছবি

ফ‌রিদপু‌রের সালথায় লকডাউনকে কেন্দ্র করে তাণ্ডবের ঘটনায় আরো চার মামলা রুজু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় মোট পাঁচটি মামলা রুজু করা হলো। এসব মামলায় ১৭ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। যে পাঁচ মামলা করা হয়েছে সেগুলোতে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ২৬১ জনের। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ জনকে।

নতুন যে চারটি মামলা হয়েছে তার একটি করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মাতব্বর। এ মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আরো ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আরেকটি মামলা করেছেন সালথা উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ হা‌সিব সরকা‌রের গাড়িচালক মো. হাশমত আলী। এই মামলায় ৫৮ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩ থেকে ৪ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

অপর মামলাটি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী সমীর বিশ্বাস। এ মামলায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ৩ থেকে ৪ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

আরেকটি মামলাটি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িচালক মো. সাগর সিকদার। এ মামলায় ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে তিন থেকে চার হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

এর আগে বুধবার সালথা থানার এস আই (উপ পরিদর্শক) মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং প্রায় চার হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে থানায় হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে প্রথম মামলাটি করেন।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গ্রেপ্তার ২৮ জনের মধ্যে ১১ জনকে বুধবার ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বৃহস্পতিবার বাকি ১৫ জনকে সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সোপর্দ করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করতে দুই আনসার সদস্য ও ব্যক্তিগত সহকারীকে নিয়ে সালথা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি স্থানীয় ফুকরা বাজারে যান। সেখানে তিনি যাওয়ার পর মানুষের জটলা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় তিনি ওই স্থান থেকে ফিরে আসেন এবং সেখানে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পাঠান। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত জনতা মিজানুর রহমানের ওপর হামলা চালায়। এতে তার মাথা ফেটে যায়।

পরে স্থানীয় জনতা বাহিরদিয়া মাদরাসার মাওলানা আকরাম হোসেন এবং জনৈক আরেক মাওলানার গ্রেপ্তারের গুজব ছড়িয়ে দেয়। গুজবে কান দিয়ে হেফাজত, বিএনপি ও জামায়াতপন্থী হাজারো মানুষ গিয়ে থানা ঘেরাও করে। সেই সঙ্গে উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। পরে সালথা থানা পুলিশের পাশাপাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা পুলিশ এবং র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা যৌথভাবে ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩০ জন। আহতদের মধ্যে জুবায়ের হোসেন (২৫) ও মিরান মোল্লা (৩৫) নামের দুই যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সালথায় তাণ্ডবের ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের দু'টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর একটিতে প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. তাসলিমা আলীকে অপর কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম মোল্লাকে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই দুই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত