ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

দার্জিলিং জাতের কমলা চাষে ভাগ্য ফিরেছে জুয়েলের

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ২২:০৭  
আপডেট :
 ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:১৮

দার্জিলিং জাতের কমলা চাষে ভাগ্য ফিরেছে জুয়েলের
ছবি- প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ে দার্জিলিং জাতের কমলা বাগান করে লাভবান হয়েছেন কৃষক আবু জাহিদ ইবনুল ইরাম জুয়েল। এই বছর সেই বাগান থেকে কমপক্ষে ২৫০ মণ উৎপাদের আশা করছেন তিনি। ২০০ টাকা কেজি দরে যার বাজারমূল্য ২০ লক্ষ টাকা।

এই বাগানটি গড়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার ২ নং কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামে। সেখানে জুয়েল ১০ বছর আগে হর্টিকালচার থেকে কিছু চারা ক্রয় করে জমিতে রোপণ করেন। দুই বছরের মাথায় আশানুরূপ ফল হওয়ায় বাগানের পরিধি বাড়ান। এখন তার বাগানে প্রায় ৩০০টি কমলা গাছ রয়েছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে জেলায় ৭৩ হেক্টর জমিতে মালটা ও কমলার বাগান রয়েছে ১ হাজার ৩২টি। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী উপজেলার পীরগঞ্জ ও হরিপুরে ভারতীয় দার্জিলিং জাতের সাতটি কমলা বাগান গড়ে উঠেছে। জেলায় অনেকেই কমলার বাগান গড়ে তুললেও জুয়েল ছাড়া অন্যরা দার্জিলিং জাতের কমলার চাষ ভালোভাবে করতে পারেননি।

জুয়েলের বাগান ঘুরে দেখা যায়, বাগানের প্রতিটি গাছে ফল ধরেছে প্রচুর। ভারতীয় জাতের এ ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে চাহিদাও রয়েছে। এছাড়া বাগানটি দেখার জন্য প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। বাগানেই বিক্রি হচ্ছে এই দার্জিলিং জাতের কমলা।

বাগান মালিক জুয়েল জানান, বাগানের বয়স ১০ বছর হলেও তিন বছর হলো ভালো ফলন আসছে। এবার প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। নভেম্বর মাস থেকে বাগানের উৎপাদিত কমলা বিক্রি শুরু হয়েছে। বাগানের এসব ফল স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে পাঠানো হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

জুয়েল বলেন, বর্তমানে তিন শতাধিক গাছের এই বাগানের প্রতিটিতে ৮ থেকে ৯শ' কমলা ধরেছে। চলছে ফল বিক্রি কার্যক্রম। উৎপাদিত কমলা কিনতে বাগানেই ছুটে আসছেন দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা। সেখান থেকেই প্রতি কেজি কমলা বিক্রি করছেন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে।

আগের বছর এই বাগান থেকে প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ টাকার কমলা বিক্রি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক জুয়েল। তবে এবার প্রায় ২০ লক্ষ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।

এছাড়াও জুয়েল বগানের পাশাপাশি একই প্লটে উৎপাদন করছেন চারা। সীমান্ত এলাকায় ফল বাগান গড়ে ওঠায় কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এলাকার অন্যান্য কৃষকেরাও উদ্বুদ্ধ হয়ে নিচ্ছেন পরামর্শ। এছাড়া কেউ বাগান সম্পর্কে জানতে গেলে বাগান করতে কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছেন তিনি। অনেকে মনোরম এই বাগানে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিচ্ছেন। ফলে জেলাসহ সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে বাগানটি।

বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী নাহিদ রেজা বলেন, শহর থেকে এসেছি কমলা বাগান দেখতে। আমি দার্জেলিংয়ে বাগান দেখেছি। কিন্তু এখানে কমলা বাগান যে সুন্দর, তা দার্জেলিংয়ে বাগানকেও হার মানাবে। আর এই কমলা অনেক মিষ্টি। আমার দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাটি তা এই বাগান দেখেই বোঝা যায়।

আরেক দর্শনার্থী রবিউল আহসান বলেন, পরিবারসহ কমলা বাগান দেখতে এসেছি। আগে কমলা বাগান শুধু ছবিতেই দেখেছি। আজ বাস্তবে গাছে ঝুলন্ত কমলা দেখলাম। আর পুরো বাগানে কমলা ঝুলে রয়েছে। দেখতেই অনেক সুন্দর লাগছে। কমলা কিনে খেলাম, অনেক মিষ্টি ও রসালো। এই কমলা খেয়ে মনে হলো না যে আমার দেশের মাটিতে উৎপাদিত কমলা খাচ্ছি। পরিবারের সকলে খুশি এমন কমলা বাগান দেখতে এসে।

শহরের পাশেই আরেক কমলা বাগানের মালিক মাহফিজুর রহমান ছুটু জুয়েলের বাগান দেখতে এসে বলেন, আমার বাগানেও কমলা গাছ রয়েছে। তবে এই বাগান খুব সুন্দর করে যত্ন করার কারণে ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এছাড়াও ফলের সাইজ ও রং একবারে ঠিকঠাক হয়েছে। আমি বাগান মালিক জুয়েল ভাইয়ের সাথে আমার বাগান নিয়ে আলোচনা করার জন্য এসেছি।

কমলা বাগানে প্রথম থেকেই কাজ করেন নরেন মোহন। তিনি বলেন, আমি বাগানের প্রথম থেকেই কাজ করছি। এখন প্রতিদিন প্রায় এক হাজারের ওপর মানুষ আসে এই বাগান দেখতে। আমরা বাগানে ৮/১০ জন এখন কাজ করছি। কমলা গাছ থেকে পারার জন্য ৩/৪ জনকে কাজ করতে হয়। এছাড়াও বাগান পাহারা দিতে হয়, না হলে ফল চুড়ির ভয় থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন জানান, বছর দশেক আগে সরকার একটি প্রকল্প নেয়। সেটাই ঠাকুরগাঁওয়ে কমলা চাষের শুরু। কমলা বাগানে সফলতা পেতে বুঝে-শুনে পরিচচর্যার ব্যাপার আছে। জুয়েল কৃষি দপ্তর থেকে সবসময় পরামর্শ নিয়েছেন। তার দার্জিলিং জাতের বাগানটি বেশ সুন্দর হয়েছে এবং বাগানে প্রচুর পরিমাণ কমলা ধরেছে। তার বাগান দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন বাগান করার জন্য।

তিনি আরও বলেন, কৃষকরা যদি এভাবে কমলার বাগান করতে এগিয়ে আসে তাহলে কৃষিতে একটা বিপ্লব ঘটবে। আর কমলা দেশের বাহির থেকে আনতে হবে না। আমাদের দেশের কমলা দিয়েই ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ হবে বলে আমি মনে করছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত