ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় পলোগ্রাউন্ড ভরাতে চায় আওয়ামী লীগ

  মনির ফয়সাল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২২, ০৯:০২

৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় পলোগ্রাউন্ড ভরাতে চায় আওয়ামী লীগ
প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় পলোগ্রাউন্ড ভরাতে চায় আওয়ামী লীগ। ছবি: প্রতিনিধি

আগামী ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে নানান কর্মযজ্ঞের পাশাপাশি চলছে নানা ধরনের সভা ও বৈঠক। দীর্ঘদিন পর চট্টগ্রামে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। এ জনসভা থেকে নির্বাচনেরও বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

জনসভায় পলোগ্রাউন্ড কানায় কানায় পূর্ণ করতে চায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। জনসভাকে বর্ণিল করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী সবসময় আন্তরিক বলছেন দলের নেতারা। এবার আরও নতুন ঘোষণা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।

জানা গেছে, বর্ণিল উপস্থিতির জন্য আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলার সমর্থকরা সবুজ রঙের, পটিয়ার সমর্থকরা লাল রঙের, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সমর্থকরা হলুদ রঙের, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সমর্থকরা সাদা রঙের, বাঁশখালীর সমর্থকরা নীল রঙের এবং চন্দনাইশের সমর্থকরা গোলাপি ও চকলেট রঙের গেঞ্জি পরিধান করে সমাবেশে যোগ দিবেন।

দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রামে আসাকে কেন্দ্র করে সকল স্তরের নেতাকর্মীরা খুশি। চারদিকে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। জনসভাকে গণজমায়েত করার জন্য সকল স্তরের নেতাকর্মীরা দিন-রাত খাটছেন।

নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের জনসভায় তারা জনসমাগমের রেকর্ড গড়তে চান। জনসভায় অন্তত ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আশপাশের মানুষ যাতে শুনতে পারে এ জন্য লাগানো হবে ৩০০ মাইক। পলোগ্রাউন্ডে সাত ফুট উঁচু মঞ্চ তৈরি করা হবে। এর দৈর্ঘ্য হবে ১২০ ফুট ও প্রস্থ হবে ১৪০ ফুট। মঞ্চে একসঙ্গে ২০০ অতিথি বসতে পারবেন।

বাংলা‌দেশ আওয়ামী লী‌গের সভাপ‌তিমণ্ডলীর সদস্য ও সা‌বেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হো‌সেন জানান, এ জনসভা থে‌কে দলীয় প্রধান শেখ‌ হা‌সিনা আগামী নির্বাচনে বিজয়ের জন্য নেতাকর্মী‌দের নি‌র্দেশনা দেবেন। দলীয় নেতাকর্মী‌দের মাধ্যমে হয়‌তো তি‌নি জনগ‌ণের কা‌ছে আগামীর চট্টগ্রাম ও বাংলা‌দেশ সম্প‌র্কে বার্তা পাঠা‌তে পা‌রেন।‌

তিনি আরও জানান, আমরা প্রিয় নেত্রীর আগম‌নে খুবই খুশি। আমরা সে‌দিন স্মরণকা‌লের সর্ববৃহৎ জনসমাগম ঘ‌টি‌য়ে আমা‌দের নেত্রী‌কে দেশবাসী‌কে দে‌খি‌য়ে দি‌তে চাই চট্টগ্রা‌মের আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ, আওয়ামী লীগ মানু‌ষের পা‌শে ছিল, আ‌ছে এবং থাক‌বে। আর চট্টগ্রা‌মের মানুষ আওয়ামী লী‌গের সঙ্গে র‌য়ে‌ছে ও থাক‌বে।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সমাবেশের জমায়েত প্রসঙ্গে বলেন, জনসভাটা চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে হলেও জনসভার স্থান মহানগরে পড়েছে। তাই আমাদের দায়িত্বটা বেশি। পলোগ্রাউন্ডের আশপাশের ওয়ার্ড থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ আসবে। কোন কোন ওয়ার্ড থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ আসবে। দূরের ওয়ার্ড থেকে কিছুটা কম আসবে।

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ৪৪টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড থেকে দুই লাখের অধিক মানুষ সমাবেশে যোগদান করবে। এর বাইরে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, মৎস্যলীগ, তাঁতীলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে মানুষ আসবে। তার সাথে যোগ হবে সাধারণ মানুষ। জনসভাস্থল পলোগ্রাউন্ড শুধুমাত্র মহানগরের লোকজনেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাবে। মাঠের বাইরে বসেও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ময়দানের চারপাশে কয়েক বর্গকিলোমিটার জুড়ে মাইক লাগানো হবে। তাই উত্তর-দক্ষিণ ও মহানগর থেকে যত লোকই আসুক না কেন কোন সমস্যা হবে না।

আয়োজন বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরীকে পরিপাটি করে সাজানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় প্রবেশের পথ সুগম ও মসৃণ করে তোলা হয়েছে। জনসভায় আগত জনসাধারণের কোনও সমস্যা যাতে না হয় সে জন্য সুপেয় পানি, ভ্রাম্যমাণ ও অস্থায়ী টয়লেট স্থাপন করা হবে।

মেয়র আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নে যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, তাতে স্বাগত জানিয়ে জনসভাকে সফল করার নৈতিক দায়িত্ব নিতে চট্টগ্রামবাসী প্রস্তুত।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, কর্মী-সমর্থক এবং সাধারণ মানুষ প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে আলাদাভাবে সমাবেশে যোগদান করবে। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাদের সমন্বয় করবেন। উত্তর চট্টগ্রামের ৭ উপজেলা থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ আসবে উল্লেখ করে বলেন, ইতোমধ্যে বাস-ট্রাক ভাড়া করা শুরু হচ্ছে। সন্দ্বীপ থেকে লঞ্চ, স্পিড বোটে করে মানুষ আসবে। এছাড়াও আলাদাভাবে কিছু লঞ্চ সেদিন চলবে। যারা সমাবেশে আসতে চায় ওই লঞ্চে করে আসতে পারবে।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, দক্ষিণ জেলার ৮ উপজেলা থেকে দেড় লাখ মানুষ সমাবেশে যোগদান করবে। শহরের বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার, আবাসিক হোটেলে তারা রাতযাপন করবেন। তাদের খাবার-দাবারের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন পর পলোগ্রাউন্ড মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভা হচ্ছে। সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন। এ সমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও উজ্জীবিত।

নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক জানান, চট্টগ্রামে দীর্ঘ এক দশক পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছেন। এটা নিঃসন্দেহে চট্টগ্রামবাসীর জন্য আনন্দের বিষয়। নেত্রী আসছেন তাই উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। সেই উৎসবে সর্বস্তরের জনগণকে সামিল করার জন্য নানা পরিকল্পনা চলছে।

তিনি জানান, ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যায় প্রচারণা শেষ হবে। তবে নামাজের সময় মাইক বন্ধ থাকবে। যেসব পয়েন্টে মাইক বাজানো হবে তা হল, নিউ মার্কেট মোড়, আন্দরকিল্লা, কদমতলী মোড়, দেওয়ানহাট মোড়, বাদামতলী, সল্টগোলা, ইপিজেড, স্টিলমিল, বড়পুল, নয়াবাজার বিশ্বরোড, অংলকার, কর্নেল হাট, জিইসি মোড়, টাইগারপাস, ওয়াসামোড়, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, রাজাখালী ব্রিজ, আতুরার ডিপো, অক্সিজেন, চকবাজার এবং ধুনিরপুল। এসব পয়েন্টে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগদানের আহ্বান জানিয়ে উৎসাহমূলক স্লোগান বাজানো হবে। একইসাথে ২৪ তারিখ থেকে ট্রাক শোভাযাত্রা এবং প্রতিদিন ২০ টি সিএনজি ট্যাক্সির মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। ৫ দিন পর আরও ১০টি ট্যাক্সি যুক্ত হবে। শেষের কয়েকদিন অন্তত ৫০টি ট্যাক্সির মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছে চট্টগ্রামের সব ধরনের সেবা সংস্থাগুলো। পুরো নগরজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নানান সাজে রাস্তাঘাট সজ্জিত করছে চসিক। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর আগমনের দিনে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এদিন চট্টগ্রামে কোনো ধরনের লোডশেডিং হবে না বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বিতরণ চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী এম রেজাউল করিম বলেন, পলোগ্রাউন্ড মাঠের জনসভা ঘিরে সকল বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ঠিক করা হচ্ছে। যাতে ওদিন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়া যায়। এছাড়া সেদিন যদি কোনো ধরনের বড় কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে ভোর থেকেই প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে থাকা পর্যন্ত কোনো রকম লোডশেডিং হবে না।

গত ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এক যৌথ সভায় আগামী ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ড মাঠে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভাটি চট্টগ্রামের অতীতের সকল জনসভার রেকর্ড ভঙ্গ করবে বলে জানান দলটির সিনিয়র নেতারা।

তারা জানান, ৪ ডিসেম্বরের জনসভাটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক বড় বড় জনসভাকে ছাপিয়ে যাবে। চট্টগ্রাম আবার নতুন রেকর্ড গড়বে। চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলা নিয়ে এটি মহাসমাবেশ নয়; এটি শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ প্রশাসনিকভাবে যে চট্টগ্রাম জেলা; সেই বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার একটি জনসভা। এই জনসভাকে আমরা জনসমুদ্রে পরিণত করতে চাই।

উল্লেখ্য, গত ১২ অক্টোবর পলোগ্রাউন্ড মাঠে সমাবেশ করেছিল বিএনপি। ওই সমাবেশে বিপুল সংখ্যক জনসমাগম হয়। তবে বিএনপির জনসভার চেয়ে বেশি লোকসমাগম ঘটাতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কাজ শুরু করেছেন। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রস্তুতি সভা। পাশাপাশি উপজেলাগুলো থেকেও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর এই জনসভায় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি সভা করা হচ্ছে। ২০১২ সালের ২৮ মার্চ পলোগ্রাউন্ড মাঠে সর্বশেষ জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১০ বছর পর এই মাঠে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত