ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

ফরিদপুরে শিলা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পেঁয়াজ ক্ষেত, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

  ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩, ২৩:৩৪

ফরিদপুরে শিলা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পেঁয়াজ ক্ষেত, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
শিলা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পেঁয়াজ ক্ষেত। ছবি: প্রতিনিধি

হঠাৎ শিলা বৃষ্টিতে ফরিদপুরের সালথা-নগরকান্দায় উত্তোলনের অপেক্ষায় থাকা হালি পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দাম না পেয়ে গত বছর পেঁয়াজ চাষ করে লোকসান গুনতে হয়েছে এখানকার হাজারো কৃষকের। তারপরেও জীবিকার তাগিদে এবার বিপুল পরিমাণে হালি পেঁয়াজ চাষ করেন তারা।

ইতিমধ্যে পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু করা হয়েছে। এরই মধ্যে শিলা বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষতি হলো। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেক কৃষক।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে সালথার বালিয়া গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বেশিরভাগ নিচু জমির পেঁয়াজ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। আর উচু জমির পেঁয়াজ শিলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা পেঁয়াজ ক্ষেতের ভেতরে আগাম পাটের বীজ বপণ করেছেন, তাদের আরও বেশি ক্ষতি হয়েছে। এমন অবস্থায় কৃষকেরা এক বুক হতাশা আর মাথায় দুশ্চিন্তা নিয়ে ক্ষেতের চারপাশ দিয়ে ঘোরাফেরা করছেন। কেউ কেউ শ্রমিকদের নিয়ে কাঁদা-পানিতে নেমে পেঁয়াজ তুলছেন।

জানা গেছে, পেঁয়াজ চাষ করে সারা বছরের অর্থনৈতিক চাহিদা মিটিয়ে থাকেন সালথা ও নগরকান্দার কৃষকেরা। এবারও উভয় উপজেলায় প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর হালি পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, এমনিতে এবার পেঁয়াজের আশানুরূপ ফলন হয়নি। এরমধ্যে আবার শিলা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। অন্যদিকে বাজারে পেঁয়াজের দামও তুলনামূলক কম। সব মিলিয়ে এবারও পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকেরা পথে বসে যাবে।

ক্ষতিগ্রস্ত সালথার বালিয়া গট্টি গ্রামের কৃষক মো. সবুর খান বলেন, আমি এবার চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। এরমধ্যে শিলা বৃষ্টিতে তিন বিঘা জমির পেঁয়াজই তলিয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া এসব পেঁয়াজ ঘরে মজুদ রাখা সম্ভব না। ঘরে রাখলে সব পঁচে যাবে।

মো. মনসুর মাতুব্বর নামে আরেক কৃষক বলেন, গত বছর পেঁয়াজ চাষ করে লোকসান হয়েছে। তারপরেও এবার দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। ফলন তেমন ভাল হয়নি। দুই এক দিনের মধ্যে ক্ষেতের পেঁয়াজ উত্তোলন করতে চেয়েছিলাম। তার আগেই শিলা বৃষ্টিতে পেঁয়াজের তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে।

ইনছুর মাতুব্বর নামের কৃষক বলেন, আমার চার বিঘা জমির পেঁয়াজই তলিয়ে গেছে। রোদে ক্ষেত শুকানোর পর এসব পেঁয়াজ উত্তোলন করতে গেলে ক্ষেতেই পঁচে যাবে। তাই বাধ্য হয়েই এখন পানির নিচ থেকে পেঁয়াজ উত্তোলন করছি। এমনতিইে পেঁয়াজের দাম নেই, তারপর ক্ষেতের পেঁয়াজ পানিতে তলিয়ে ও শিলার আঘাতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা এবার কিভাবে বাঁচবো? যদি এবারও আমরা ন্যায্য দাম না পাই তাহলে আমাদের ঘরে বসে থাকতে হবে।

নগরকান্দার বিনোকদিয়া এলাকার কৃষক মিলন শেখ বলেন, শিলা বৃষ্টিতে আমাদের এলাকায় পেঁয়াজের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে পেঁয়াজের (দানা) বীজের। এবার হালি পেঁয়াজ ঘরে রাখা যাবে না, আবার এসব পেঁয়াজ এখন বাজারে বিক্রি করলেও কম দামে বিক্রি করতে হবে। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা করে। এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করলে এবারও পেঁয়াজ চাষ করে লোকসান হবে আমাদের।

সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জীবাংশু দাস বলেন, গতকালের শিলা বৃষ্টিতে আংশিক ক্ষতি হয়েছে পেঁয়াজের দানার। কিছু নিচু জমির পেঁয়াজ তলিয়ে গেলেও পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে। আবহাওয়া এমন থাকলে বা আর বৃষ্টি না হলে তলিয়ে যাওয়া পেঁয়াজের বেশি ক্ষতি হবে না। তবে এসব পেঁয়াজ বেশিদিন ঘরে রাখা যাবে না। আর শিলার আঘাতে পেঁয়াজের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে বেশি সমস্যা হবে না।

বাংলাদেশ জার্নাল/জিকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত