পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে
প্রতিবেশী বন্ধুদেশ ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে বুধবার তিন দিনের সফরে নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে আব্দুল মোমেন। গত ৭ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পর এটি তার প্রথম বিদেশ সফর।
দিল্লিতে আগামীকাল শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সাথে বৈঠক করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে আব্দুল মোমেন। দুই নেতার আলোচনায় রোহিঙ্গাসহ দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে তার।
সফর শুরু করার আগে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ভারতের জোরদার সমর্থন আশা করছেন বলে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দিল্লিতে দু'দেশের মধ্যকার যৌথ পরামর্শক কমিশন (জেসিসি)’র এই বৈঠকে যোগ দেবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড আব্দুল মোমেন এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
জেসিসির এ বৈঠকে যোগাযোগ, পানিসম্পদ, নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, এবং বাণিজ্যসহ দ্বিপক্ষীয় সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে ভারতীয় এক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, সফরকালে দু দেশের মধ্যে চারটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড দেলোয়ার হোসেন বলছেন, বাংলাদেশে ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর দু দেশের প্রথম উচ্চপর্যায়ের এ বৈঠকটি এ বৈঠকটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগ ও একই সাথে দু দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনার পূর্ব নির্ধারিত বিষয় ছিলো। বাংলাদেশ নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপি সরকারের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য তৈরি হয়নি।’
তিনি বলেন, জেসিসি বৈঠকে নিশ্চয়ই রোহিঙ্গা ইস্যু উঠবে এবং আঞ্চলিক ইস্যু হিসেবে এটিতে ভারতের সহযোগিতা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চাইবেন।
তিনি মনে করেন, এই ইস্যুতে ভারতের সক্রিয় ভূমিকা চাইবে বাংলাদেশ। কেননা এটির নিষ্পত্তি না হলে পুরো অঞ্চলের জন্যই এক ধরনের সমস্যা হবে। বিষয়টিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেখছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অর্থাৎ ভারতকে আরও সম্পৃক্ত করা।
এছাড়া সংস্কৃতিসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কিছু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে দু'দেশের মধ্যে।
বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চাইছে এবং দেশটির সাথে বেশ কিছু বড় প্রকল্পে জড়িত হচ্ছে। সে বিষয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এটি ভারত জানে। কারণ চীনের সাথে বাংলাদেশের এই সম্পর্ক অনেক পুরনো।
এদিকে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে চারটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে, যার একটি হচ্ছে সিবিআইয়ের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত। এই চুক্তির মাধ্যমে সিবিআই প্রশিক্ষণ দেবে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনকে।
দ্বিতীয় সমঝোতাপত্রটি স্বাক্ষরিত হবে নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের প্রকল্প ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। তৃতীয় চুক্তিটি হবে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়া সংক্রান্ত। আর চতুর্থ চুক্তিটি হচ্ছে বাংলাদেশের মংলা বন্দরের কাছে ভারতের একটি ‘ইপিজেড’(রপ্তানি সহায়ক অঞ্চল) তৈরির ওপর।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এমএ/