ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

স্বামীর আগুনে দগ্ধ আছমিনার পাশে দাঁড়ালেন ওসি

  মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১২ জুন ২০১৯, ১৯:৫৩  
আপডেট :
 ১২ জুন ২০১৯, ২১:০১

স্বামীর আগুনে দগ্ধ আছমিনার পাশে দাঁড়ালেন ওসি

তিন বছর আগে দরিদ্র বাবার সংসার ছেড়ে স্বামীর ঘরে যাবার সময় আছমিনার দু’চোখ জুড়ে ছিল সুখের স্বপ্ন। কিন্তু তিন বছরের সংসার জীবনে একবারও সুখের মুখ দেখা হয়নি তার। স্বামী সাহেদ আহমদের কাছ থেকে ভালোবাসার বদলে পেয়েছেন নির্যাতন। সর্বশেষ স্বামী নির্মমভাবে তার শরীর আগুনে ঝলসে দিয়েছে। আছমিনার শরীরের অন্তত ৬০ ভাগ পুড়ে গেছে।

সম্প্রতি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুছেগুল গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার ওই নারীর বাবা বড়লেখা থানায় মামলা করেছেন।

নির্যাতনের শিকার ওই নারী একই ইউনিয়নের জফরপুর গ্রামের ছমির উদ্দিনের মেয়ে। অভিযুক্ত স্বামী সাহেদ আহমদ মুছেগুল গ্রামের আনু মিয়ার ছেলে। তাদের সংসারে এক ছেলে সন্তান রয়েছে।

আগুনে আছমিনার শরীরের অন্তত ৬০ ভাগ পুড়ে গেছে। ৫দিন চিকিৎসা দেয়ার পর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে মুমূর্ষ এই রোগীকে। এই পোড়া শরীর নিয়ে ৯ দিন ধরে অস্য যন্ত্রণায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি।

দরিদ্র বাবার পক্ষে আছমিনার চিকিৎসা করানোও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। এ অবস্থায় বুধবার হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে আছমিনাকে ঢাকায় ভালো চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছেন বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক। স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরাও এগিয়ে এসেছেন।

মামলা ও নির্যাতিতার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জফরপুর গ্রামের দরিদ্র ছমির উদ্দিন ৩ বছর আগে মূছেগুল গ্রামের আনু মিয়ার ছেলে সাহেদ আহমদের সাথে মেয়ে আছমিনার বিয়ে দেন। তাদের ২ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে প্রায়ই স্বামীর মারধরের শিকার হতেন আছমিনা। সংসার ধরে রাখার চেষ্টায় মুখ বুজে সব সহ্য করতেন। কিন্তু বন্ধ হয়নি নির্যাতন। ঘটনার কয়েকদিন আগে আছমিনার কানের স্বর্ণের দুল বিক্রির চেষ্টা করেন স্বামী সাহেদ। বিষয়টি বুঝতে পেরে আছমিনা স্বর্ণের দুল বাবার বাড়িতে গিয়ে রেখে আসেন।

ঘটনার ভোররাতে আছমিনার কাছে স্বর্ণের অলংকার চায় সাহেদ। তখন আছমিনা বাবার বাড়িতে রেখে আসার কথা জানান। এতে সাহেদ ক্ষুব্ধ হয়ে ঘরে থাকা আছমিনার সব কাপড় চোপড় জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আছমিনা বাধা দিতে গেলে শারীরিকভাবে আঘাত করে আগুনের মধ্যে তাকে চেপে ধরে। এতে আছমিনা বেগমের শরীরের বেশিরভাগ অংশই ঝলসে যায়। এরপর গুরুতর অবস্থায় আছমিনাকে বড়লেখা উপজেলা সরকারি হাসপাতালে রেখে স্বামী সাহেদ আহমদ পালিয়ে যায়।

জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে খবর পেয়ে আছমিনার বাবা-মা ও বোন বড়লেখা সরকারি হাসপাতালে গিয়ে আছমিনাকে দেখতে পান। এ সময় চিকিৎসকরা আছমিনাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। ওইদিন (৪ জুন) দুপুরে আছমিনাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৫ দিন চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আছমিনা বেগমকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়। বর্তমানে তিনি মুমূর্ষ অবস্থায় বাবার বাড়িতে।

অন্যদিকে সোমবার (১০ জুন) স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে বড়লেখা থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও নির্যাতিতা নারীর বাবার বাড়ির লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে। এ সময় পুলিশ নির্যাতিতাকে আইনি সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১১ জুন) আছমিনার বাবা আছমিনার স্বামী ও শাশুড়িকে আসামি করে মামলা করেন।

মামলার বাদী ও আছমিনার বাবা ছমির উদ্দিন বুধবার বিকেলে বলেন, মাত্র ৫ দিন চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার মেয়েকে রিলিজ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি গরিব মানুষ। মেয়েকে যে চিকিৎসা করাবো এই সামর্থ্য নেই। বাড়িতে কষ্ট করছিল। মেয়ের উন্নত চিকিৎসা দরকার। উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব ও পুলিশের সহযোগিতায় রাতে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে।

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক। ওর পরিবার আগে ঘটনা জানায়নি। স্থানীয়ভাবে খবর পেয়েই একজন উপ-পরিদর্শককে (এসআই) ঘটনাস্থলে পাঠাই। নির্যাতিতার পরিবারকে মামলা দিতে বলি। পরে তার বাবা বাদী হয়ে দু’জনের নামে এজাহার দিয়েছেন। এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মেয়েটির দ্রুত ভালো চিকিৎসা করানো দরকার। গরিব পরিবার। তাই আমি নিজেই ঢাকা পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি। স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানও সহযোগিতা করছেন। ঢাকায় পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত