পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার শুরু
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:১৮
নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার করা শুরু হয়েছে। বুধবার এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলায় ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবর পাওয়া গেছে।
নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। এতে আবার সচল হয়েছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যান চলাচল।
জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) মোল্লা তাসনিম হোসেন বলেন, শ্রমিকদের বারবার বোঝানোর পর তারা আন্দোলন স্থগিত করেছেন। সড়কে এলোপাতাড়িভাবে ফেলে রাখা গাড়ি নিয়ে তারা সরে গেছেন। এতে যান চলাচল শুরু হয়েছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে।
বরিশাল
বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বরিশালের পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি বুধবার সকালে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরপর থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে দুদিন (২১ ও ২২ নভেম্বর) শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা রয়েছে। সভায় যে সিদ্ধান্ত হবে, সে অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে।
পটুয়াখালী
পটুয়াখালী জেলার সব রুটে বুধবার ভোর থেকে বাস ধর্মঘট শুরু হয়। বাস শ্রমিকেরা জানায়, কেন্দ্রীয়ভাবে ধর্মঘট শুরু হওয়ায় পটুয়াখালীতে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তবে সকাল ১০টার পর তারা বাস চলাচল শুরু করেছেন।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এবং বাসমালিক গ্রুপ সংগঠনের প্রশাসক মো. জিয়াউর রহমান বলেন, বাস চলাচল বন্ধ থাকার বিষয়টি তাদের জানা নেই। তবে এখন জেলার সব রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
নতুন আইনের উল্লেখযোগ্য ১৪টি বিধান
১. সড়কে গাড়ি চালিয়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে হত্যা করলে ৩০২ অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
২. সড়কে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালালে বা প্রতিযোগিতা করার ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। আদালত অর্থদণ্ডের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেয়ার নির্দেশ দিতে পারবে।
৩. মোটরযান দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তি গুরুতর আহত বা প্রাণহানি হলে চালকের শাস্তি দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল ও সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা।
৪. ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরযান বা গণপরিবহন চালানোর দায়ে ছয় মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়া হয়েছে।
৫. নিবন্ধন ছাড়া মোটরযান চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
৬. ভুয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার এবং প্রদর্শন করলে ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।
৭. ফিটনেসবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ মোটরযান চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়া হয়েছে।
৮. ট্রাফিক সংকেত মেনে না চললে এক মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দণ্ডিত করা হবে।
৯. সঠিক স্থানে মোটর যান পার্কিং না করলে বা নির্ধারিত স্থানে যাত্রী বা পণ্য ওঠানামা না করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
১০. গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বললে এক মাসের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
১১. একজন চালক প্রতিবার আইন অমান্য করলে তার পয়েন্ট বিয়োগ হবে এবং এক পর্যায়ে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে।
১২. গণ পরিবহনে নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে অতিরিক্ত ভাড়া, দাবী বা আদায় করলে এক মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দণ্ডিত করা হবে।
১৩. আইন অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্সে পেতে হলে চালককে অষ্টম শ্রেনি পাস এবং চালকের সহকারীকে পঞ্চম শ্রেণি পাস হতে হবে হবে। আগে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন প্রয়োজন ছিল না।
১৪. গাড়ি চালানোর জন্য বয়স অন্তত ১৮ বছর হতে হবে। এই বিধান আগেও ছিল।
এছাড়া সংরক্ষিত আসনে অন্য কোনও যাত্রী বসলে এক মাসের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
আরএ