ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

একই পরিবারের ৩ জন হত্যা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

  বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৪:৪৫

একই পরিবারের ৩ জন হত্যা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের সাখারী গ্রামে ট্রিপল মার্ডারের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে দুইজনকে আটক করেছে জেলা পুলিশ ও র‌্যাব-৮। জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা তারা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। উদ্ধার হয়েছে ১টি ছুরি এবং খোয়া যাওয়া স্বর্ণালংকার ও মোবাইল। আটককৃতরা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে কিছুটা গোপনীয়তা রক্ষা করার কথা বলছেন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।

এদিকে এ ঘটনায় শনিবার রাতে নিহত মরিয়মের ছেলে সুলতান মাহামুদ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের আসামী করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

শনিবার দুপুরে ও রাতে গ্রেপ্তারকৃত কবিরাজ জাকির হোসেন ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠী ইউনিয়নের উত্তর রাজপাশা গ্রামের চুন্নু হাওলাদারের ছেলে। রাতে গ্রেপ্তার জুয়েল হাওলাদার নগরীর সাগরদীর মুন্সিবাড়ী এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকে।

রোববার সকালে বরিশাল র‌্যাব-৮-এর সদর দপ্তর থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।

র‌্যাব-৮ এর কোম্পানী কমান্ডার মেজর সজিবুল ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ও র‌্যাব-৮ যৌথ অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। প্রথমে জাকির ওই বাড়ীর নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে সে জিন হাজির ও ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করে বলে প্রচার করে বাড়ীর সবার বিশ্বস্ততা অর্জন করে। এ সুযোগ নিয়ে শুক্রবার রাতে বাড়ীতে জিন আসবে বলে রাতে দরজা খোলা রাখার কথা বলে সে ওই বাড়ীতে রাতে কৌশলে প্রবেশ করে এবং একজন সহযোগীকে নিয়ে পর্যায়ক্রমে কুয়েত প্রবাসী আব্দুর রবের মা, বোন জামাই ও খালাতো ভাইকে হত্যা করে।

তিনি আরো জানান, পরবর্তীতে র‌্যাব-৮ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং জাকিরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের অপর আসামী জুয়েল হাওলাদারকে বরিশাল নগরীর পশ্চিম মতাশুর মুহুরী কান্দা এলাকা থেকে আটক করে। আকটকৃত দুইজনই প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

এরপর জাকির হোসেন ও জুয়েল হাওলাদারের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী র‌্যাব-৮ ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জাকির হোসেনের ভাড়া বাড়ি নগরীর সাগরদীর মুন্সিবাড়ী থেকে হত্যাকাণ্ডের পর ওই বাড়ী থেকে ছিনতাই করে আনা স্বর্ণালংকার, তিনটি মোবাইল ফোন ও একটি চাকু উদ্ধার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী ও আলামতসমূহ বানারীপাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রকিব জানান, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের পর ওই বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া স্বর্ণালংকার, তিনটি মোবাইল ফোন ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয়।

বানারীপাড়া থানা সূত্র থেকে জানা গেছে, শনিবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদে হাফেজ রবের স্ত্রী মিসরাত জাহান মিশু জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে জাকির ঘরে ঢুকে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। তার সাথে আরো একজন লোক ছিল। বিষয়টি দেখে ফেলায় জাকির তাকে বিবস্ত্র করে মোবাইলে ছবি ধারণ করে। এমনকি ওই অবস্থায় জাকির তাকে জড়িয়ে ধরেও ছবি তোলে। মিশুকে ভয় দেখায় হত্যাকান্ডের বিষয়টি জানালে এ ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে। ওই রাতে মিশু মোবাইল থেকে জাকিরের মোবাইলে ৫ হাজার টাকা বিকাশ পাঠায়।

রবের ভাইয়ের মেয়ে আছিয়া আক্তার জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর জাকির ও তার সাথে থাকা ব্যক্তিটি তাকে কোন কিছু না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখায়। এমনকি তাকে শাসিয়ে দেয়া হয় কাউকে জানালে তার বিয়ে হবে না। আবার বিয়ে হলেও সন্তানের মা হতে পারবে না। জাকির তাকে চালানের মুখে ফেলবে বলে জানায়।

প্রসঙ্গত, বরিশালের বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর এলাকার কুয়েত প্রবাসী আব্দুর রব হাওলাদারের বাড়িতে শুক্রবার মধ্যরাতের পর যে কোনো সময় তিনজনকে হত্যা করা হয়। এরা হলেন - প্রবাসীর মা মরিয়ম বেগম, তার বোনের ছেলে মো: ইউসুফ এবং বোন জামাই শফিকুল আলম। আব্দুর রব ১১ বছর যাবৎ কুয়েতে একটি মসজিদে ইমামতি করেন। তার স্ত্রী ও সন্তান বাড়িতে থাকেন। নিহত তিনজনের মধ্যে ইউসুফ এবং শফিকুল আলম দুই দিন আগে বেড়াতে এসেছিলেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত