ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঢাকার সমাবেশে মির্জা ফখরুল

পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২১, ১৯:০৮  
আপডেট :
 ১০ মার্চ ২০২১, ১৯:১৯

পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন

ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে ৪টি ট্রাকে ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরী করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ আহ্বান জানান তিনি।

নির্দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল কালো আইন বাতিলের দাবি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, অত্যান্ত পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। সেই ব্যর্থতার জন্য পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন। নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ ইসির অধিনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করুন এবং অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করুন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আর আমাদের ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। তারা বাড়ি, ঘর, গরু- ছাগল বিক্রি করে মামলা লড়ছে। আমাদের ছেলেরা ঢাকার রাজপথে রিক্সা চালায়! আমাদের এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আমাদের দাঁড়াতে হবে, এই অবস্থার অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে আমার যে ন্যায্য হিস্যাগুলো রয়েছে সেই হিস্যা আমি চাইতে পারবো না। দু:খ হয়, যখন দেখলাম- ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আসলেন। এসে ব্রিফিং ও সভা করলেন। সীমান্ত হত্যার বিষয়ে আমাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, অপরাধ না হলে হত্যা হবে না। ফখরুল প্রশ্ন রাখেন, হত্যা করার অধিকার কে কাকে দিয়েছে? বিনা বিচারে কোন সভ্য দেশের আইনে কাউকে হত্যা করার অধিকার দেয় নাই।

নির্বাচন কমিশনকে আজ্ঞাবহ কৃতদাসের চেয়েও খারাপ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, এই কমিশনকে অবিলম্বে এবং এই মূহুর্তে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। আমরা এই সমাবেশ থেকে বলতে চাই, অবিলম্বে এই নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে যোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারা গঠন করতে হবে।

বর্তমান সরকার খুব দুর্বল সরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, এতো দুর্বল যে, নিজেদের রক্ষা করবার জন্য প্রতিদিন নতুন নতুন আইন করতে হয়। একটা আইন করেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।

আমরা অত্যান্ত কঠিন সময় অতিক্রম করছি মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এতো বড় কঠিন সময় স্বাধীনতার ৫০ বছরে জাতি কখনো অতিক্রম করেনি। কিন্তু ৫০ বছর পরে আমরা কি দেখছি, সরকার আমাদের অধিকারগুলো কেড়ে নিচ্ছে। এই সরকার বন্দুকের মুখে আমাদের সকল অধিকারগুলোকে কেড়ে নিচ্ছে!

তিনি বলেন, আজকে যে সভা করছি, এই সভা করছি অত্যান্ত চাপের মধ্যে। গতকাল রাত ১২টায় বলেছে যে, মোহাম্মদপুরে সভা করতে দেয়া যাবে না। ওখানে প্রধানমন্ত্রীরর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। অথচ তারাই আগে সেখানে অনুমতি দিয়েছিল।

ভোট চুরি প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার হওয়ার আগে এই নির্বাচন কমিশনের বিচার হবে। শাস্তি হবে। নির্বাচন কমিশন চুরি করছে, কিন্তু আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কি করছে?

"যুদ্ধ ও সংগ্রাম হবে। কিন্তু আমরা গণতন্ত্র ফিরে আনবো। সময় আসবে না। বুকের রক্ত দিয়ে এই সময় আমাদের আদায় করতে হবে। কারণ আজ বাংলাদেশ মাফিয়া চক্রে হাতে। এই মাফিয়া চক্রের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।"

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা ভোটে অংশগ্রহণ করছি না। যেদিন জনগণের ভোটাধিকার ফিরে আসবে সেদিন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। এজন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে। ভোটাধিকার ফিরে দেয়ার আন্দোলন শুরু হয়েছে। সেই আন্দোলনে আমরা নেমে পড়ি। এই সংগ্রামে জিততে হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে সবাইকে এক সাথে নামতে হবে। আমরা এক সাথে নামতে পারলে আমরা জয়ী হব।

গণতন্ত্র প্রধানমন্ত্রী দেননি, উনি গণতন্ত্রকে ভয় পান উল্লেখ করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এই দু:শাসন থেকে মুক্ত পাওয়ার একটি পথ আছে। সেটা হচ্ছে রাজপথের আন্দোলন। কারণ বাংলাদেশে সকল কিছুর আদায় হয়েছে রাজপথের আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে।

এরআগে দুপুর থেকে ঢাকা উত্তর বিএনপির বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ডের প্রায় কয়েক হাজার নেতা কর্মীরা ব্যানার ও ফেস্টুন সহকারে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। এসময় তারা খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন স্লোগানে সমাবেশ প্রাঙ্গণ মুৃৃখরিত করে তুলেন।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটসহ এর আশ-পাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলেন পুলিশ সদস্যরা। পাশাপাশি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকেও মোতায়েন করা হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের সভাপতি এবং মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিদ আঞ্জু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এ এফ এম আব্দুল আলিম নকি সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরকত উল্লাহ বুলু, আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. মুজিবর রহমান সরোয়ার, খুলনা মহানগর সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু, রাজশাহী মহানগর সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, চট্রগ্রাম মহানগর সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএম/কেএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত