ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘উত্তপ্ত’ হয়ে উঠছে হবিপ্রবি

  সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৩২

‘উত্তপ্ত’ হয়ে উঠছে হবিপ্রবি
ফাইল ছবি

করোনার প্রভাবে সবকিছু থমকে দাঁড়ানোর মধ্যেই আবারও দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। যেকোন মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তক্ষয়ী সংষর্ঘ ঘঠার সম্ভবনা রয়েছে বলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভাইস চ্যান্সলর বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে প্রশাসনের সর্বোচ্চ ১৭ কর্মকর্তার সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণ ও বাসভবনের গেটে তালা লাগিয়ে দিয়ে ১৭ কর্মকর্তাকে অপমান করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, ১৭ কর্মকর্তাকে নিজের খেয়ালখুশি মতো তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

এছাড়া এক সময়ের ভিসিবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী মতাদর্শের শিক্ষকদেরকে প্রশাসনিক অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের পায়তারা। এসব বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

জানা গেছে, দফায় দফায় বিভিন্ন দাবি নিয়ে উপাচার্যের (ভিসি) বাসার সামনে শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের জটলা দেখা যাচ্ছে। ভিসির সঙ্গে দেখা করতে না পেরে প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারসহ ১৭ জন অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়া কর্মকর্তারা প্রশাসনিক কর্মবিরতি পালন করছেন।

এসব ঘটনার মধ্যেই গত বুধবার অধ্যাপক ডা. ফজলুল হককে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রাজিব হাসান।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীকে ভিসির বাসার সামনে বিভিন্ন দাবিতে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একপক্ষের অভিযোগ, করোনার শুরুর পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ মাস প্রশাসনিক ভবনে অফিস করেননি ভাইস চ্যান্সেলর। এর প্রেক্ষিতে প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

চলতি বছরের ৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ১৭ জন কর্মকর্তা একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তারা উল্লেখ করেন, মহামারীর শুরুর পর থেকে হাবিপ্রবির উপাচার্য প্রশাসনিক ভবনে অফিস না করায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারের নেতৃত্বে প্রশাসনিক ব্যক্তিরা সমস্যাগুলো থেকে কীভাবে উত্তরণ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য বাসভবনস্থ অফিসে দেখা করতে গেলে উপাচার্য দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান।

ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রার মোবাইল ফোনে সাক্ষাতের অনুরোধ জানালেও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। প্রশাসনিক দায়িত্বরত শিক্ষকেরা মূল ফটকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ফিরে আসেন।

পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেন ভাইস চ্যান্সেলরের ‘এমন আচরণের জন্য’ প্রশাসনিক দায়িত্বরত ব্যক্তিরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত না নেয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে বিরত থাকবেন।

তবে অভিযোগ নাকচ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কোনো কার্যক্রমই বন্ধ নেই। করোনাকালের শুরু থেকে আমি অফিস কাম-বাসা থেকে সব কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। কোন ধরনের ঝামেলাও হয়নি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গত জানুয়ারির শেষের দিকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়। এর প্রায় ৯ মাস হয়ে গেলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। গত ৭ মাসে জাতীয় কয়েকটি দিবস পালিত হলেও ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি বাসভবন থেকে এক মিনিটের জন্যেও বের হননি।

ভিসির মেয়াদ শেষ হতে মাত্র তিন মাস বাকি। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পক্ষ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিতে চাপ প্রয়োগ করছেন বলে জানা যায়। যেসব শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছেন তারাও বর্তমানে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন।

বর্তমান ভিসির মেয়াদ আগামী জানুয়ারিতে শেষ হবে। এই অল্প সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়কে উত্তপ্ত করার চেষ্টা চলছে বলেও অনেকেই মনে করছেন। তবে এই অল্প সময়ে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যেতে রাজি নন। নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে তিনি বিতর্কিতও হতে চান না বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যোগদান করার পর যারা সহযোগিতা করেছেন তারাই এখন ভিসির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের দাবি, ভাইস চ্যান্সেলরকে এতদিন সহযোগিতা করার পর তিনি শেষ সময়ে এসে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। উপাচার্য অন্য একটি পক্ষকে কাছে ডেকেছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

এর আগে গত ১২ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে শতকরা ১০ জন অধ্যাপকের নামের তালিকা চাওয়া হয় ভিসির কাছে। সেই তালিকাও গোপনীয়ভাবে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। এই তালিকা থেকে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের বিষয় নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে চলছে কানাঘুষা! কে কার দোষ বের করে নিজেকে সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে প্রমাণ করতে পারেন এই নিয়ে একজন আরেকজনের পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে। এতে করে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি শিক্ষকদেরও মান নিয়ে নানান শ্রেণী-পেশার মানুষ নানান রকম কথা বলছেন!

সদ্য অব্যাহতি পাওয়া রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. ফজলুল হক বলেন, আমি রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পাওয়ার পর ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়কে সব ধরনের সহযোগিতা করেছি। তিনি গত ৭ মাস ধরে প্রশাসনিক ভবনে অফিস করেন না। বাসা থেকে বের হন না।

তিনি আরও বলেন, তিনি অফিস না করার কারণে অনেক সমস্যা পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। তার মধ্যে একটা নিয়োগের বিষয় আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর আগে অনেকগুলো ডিপার্টমেন্ট নতুনভাবে হয়েছে। সেখানে শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। আমরা সেই মোতাবেক একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছি। করোনার কারণে এতদিন এগুলো বন্ধ ছিল। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে শিক্ষক নিয়োগ যদি এখনই দেয়া না হয় তাহলে পরে আরও অনেক পিছিয়ে যাবে। এজন্য আমরা যারা প্রশাসনে আছি তারা বিভিন্ন সময় তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের একদিনের বেশি সময় দেননি।

নিয়োগের বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভাইস চ্যান্সেলরকে কোন চাপ প্রয়োগ করে কি-না সেই বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, দেখেন, এখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আবেদন করছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও করছে। ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়কে এ বিষয়ে কোন চাপ প্রয়োগ করা হয়নি।

কী কী প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবিরতা হয়ে পড়েছে জানতে চাইলে ডা. ফজলুল হক বলেন, নিয়োগের বিষয়ে তো আছেই। এর বাইরে রিসার্চের বিষয় থাকে। তারপর কর্মচারী-কর্মকর্তা বা টিচারদের পর্যালোচনা ও পদোন্নতিরও একটি বিষয় আছে। তাদের পাওনা জিনিস সেটাও কিন্তু বন্ধ আছে! অন্যান্য জিনিসগুলো চলমান আছে। মোটকথা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ যাকে বলি, সেই শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সব জায়গায় কথা বলেছি। তারা বলেছেন, এই সময় শিক্ষার্থীদের একত্রিত করা যাবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক তারপর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব কাজ চলমান আছে। কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দ্রুত নিয়োগ দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন।

প্রশাসনিক ভবনে অফিস না করার বিষয়ে বলেন, আমি বাসা থেকে অফিস করছি। প্রতিদিন সব ফাইল দেখছি, স্বাক্ষর করছি। আমার সামনে এখনো অনেক ফাইল আছে। এর মধ্যেই আমরা দুটি একাডেমিক কাউন্সিল সম্পন্ন করেছি। ভার্চুয়াল মিটিং করেছি। পরীক্ষার ফলাফলও দিয়েছি। আমাদের কোন কার্যক্রমই বন্ধ নেই।

শিক্ষক স্বল্পতা এবং নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, গত বছরই আমরা ৬০ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। এই নিয়োগে আরও ৬১ জন শিক্ষক নিয়োগ হবে। করোনা মহামারী না আসলে এতদিনে এসব সমস্যা সমাধান হয়ে যেতো।

“আমি কারো সঙ্গেই দেখা করছি না। সব কাজ মোবাইল ফোনে ও ভার্চুয়ালে করছি। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে অনেকেই অনেক কথা ছড়াচ্ছেন! প্রশাসনিক কার্যক্রমে কোন ব্যাঘাত ঘটছে না,” প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা না করার বিষয়ে বলেন তিনি। সবকিছু চলমান আছে বলেও জানান ভাইস চ্যান্সেলর।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত