কুবি হলের ডাইনিং বন্ধ, ভোগান্তিতে ৩০০ ছাত্রী
কুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:০৫
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রীদের আবাসিক হলের (নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী) খাবার (ডাইনিং) টানা এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ হয়ে আছে। হলে খাবার না থাকায় বাহির থেকে বিভিন্ন নিম্নমানের হোটেলে চড়া দামে অস্বাস্থ্যকর খাবার কিনে খেতে হচ্ছে ছাত্রীদের। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঐ হলের প্রায় ৩০০ আবাসিক ছাত্রী।
আবাসিক ছাত্রীদের ভাষ্য থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে হলের ছাত্রীদের পরিচালনায় ডাইনিং পরিচালিত হয়ে আসছিল। যেখানে ছাত্রীরা অগ্রীম একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে মেস ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডাইনিং চালিয়ে আসছিল। গত ১৩ জানুয়ারি রাতের খাবারের সময় মিলের হিসাব নিয়ে হলের ডাইনিং ম্যানেজার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আসমা আক্তার লিপির সাথে কথা কাটাকাটি হয় ঐ হলের বাবুর্চিদের। হলের বাবুর্চিরা একথা হলের ছাত্রলীগ নেত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আইভী রহমানের কাছে জানায়। পরে ডাইনিং ম্যানেজারের সাথে ছাত্রলীগ নেত্রী আইভীরও বাকবিতণ্ডা হয় এবং আইভী তাকে (লিপি) রুমে নিয়ে মারধর করেন বলে জানান ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থী।
ঘটনার বিষয় জানতে পেরে সেদিন রাতেই ছাত্রী হলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তাহের, হলের আবাসিক শিক্ষক মো: সাদেকুজ্জামান ও জান্নাতুল ফেরদৌস, বিশ্ববিদ্যালয় গণমাধ্যম উপদেষ্টা মো: মাহবুবুল হক ভূঁইয়া। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদও সেখানে উপস্থিত হন। হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষে বিষয়টি মীমাংসা করতে বসেন উপস্থিত শিক্ষকরা।
এসময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও হলের ডাইনিং ম্যানেজার আসমা আক্তার লিপি বলেন, আমি নোটিশ দিয়ে যে ছাত্রীদের প্রদত্ত অগ্রীম টাকার চাইতে গৃহীত মিলের সংখ্যা বেশি হয়েছে তাদের মিল বন্ধ করে রেখেছিলাম। তবুও তাদের মধ্যে অনেকে মিল নিয়ে যায় এবং কিছু ছাত্রী মিল পায়নি। এ নিয়ে শোরগোল তৈরি হলে আমি বাবুর্চিকে জিজ্ঞেস করতে গেলে বাবুর্চি তাকে ঐ হলে অবস্থানকারী ছাত্রলীগ নেত্রী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আইভী রহমানের কাছে তার নামে বিচার দেবে বলে শাসায়।
তিনি জানান, আমি বাবুর্চি মামাকে বলি আপনি যার কাছে যাওয়ার যেতে পারেন। আমার হিসাব স্বচ্ছ। এ কথা শুনে ছাত্রলীগ নেত্রী আইভী রহমান (প্রত্নতত্ত্ব ১০ম), ইসরাত জাহান জেরিন (পদার্থবিজ্ঞান ১০ম) ও অপর্ণা নাথ আমাকে আইভীর রুমে নিয়ে গিয়ে উচ্চস্বরে সাউন্ডবক্স চালিয়ে মারধর করে।
তবে ছাত্রলীগ নেত্রী আইভী বলেন, মারধরের অভিযোগ সত্য নয়। ডাইনিংয়ে বাকবিতণ্ডার বিষয়টি মীমাংসা করতে আমরা তাকে রুমে ডেকেছি। মিলের হিসাব চেয়েছি। পরে তার সাথে কথা বলে মিটমাট হয়েছে।
ডাইনিং চলার বিষয়ে এই নেত্রী বলেন, এখন থেকে ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানে ডাইনিং চলবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের খাবার ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা তা দেখার অধিকার ছাত্রলীগের আছে।
এই ঘটনার পর থেকে বন্ধ রয়েছে ছাত্রী হলের ডাইনিং। এদিকে গত ৬ জানুয়ারি থেকে ঐ হলের প্রাধ্যক্ষ নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এন. এম. রবিউল আউয়াল চৌধুরী শিক্ষা ছুটিতে যাওয়ায় হল প্রাধ্যক্ষের পদটি শূন্য রয়েছে। এমতাবস্থায় হলের সার্বিক বিষয় ঠিকঠাক পর্যবেক্ষণ করাও যথাযথ হচ্ছে না বলে ডাইনিং শুরু হওয়ার ব্যাপারে শঙ্কায় আছেন আবাসিক ছাত্রীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রী জানান, হলে খাবার না থাকায় আমাদের বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বাহির থেকে খাবার খেয়ে আমরা যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছি, তেমনি অতিরিক্ত টাকাও খরচ হচ্ছে আমাদের। প্রশাসনের এদিকে নজর দেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো: আবু তাহের জানান, ছাত্রী হলে ঝামেলার বিষয়টি আমরা ঐদিন (১৩ জানুয়ারি) রাতে মীমাংসা করেছিলাম। তবে এখন পর্যন্ত ডাইনিং বন্ধ আছে- এ বিষয়টি আমি জানতাম না। এটা নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হল প্রশাসনকে অবহিত করছি। আর খুব তাড়াতাড়ি হলে প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হবে।
ছাত্রলীগের ডাইনিং চালানোর বিষয়ে তিনি জানান, ডাইনিং চালানোর সিদ্ধান্ত দিবে হল প্রশাসন। তবে হিসাব যথাযথ রেখে ছাত্রলীগের কেউ সেই দায়িত্ব নিতে চাইলে তাকে দেওয়া যেতে পারে।
