ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভোট গণনায় সতর্ক থাকার বার্তা মমতা

ভোট গণনায় সতর্ক থাকার বার্তা মমতা

ভারতের বিরোধী দলগুলো ভোট শুরুর আগেই ইভিএম নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন। ভোট চলাকালীন সময়েও বার বার ইভিএম কারচুপির নানা আশঙ্কা প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফলে বিজেপির এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা স্পষ্ট হওয়ার পরে গণনা কেন্দ্রে ইভিএমে নজর রাখতে চরম সতর্কতা জারি করলেন তিনি।

সোমবার মমতা বলেন, ‘শেষ ভোট গোনা পর্যন্ত দলীয় এজেন্টদের কোনো মতে গণনা কেন্দ্র ছেড়ে আসা চলবে না। যতই চাপ আসুক, মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে।’

সোমবার অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গে বৈঠকেও তিনি এ প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। মমতার বক্তব্য, তার এই বার্তা শুধু তৃণমূলের জন্য নয়, দেশের সমস্ত বিরোধী দলকে এই আর্জি জানাচ্ছেন তিনি। গণনার সময় ভিভিপ্যাটের সঙ্গে ইভিএমের সামঞ্জস্য থাকছে কি না, সে দিকেও নজর রাখার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মমতা ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে দাবি জানিয়েছে, কোথাও ভিভিপ্যাটের সঙ্গে ভোট মেশিনের হিসেব না মিললে সেই কেন্দ্রের পুরো ফল যেন ভিভিপ্যাটে গোনা হয়।

বুথ ফেরত সমীক্ষা দেখেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাধিকবার বলেছেন, তিনশোর বেশি আসন পেয়ে ক্ষমতায় ফিরবে বিজেপি। ফল প্রকাশের আগে কী ভাবে সে কথা জানলেন তিনি? এর সঙ্গেও কি ইভিএম কারচুপির সম্পর্ক আছে? এ দিনও চন্দ্রবাবুকে সে কথা মনে করিয়ে দেন তিনি।

২৩ তারিখ পর্যন্ত প্রতিটি স্ট্রং রুমে রাত পাহারাসহ কড়া নজরদারি চালানোর নির্দেশও দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তার ব্যবস্থাও করে ফেলেছেন তৃণমূলকর্মীরা। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে খড়গপুরের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে। স্ট্রং রুমও সেখানেই। তার বাইরে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি। এ দিন সকাল থেকেই দেখা যায় তৃণমূলকর্মীরা ঠায় বসে আছেন সেখানে। মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘ওখানে আমরা নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়ে তিনজন ভলান্টিয়ার রেখেছি। সিসিটিভিতে সারাক্ষণ নজর রাখছেন তারা।’মানসবাবু জানান, গণনা কেন্দ্রের বাইরে তাঁরা ক্যাম্প তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা রেলের জমি হওয়ায় অনুমতি মেলেনি। ফলে গাছের নীচে বসেই সারা দিন পাহারা দিচ্ছেন কর্মীরা।

দলীয় নেতৃত্বকে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্ট্রং রুম পাহারা দেওয়া থেকে শুরু করে গণনা কেন্দ্রে তাদের কী কী করণীয়, সব বিষয়েই কর্মীদের নির্দেশ দেবেন তৃণমূল নেতারা।

শেষ দফার ভোট-প্রচারের সময়েই ইভিএম নিয়ে যে কারচুপি হতে পারে, তার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। জানিয়েছিলেন, দিল্লি থেকে তিনি খবর পেয়েছেন স্ট্রং রুমে ঢুকে ইভিএম বদলে দিতে পারে বিজেপি। ফলে দলীয় কর্মীদের বিশেষ পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কারচুপি হচ্ছে এমন সন্দেহ হয়, তা হলে তৎক্ষণাৎ তার ছবি তুলে পাঠিয়ে দিতে হবে দলীয় নেতৃত্বের কাছে। এর জন্য দলের তরফ থেকে পুরস্কৃত করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন মমতা।

এ দিনও তিনি বলেন, ভোটের পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে সব সমীক্ষা দেখানো হচ্ছে, তা দেখে কর্মীরা যেন মনোবল হারিয়ে না ফেলেন। সোশ্যাল মিডিয়ার খবরকেও এড়িয়ে চলার নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গণনা চলাকালীন কখনও দলীয় প্রার্থী এগোবেন, কখনও পিছোবেন। তা দেখে কর্মীরা যেন আনন্দিত অথবা হতাশ হয়ে না পড়েন। কর্মীরা যেন কোনও প্ররোচনায় পা না দেন। মাথা ঠাণ্ডা রেখে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও এ দিন বলেন, ‘বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না। স্ট্রং রুমে নজর রাখা, গণনা কেন্দ্রে সতর্ক থাকা—এই সবই লড়াইয়ের অংশ। শেষ মুহূর্তে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। কিন্তু তখনও গণনা কেন্দ্রে থেকে লড়াই চালাতে হবে।’কংগ্রেসের তরফ থেকেও কর্মীদের একই রকম নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২৩ মে ভোট গণনার দিনে ভোটকেন্দ্রের বাইরে গণ্ডগোলের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজ্য প্রশাসন। ইতিমধ্যেই বীরভূমে গণনা কেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন দলকে ক্যাম্প অফিস করার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। তার বাইরে কেউ অফিস বানাতে পারবে না। গণনা কেন্দ্রের বাইরে যান চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।

সূত্র: আনন্দবাজার

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত