ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -২৬)

  শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:৩২

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -২৬)

[দেশের জনপ্রিয় দুটি পত্রিকার (যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন) জন্মের পেছনের ইতিহাস, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া বিব্রতকর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, হস্তক্ষেপ, পত্রিকা প্রকাশের ওয়াদা দিয়ে অন্য একটি জনপ্রিয় পত্রিকা থেকে নিয়ে এসে পত্রিকা না বের করে হাতজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেয়া, পত্রিকা প্রকাশের পর কোন কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু দিনের মধ্যেই ছাপা সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে লাভ খোঁজা, ইচ্ছেমত সাংবাদিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা সহ পত্রিকার অন্দর মহলের খবরা-খবর, রাজনৈতিক মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া কিছু রিপোর্ট, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির কিছু ঘটনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার এ বই ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’। জানতে পারবেন সংবাদপত্র জগতের অনেক অজানা ঘটনা, নেপথ্যের খবর।]

(পর্ব -২৬)

ল্যাবএইড থেকে বেরিয়ে গেলাম বসুন্ধরায় বাংলাদেশ প্রতিদিন অফিসে। এদিন কাউকে আর কিছু বললাম না। নিয়োগপত্র পকেটে। কাজ শেষ করে সময়মতো বাসায় ফিরি। বাসায়ও কাউকে কিছু বলিনি। ল্যাবএইডে যাওয়া-আসা আলোচনা কোন কিছুই জানাইনি। এভাবেই কেটে গেল রাতটি। নানা ধরনের চিন্তা-ভাবনা। কী করতে যাচ্ছি আমি, নিজেই বুঝতে পারছিলাম না। যেন একধরনের মোহের মধ্যে পড়ে গেছি। পরদিন অফিসে গিয়ে যথারীতি সকালের সব বৈঠক করে ফোন করলাম শাহ আলম সাহেবকে। বললাম, আমি দেখা করতে চাই। তিনি দুপুরের পর তার অফিসে যেতে বললেন। কথামতো তিনটার দিকে তার অফিসে হাজির হলাম। তিনি একাই ছিলেন। সাধারণত আমি যখনই গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয়ের কথা বলেছি তখন তিনি একাই কথা বলতেন। আমি রুমে ঢুকতেই চা-নাস্তা এলো। পত্রিকা নিয়ে কথা হতে থাকলো। আমি জানালাম সব ভাল চলছে। আগের মতো কথাবার্তা। তিনি স্বাভাবিক, আমি অস্বাভাবিক। কেননা শামীম সাহেব যে কথা বলেছিলেন তার মধ্যে এমন কোন আভাস লক্ষ করছি না। তিনি পত্রিকার কথাই বলছেন। প্রায় আধঘণ্টা এভাবে কথা বলার পর আমি পদত্যাগেরর বিষয়টি এভাবে তুললাম : শাহ আলম ভাই বাংলাদেশ প্রতিদিন তো এখন ভাল চলছে, লোকসানেও নেই বরং লাভে আছে। আমি এখন বিদায় নিতে চাই। একটি ফোন আসার কারণে তিনি কথার শেষ অংশটি বেশি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন বলে মনে হলো না। ফোন রাখার পর আমি আবার বললাম, ভাই আমি প্রতিদিন থেকে বিদায় নিতে চাই। তিনি বলে উঠলেন, মানে? এরপর চুপ করে রইলেন। আমিও চুপ। প্রায় তিন-চার মিনিট পর বললেন, কেন? জবাবে আমি বললাম আমার বাসা থেকে অফিস অনেক দূর। ট্রাফিক জ্যাম এতো বেশি যে আসতে আড়াই-তিনঘণ্টা, যেতে দুই ঘণ্টা। অর্ধেক সময় রাস্তায়ই পার হয়ে যায়। তিনি বললেন, বসুন্ধরায় এসে যান। অ্যাপার্টমেন্ট রেডি আছে। এখানে থাকেন। আমি বললাম, ছোট ছেলে মেডিকেলে পড়ছে। তার কলেজ এখান থেকে অনেক দূর হবে।

এরপর তিনি জানতে চাইলেন, অন্য কোথাও কাজ ঠিক করেছেন। আমি বললাম, হ্যাঁ। কোথায় জানালাম। তিনি বললেন, আপনি ভুল করছেন। নিজের গড়া কাগজ রেখে কেউ চলে যায়? যাবেন না আরও চিন্তা করেন। চিন্তা-ভাবনা করে আসেন। চাকরি ছাড়ার বিষয়ে আমার বক্তব্যে তিনি খুবই আশ্চর্য হলেন মনে হলো। তার বক্তব্যে স্পষ্ট মনে হয়েছে, এ-ব্যাপারে কিছু তিনি জানতেন না। শামীম সাহেবের সাথে কথা হয়েছে, এ-কথা কোনভাবেই আমার সত্য মনে হয়নি। বিদায় নেয়ার আগে শাহ আলম সাহেব বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য বলেন। শাহ আলম সাহেবের অফিস থেকে বের হতেই শামীম সাহেবের ফোন। তিনি জানতেন, আমি আজ পদত্যাগ করব। তাকে বললাম ঘটনা। এও জানতে চাইলাম আসলেই কি আপনাকে শাহ আলম সাহেব আমার বিষয়ে কোন কথা জানতে চেয়েছিলেন? তিনি জোর দিয়ে বললেন, আমি কি আপনার সাথে অসত্য বলছি? আমি অফিসে কাউকে কিছু বললাম না। শাহ আলম সাহেব তার পরিবারের মধ্যে আলোচনা করে থাকতে পারেন। কিন্তু অফিসে তিনিও কাউকে কিছু বলেননি। আমি যথারীতি কাজ করছি। শামীম সাহেব ফোনের পর ফোন। জানতে চান কবে পদত্যাগ করছি। এভাবে পক্ষকাল চলে গেল। আবার শাহ আলম সাহেবের কাছে গেলাম। এবার পদত্যাগপত্র নিয়ে গিয়ে একই কথা বললাম। তিনি আগের মতই বললেন ভুল করছেন। আরও ভাবেন। আমি বললাম, না শাহ আলম ভাই। আপনি আমাকে বিদায় দেন। তিনি এবার বললেন, পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে নিয়ে যান। আপনি আরও ভাবেন, আমিও ভাবি। কিছুদিন কাজ করেন। যদি নাই থাকতে চান আমি আপনাকে বলব কিছুদিন সময় নিন। পরে পদত্যাগ করেন। আরেকটা কথা তিনি বললেন, যেখানেই যান প্রতিদিন থেকে কাউকে না নিলে আমি খুশি হব।

এদিন অফিসে এসে আমি তখনকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বর্তমান সম্পাদক নঈম নিজামকে পদত্যাগের বিষয়টি বলি। শাহ আলম সাহেবের সাথে আলোচনার কথাও জানাই। পদত্যাগ করতে চাই শুনে তিনিও আশ্চর্য হলেন। নঈম আমার স্নেহভাজন। অনেক আগে থেকে দুজনের সখ্য। একসাথে আড্ডা। দু’জন যখন বেকার ছিলাম তখনও আড্ডা দিতাম। তিনি শুনে বললেন, ‘আপনি কেন পদত্যাগ করবেন?’ কেন যাবেন? পত্রিকা এখন ভাল চলছে। তাই কেন পদত্যাগ করবেন। তাকে বললাম আগে যদি আমি চলে যেতাম, পত্রিকার লোকসানের সময় যদি চলে যেতাম তাহলে অনেকে এমনকি মালিকরাও অনেক কথা বলার সুযোগ পেত। পত্রিকার এখন ভাল একটি সময়ে যাচ্ছে। তাই কারো কিছু বলার থাকবে না। আর তুমি তো জানো আমার লোভ-লালসা কম। ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ, সংসার খরচ চললেই আমার হয়। সহায়-সম্পদের লোভ থাকলে অনেক আগেই করতে পারতাম। সেদিন শাহ আলম সাহেব জানতে চেয়েছিলেন, আমি যদি চলে যাই তাহলে সম্পাদক কাকে করা যায়। আমি বলেছিলাম বাইরের কাউকে আনা দরকার নেই। নঈম নিজামকেই করেন। আমার প্রস্তাবে তিনি কোন কথা বলেননি। আমি নঈমকে তাও জানালাম। তবে নঈম সেদিন একটি সত্য কথা বলেছিল। অর্থাৎ খারাপ সময় গেলেন না, এখন কেন? বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রকাশের ছয় মাসের মাথায় আমার খারাপ সময় কেটেছে। বসুন্ধরা গ্র“পের মিডিয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত এক কর্মকর্তা আমাকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন নানা বিষয়ের উল্লেখ করে। পরে শুনেছি এটা মালিকদের পক্ষ থেকে আসেনি। অনেকটা তার ব্যক্তিগত। তিনি তখন পত্রিকার খবরদারি করতে চাইতেন, আমি পাত্তা দেইনি। আমি বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিবাদ এবং তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আরেকটি চিঠি পাঠাই। মালিকদেরও বিষয়টি জানাই। এর পর থেকে সেই কর্মকর্তা চুপ হয়ে যান। খবরদারি এমনকি তার অফিসে আসাও বন্ধ হয়ে যায়। তবে এটা আমি নিশ্চিত ছিলাম ওই কর্মকর্তা কারো-কারো ইন্ধনেই ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন। কেননা আমি কে, কী আমার সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা ইত্যাদি তার অজানা ছিল না।

চলবে...

বইটি পড়তে হলে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার চোখ রাখুন ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ অনলাইনে।

বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন

আজিজ সুপার মার্কেট (তৃতীয় তলা), ঢাকা।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন

আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত