ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

পুলিশি হেফাজতে চলচ্চিত্রকর্মীর মৃত্যু

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:৩৪

পুলিশি হেফাজতে চলচ্চিত্রকর্মীর মৃত্যু
বাবু ও তার পরিবারের সদস্যরা

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা হেফাজতে আবু বক্কর সিদ্দিক বাবু (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মারা গেছেন। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ফ্লোর ইনচার্জ ও লাইট ম্যানের কাজ করতেন।

পরিবার ও সহকর্মিরা বলছে, আবু বক্কর সিদ্দিক বাবু পুলিশি নির্যাতনে মারা গেছেন। তবে পুলিশ বলছে, তিনি থানার হাজতখানায় গলায় চাদর পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

নিহত বাবু নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার বালিয়াকান্দি গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। মোহাম্মদপুর চাঁদ উদ্যান এলাকায় থাকতেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোকসানা আক্তার মায়া নামে এক নারী তার নামে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। শনিবার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ সন্ধ্যার পর বাবুকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাত ৩টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাবুকে মৃত ঘোষণা করলে লাশটি মর্গে পাঠানো হয়। সূত্র জানায় মেডিকেলে আনার আগেই বাবু মারা যান।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আবু বক্কর সিদ্দিক বাবুর সাথে ছয় মাসে আগে তার সাবেক স্ত্রী আলেয়া ফেরদৌসির বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকে আলেয়া ফেরদৌসি তার দুই সস্তান নিয়ে আলাদা থাকেন। তবে বিচ্ছেদের আগে থেকে রোকসানা আক্তার মায়া নামে এক নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বাবু। এ সব নিয়ে মায়ার স্বামীর আবু বক্কর সিদ্দিক বাবুর ওপর ক্ষোভ ছিল।

চার মাস আগে বাবুর কাছ খেকে মায়া ১০ লাখ টাকা ধার নেন। এই টাকা বাবু ফেরত চাইলে মায়া টালবাহানা করতে থাকেন। এ সময় মায়া ও বাবুর একান্ত মুহূর্তের ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেন বাবু। এতেও কাজ না হওয়ায় কিছু দিন আগে মায়া ও বাবুর একান্ত কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন বাবু। এই ঘটনায় মায়া তেজগাঁও থানায় মামলা করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মায়া তেজগাঁও এলাকায় বিএনিপর রাজনীতির সাথে যুক্ত।

নিহতের সাবেক স্ত্রী আলেয়া ফেরদৌসি বলেন, গতরাতে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। রোববার সকাল ১০ টায় আমাকে থানা থেকে ফোন করে বলা হয় আমার স্বামী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। তার লাশ শনাক্ত করার পর শুনেছি গতকাল রাস্তা থেকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। তিনি বলেন আমার স্বামীকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। সে কিছুতেই আত্মহত্যা করতে পারে না।

এফডিসির প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার দুপুরে আমরা একসাথে দুপুরের খাবার খেয়েছি। আজ সকালে তিনি মারা গেছেন বলে শুনতে পাই। পুলিশের কাছ থেকে জানতে পেরেছি রোকসানা আক্তার নামে এক নারী আবু বক্করের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে থানায় অভিযোগ করেছিলেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বলছে বাবু থানায় আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু বাবু আত্মহত্যা করার মতো ছেলে নন। থানায় কীভাবে আত্মহত্যা করবেন। এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তার মৃত্যুর জন্য পুলিশই দায়ী। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বাবুর নামে মামলা ছিল। গত রাতে তাকে গ্রেপ্তার করায় আদালতে পাঠানো সম্ভব হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আমরা যদি বুঝতে পারতাম তবে কি তাকে আত্মহত্যা করতে দিতাম? থানার হাজতখানার সামনে কেউ পাহারায় থাকে না। তার নামে নারী নির্যাতন ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হয়েছিল। এক নারীর সঙ্গে তার পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত