করোনাভাইরাস, জন্মদিন এবং একজন বৃদ্ধ
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ হলেন বব ওয়েটন। ১১২ বছর বয়সী মানুষটি থাকেন যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশায়ার কাউন্টির অলটন শহরে।
জাপানের চিতেতসু ওয়াতানাবের মৃত্যুর পর গত মাসে সাবেক শিক্ষক ওয়েটনের ভাগ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষের খেতাবটি জোটে। তাই এবার স্বজনদের নিয়ে ধুমধাম করে জন্মদিন পালনের আয়োজন করেছিলেন তিনি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তার সব আয়োজন ভেস্তে গেছে।
ফলে রোববার জন্মদিনের বিশেষ দিনটি কেয়ারহোমের ছোট্ট ঘরটাতে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনেই কেটেছে তার।
এ নিয়ে আক্ষেপ করে প্রেস এ্যাসোসিয়েশন সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, ‘সবকিছু বাতিল, কেউ আসবেনা, কোনও উৎসব হবেনা।’
দুই বিশ্বযুদ্ধে বেঁচে যাওয়া বব ওয়েটন করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কারণ, তার মতে, পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছেনা এই ভাইরাস কতটা ভয়ঙ্কর এবং বাঁচতে গেলে ঠিক কি করতে হবে।
‘পুরো পৃথিবীর অবস্থা কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে গেছে। কি জানি শেষ পর্যন্ত কী হয়।’
‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমরা জানতাম কী করতে হবে, আমাদের লক্ষ্য কী... কিন্তু কেউ এখন পর্যন্ত জানেনা কীভাবে এই ভাইরাসকে জব্দ করা যাবে, এর শেষ কোথায়।’
স্প্যানিশ ফ্লু নামে যে ভাইরাস মহামারিতে ১৯১৮ সালে বিশ্বজুড়ে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল, তখন ওয়েটন ছিলেন ১০ বছরে শিশু। তবে তার পরিবার একশ বছর আগের ওই ভয়াবহ মহামারির শিকার হয়নি।
‘পরে বড় হয়ে ওই মহামারির কথা আমি ইতিহাস বইতে পড়েছি। ওই বয়সে আমি তখন তেমন কিছুই বুঝিনি, কারণ আমার কোনও ভাই বা বোন বা ঘনিষ্ঠ কেউ ঐ রোগে মারা যায়নি।’
তাছাড়া একশ বছর আগে তখনকার শিশুরা বাইরের জগত সম্পর্কে খুব কমই জানতো।
এ সম্পর্কে বব ওয়েটন বলেন, ‘সেসময় একজন শিশুর জগত প্রাপ্তবয়স্কদের জগতের থেকে একদম আলাদা ছিল। শিশুরা সংবাদপত্র পড়তো না। রেডিও ছিল না যে আপনি রেডিওতে খবর শুনতে পাবেন। এখন তো নানা দিক থেকে আসা খবরে ছোট-বড় সবাই সর্বক্ষণ নিমজ্জিত থাকেন।’
এতদিন বেঁচে থাকার রহস্য কি? জানতে চাওয়া হয়েছিল বব ওয়েটনের কাছে।
তিনি বলেন, কোনও গোপন ফর্মুলা নেই তার কাছে। তবে তিনি বলেন, ‘আমি কখনই বৃদ্ধ হতে চাইতাম না, মৃত্যুর কথা ভাবতাম না।’
তবে তিনি মনে করেন, বইপড়া থেকে শুরু করে উইন্ড-মিলের মডেল তৈরির মত নানা বিষয় নিয়ে তার নিরন্তর আগ্রহ তাকে এতদিন পর্যন্ত সচল রাখতে সাহায্য করেছে।
১১২ বছরে শুধু ব্রিটেনেরই নয়, সারা বিশ্বের মোড় ঘোরানো সব ঘটনা- দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছেন বব ওয়েটন।
জীবদ্দশায় এখন পর্যন্ত তিনি ব্রিটিশ রাজ-সিংহাসনে পাঁচজনকে বসতে দেখেছেন। ২২ জন প্রধানমন্ত্রী দেখেছেন, দেখেছেন ২১ জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
দুটো বিশ্বযুদ্ধই তার চোখের সামনে হয়েছে এবং স্প্যানিশ ফ্লু, কলেরা এবং গুটি বসন্তের মত ভয়াবহ মহামারি থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
বব ওয়েটন তিন সন্তানের বাবা, তার নাতি-নাতনির সংখ্যা ১০ এবং প্র-পৌত্র প্রো-পৌত্রী ২৫ জন।
কিন্তু এতসব থেকেও এবারের বিশেষ দিনটিতে কারো সান্নিধ্য পেলেন না এই বৃদ্ধ। তার জীবনের ১১২তম জন্মদিনের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাস।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এমএ/