ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২০ মিনিট আগে
শিরোনাম

চার হাজার টাকার জন্য খুন, ব্যাগের সূত্রে গ্রেপ্তার হত্যাকারী

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৩, ২১:৫০

চার হাজার টাকার জন্য খুন, ব্যাগের সূত্রে গ্রেপ্তার হত্যাকারী
সংগৃহীত ছবি

গত ২০ এপ্রিল রাজধানীর বরুয়ার বোয়ালিয়া খাল সংলগ্ন আশিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের বালুর চর থেকে মেছের আলী নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন নিহতের ছেলে। পরে তদন্ত করে পুলিশ মরদেহের পাশে পড়ে থাকা একটি ব্যাগের সূত্র ধরে পরে ‘হত্যাকারীকে’ শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম রমজান আলী।

রোববার মধ্যরাতে শ্রীপুরের মাওনা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে খিলক্ষেত থানা পুলিশ। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিতে আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গত ২০ মে মেছের সবজি বিক্রি করতে ভ্যান নিয়ে বাসা থেকে বের হন এবং রাতে সবজি বিক্রি করে বাসায় ফেরেন। রাত ১১টার দিকে তার নাতি নাইমকে বলে বাসায় ফিরবেন জানিয়ে বাইরে যান। যাওয়ার সময় নাতিকে বাসায় তালা লাগিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে বলে যান। এরপর মেছের আলী আর বাসায় ফেরেননি। দুই বছর আগেও কয়েকবার তিনি এমন করেছেন বলে পরিবারের কাছে এই ঘটনাটি প্রথমে স্বাভাবিক মনে হয়। এজন্য পরিবারের লোকজন বিষয়টি থানা পুলিশকে জানায়নি।

পরে গত ২৩ মে বিকেলে মেছের আলীর পরিবারের লোকজন জানতে পারে বরুয়ার বোয়ালিয়া খাল সংলগ্ন আশিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের বালুর চড়ে মেছের আলীর মরদেহ পড়ে আছে। পরে সেখানে গিয়ে স্ত্রী তার স্বামী মেছের আলীর আংশিক পচনশীল মরদেহ শনাক্ত করেন। শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন না থাকা, মেছের আলীর কারও সাথে শত্রুতা না থাকা এবং একইসাথে ভিকটিম স্বেচ্ছায় বাসা থেকে বের হওয়ায় যে কোনোভাবে ভিকটিমের মৃত্যু হতে পারে চিন্তা করে ভিকটিমের ছেলে আল আমিন বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্তকালে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে একটি ব্যাগ উদ্ধার করে। ব্যাগের ভেতর থেকে কাস্তে, কম্বলসহ কিছু নতুন-পুরনো কাপড় ও মিনা নামে একজনের জন্ম নিবন্ধন ও টিকা কার্ড পাওয়া যায়। পরে ঘটনাস্থলের আশপাশের সকল সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ করে বিশ্লেষণ করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ব্যাগের ভেতর থেকে প্রাপ্ত জন্ম সনদের ভিত্তিতে মিনাকে এবং তার স্বামী শাহাবুদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তারা পুলিশকে জানিয়েছেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন আগে মিনার স্বামী শাহাবুদ্দিন তাদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার দিকে যেতে চাচ্ছিলেন। একই সময়ে যখন তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত হন তখন এক বয়স্ক লোক তাকে বলেন, ভাতিজা আমিও নেত্রকোনায় যাবো। চল আমরা একসাথেই যাই। আমরা যদি এখানে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করি তাহলে আমাদের অনেক সময় লেগে যাবে। সেক্ষেত্রে বয়স্ক লোকটি একটি বিকল্প রাস্তার কথা বলেন এবং সেটি হল কারওয়ান বাজার থেকে বাসে করে যাওয়া। কমলাপুর থেকে সরল বিশ্বাসে শাহাবুদ্দিন সেই বয়স্ক লোকটির সাথে যার নাম পরবর্তীতে জানা যায় রমজান আলী, তার সাথে করে কারওয়ান বাজারে যান। সেখানে রমজান আলী শাহাবুদ্দিনকে চা পানের প্রস্তাব দেন। রামজান আলী চা পানের পর শাহাবুদ্দিনকে জানান, তোমার কাছে যে ব্যাগটা রয়েছে, ব্যাগটি তুমি আমার কাছে দিয়ে দাও, এটা মানুষজন নিয়ে নিতে পারে তোমার কাছ থেকে।

তাছাড়া তার কাছে কোনো টাকা থাকলে তাও রমজান আলী কাছে দিয়ে দিতে বলেন। শাহাবুদ্দিন তার কাছে থাকা ৪০০ টাকা এবং তার ব্যাগটি রমজান আলীকে দিয়ে দেন। তখন শাহাবুদ্দিন রমজান আলীর মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রী মিনাকে কল দিয়ে জানান তিনি এই চাচার সাথে তার গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন, এই চাচাও একই এলাকায় যাবেন। কিন্তু যখন শাহাবুদ্দিন চা পানের পর তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে রমজান আলী তার ব্যাগ ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।

পরে শাহাবুদ্দিন অন্য লোকদের সাহায্য নিয়ে ট্রেনে করে তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান এবং তার স্ত্রীকে ফোন করে জানান, তিনি ঠিকমতো গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছেন। সেইসঙ্গে এও জানান যে, রমজান আলী তার ব্যাগ ও টাকা নিয়ে চলে গেছেন। মিনা তখন তাকে বিকাশের মাধ্যমে ৫০০ টাকা পাঠান। ওই ঘটনার পর আরও একটি নাম্বার থেকে মিনাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা পয়সা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মিনা টাকা দেননি। যেহেতু মিনার স্বামী সুস্থ অবস্থায় গ্রামের বাড়তে পৌছেছিলেন তাই সে এই বিষয়ে পুলিশকেও জানাননি।

পুলিশ আরও জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া ব্যাগটি শাহাবুদ্দিনকে দেখানো হলে এটি তার ব্যাগ বলে শনাক্ত করেন। রজমান আলী শাহাবুদ্দিনকে চায়ের সাথে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে ব্যাগটি নিয়েছিলেন। শাহাবুদ্দিনের জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি পর্যালোচনা করে দেখতে পায়, যেদিন মেছের আলী বাসা থেকে চলে যান ওই একই দিন একটি বয়স্ক লোক অটোরিকশায় করে ভিকটিমের সাথে বড়ুয়া এলাকায় যান। তখন বয়স্ক লোকটির পেছনে একটি রেক্সিনের ব্যাগ ঝুলানো ছিলো। ওই রেক্সিনের ব্যাগের ভিতরেই শাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে নেয়া ব্যাগটিও ছিলো। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহয়তায় এবং সিসিটিভি পর্যালোচনায় পুলিশ জানতে পারে রমজান আলী ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট জোনের এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, মেছের আলীর লাশের পাশে পড়ে থাকা ব্যাগের ভেতর কাস্তে, কম্বলসহ কিছু নতুন-পুরনো কাপড় ও মিনা নামে একজনের জন্মনিবন্ধন ও টিকা কার্ড পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলের ওই ব্যাগ এবং ঘটনাস্থলের আশপাশের সব সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ করে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন হয়।

রমজান আলী প্রথমে শাহাবুদ্দিন নামে একজনকে চেতনানশক ওষুধ খাইয়ে কাওরান বাজার এলাকা থেকে ব্যাগসহ সবকিছু ছিনিয়ে নেন। মেছার আলীকেও রমজান আলী চেতনানাশক খাওয়ান। কিন্তু এতে তার মৃত্যু হয়। পরে বরুয়া এলাকায় মরদেহ ফেলে চলে যান। তবে মরদেহের পাশে শাহাবুদ্দিনের সেই ব্যাগটি পড়েছিল। যার মধ্যে তার স্ত্রীর জন্মনিবন্ধন ও টিকা কার্ড ছিল। মূলত এই জন্মনিবন্ধন ও টিকা কার্ডের সূত্র ধরেই ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও অভিযুক্ত রমজান আলীকে শনাক্ত ও পরে গ্রেপ্তার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে রমজান আলী জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তিনি ভিকটিম মেছের আলীকে নিয়ে রেলগেটের সামনে এক জায়গায় বসে চা পান করেন। ওই সময় রমজান আলী চায়ের মধ্যে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে দেন। ভিকটিমের কাছে থাকা ৪ হাজার টাকা নেয়াই রমজান আলীর মূল উদ্দেশ্য ছিলো। ভিকটিম ও রমজান আলী চা পান করার পর যখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন তার কিছুক্ষণ পর ভিকটিম অজ্ঞান হয়ে গেলে রমজান আলী ভিকটিমকে একটু দূরে বড় বড় ঘাসযুক্ত জায়গায় রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। কিন্তু ভুলবশত রমজান আলী ওই ব্যাগটি ঘটনাস্থলে রেখে চলে যান।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত