ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩১ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -৩)

  শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০১৯, ১১:১১

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -৩)

[দেশের জনপ্রিয় দুটি পত্রিকার (যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন) জন্মের পেছনের ইতিহাস, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া বিব্রতকর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, হস্তক্ষেপ, পত্রিকা প্রকাশের ওয়াদা দিয়ে অন্য একটি জনপ্রিয় পত্রিকা থেকে নিয়ে এসে পত্রিকা না বের করে হাতজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেয়া, পত্রিকা প্রকাশের পর কোন কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু দিনের মধ্যেই ছাপা সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে লাভ খোঁজা, ইচ্ছেমত সাংবাদিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা সহ পত্রিকার অন্দর মহলের খবরা-খবর, রাজনৈতিক মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া কিছু রিপোর্ট, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির কিছু ঘটনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার এ বই ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’। জানতে পারবেন সংবাদপত্র জগতের অনেক অজানা ঘটনা, নেপথ্যের খবর।]

(পর্ব -৩)

বাবুল সাহেবের বাসায় বৈঠকে কথা শুরু করলাম আমিই। পরে বাবুল সাহেব কেন পত্রিকা প্রকাশ করতে চান সারওয়ার সাহেবকে একটি ব্যাখ্যাও দিলেন। পত্রিকা নিরপেক্ষ হবে, ভালভাবে চালাতে হবে এবং এক নম্বর পত্রিকা হতে হবে। বিনিয়োগে কোনো সমস্যা হবে না। দীর্ঘক্ষণ আলোচনা। খুঁটিনাটি অনেক বিষয় কথা হলো। সারওয়ার সাহেব মোটামুটি রাজি হলেন। আমার ওপর দায়িত্ব পড়ল আলোচনা করে বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি ঠিক করা। বৈঠকে মোফাজ্জল সাহেবও উপস্থিত ছিলেন। এবার তাকে নিয়ে আলোচনা। মোফাজ্জল সাহেব নতুন পত্রিকায় যাবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, আগামী সপ্তাহে গ্রামে গিয়ে তার মায়ের সাথে আলোচনা করে জানাবেন। তারপর আলোচনায় এলো অফিস কোথায় হবে। মতিঝিল, ধানমন্ডি আর কারওয়ান বাজার এলাকাকে প্রাধান্য দিলেন সবাই। আন্তরিক আলোচনা ও সুস্বাদু নৈশভোজ শেষে পরের সপ্তাহে আবার আলোচনার দিনক্ষণ ঠিক করে বিদায় নিই। রাস্তায়ই বাবুল সাহেব ফোন দিলেন সকালে তার অফিসে যাবার জন্য। সেই রাতে সারওয়ার সাহেবের সাথে আর কোনো কথা হয়নি। পরদিন সকালে আবার সেনাকল্যাণ ভবন। বাবুল সাহেব আর আমি আলোচনা করি সারওয়ার সাহেবের বেতন-ভাতা আর অফিস নিয়ে। তিনি আমার কাছে জানতে চান, সারওয়ার সাহেবের সাথে রাতে আর কথা হয়েছে কি-না? আমি বলি, না। এবার জানতে চান, তিনি আসবেন তো? আমি বললাম তিনি নিজেইতো আপনাকে বলেছেন। কথা শেষ করে সেনাকল্যাণ ভবন থেকে বের হয়ে আমি ইত্তেফাকে যাই।

সারওয়ার সাহেব এরই মধ্যে এসে গেছেন অফিসে। পত্রিকার ফাইল নিয়ে বসছেন। আমি সামনে গিয়ে বসি। জানতে চাইলাম, এখন সামনে কীভাবে অগ্রসর হব। তিনি বললেন, বাবুল সাহেব সিরিয়াস তো? তুমি আরও বুঝ। সাতদিন সময় আছে। আমি বললাম, সকালে তার অফিসে গিয়েছিলাম। তিনি আপনার সাথে কথা বলে সব ঠিকঠাক করতে বলেছেন। আমি যতটুকু তাকে জানি, তিনি যা বলেন তা করেন। শুক্রবারের বৈঠকেই চুক্তি করতে চান। আপনার প্রত্যাশা জানতে চেয়েছেন। সারওয়ার সাহেব একটা ধারণা দিলেন। আর বললেন, পত্রিকায় সব নিয়োগ হবে কিন্তু সম্পাদকের পছন্দমতো। আমি বললাম, এসব বিষয়ে অসুবিধা হবে না। যাহোক পরদিন আবার বাবুল সাহেবের অফিসে। দু’জনের সঙ্গে কথা বলে বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি চূড়ান্ত হলো। এবার বললাম, পত্রিকার সাংবাদিকসহ সব নিয়োগ কিন্তু সম্পাদকের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বাবুল সাহেব জানান, তিনি একটি পিওনও দেবেন না। পত্রিকা চালাবেন সম্পাদক। বলেন, আমি চাই পত্রিকার প্রচার ও জনপ্রিয়তা। এখানে একটি কথা বলে রাখি, বাবুল সাহেব কিন্তু সারওয়ার সাহেবকে দেয়া এ কথা ঠিক রেখেছিলেন। পত্রিকার প্রতিষ্ঠাপর্বে তিনি কোনো সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য পাঠাননি।

শুক্রবারে আমাদের ফাইনাল বৈঠক। বৃহস্পতিবারের মধ্যে চুক্তিপত্র তৈরি করা হলো। সারওয়ার সাহেব যেভাবে বলেছেন সেভাবেই। কথামতো রাতে আবার বাবুল সাহেবের বাসায় যাই আমরা। মোফাজ্জল সাহেবও আছেন। বাবুল সাহেব তাকে জিজ্ঞেস করলেন, দেশে গিয়েছিলেন, আপনার মা’র সাথে কথা হয়েছে? মোফাজ্জল সাহেব বললেন, যেতে পারিনি। আগামী সপ্তাহে যাব। বাবুল সাহেব বললেন, আইসা যান ভাল হবে। একসাথে সবাই মিলে ভাল পত্রিকা করেন। বাবুল সাহেব ও সারওয়ার সাহেব দু’জনের মাঝে আমি বসা। বাবুল সাহেব চুক্তিপত্রটি আমার হাতে তুলে দিলেন। আমি সারওয়ার সাহেবকে দিলাম। তিনি মনোযোগ দিয়ে সবকিছু দেখলেন। পড়া শেষ করে কানে কানে আমাকে বললেন, আজকাল তো কোনো কোনো সম্পাদককে শেয়ার দেয়া হচ্ছে। আমাকেও কিছু শেয়ার দেয়া যায় কিনা। আমি একটু বেকায়দাই পড়লাম। কেননা এর আগে শেয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমি একটু চিন্তিত হলাম। দু’জনের কথার মধ্যে বাবুল সাহেব জানতে চান, সমস্যা কী, সারওয়ার ভাই কী বলেন? আরো কিছু করতে হবে? আমি খুলেই বললাম, এরইমধ্যে যেসব পত্রিকা বের হয়েছে এগুলোতে সম্পাদকদের কিছু শেয়ার দেয়া হয়েছে। এ-কথাই বলছেন সারওয়ার ভাই। সাথে সাথে বাবুল ভাই বললেন, ঠিক আছে। আপনি ঠিক করেন। এখনই ঠিক করেন। চুক্তিপত্রে লিখে দেন। আমি সই করে দিয়েছি। পরে সম্পাদককে কিছু শেয়ার দেয়ার শর্ত রেখে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হলো।

চলবে...

বইটি পড়তে হলে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার চোখ রাখুন ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ অনলাইনে।

বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন

আজিজ সুপার মার্কেট (তৃতীয় তলা), ঢাকা।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত