ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

সাইরেন আর কান্নার শব্দে মিলেমিশে একাকার চীন

সাইরেন আর কান্নার শব্দে মিলেমিশে একাকার চীন

লোকে বলে বেদনার রং নাকি নীল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কষ্ট বা বেদনার কোনও রং নেই। কারণ অনেক কষ্টে মানুষ তো কাঁদে, কান্নার কি কোনও রঙ আছে!

আজ শনিবার (৪ এপ্রিল) চীনে পালিত হয়েছে শোকদিবস। করোনায় মারা যাওয়া লোকজনের স্মরণে একদিনের জাতীয় শোক পালন করেছে দেশটি। দেশটিতে করোনায় মোট ৩৩৩৫ জন লোক মারা গেছে যাদের মধ্যে ১৩ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। তবে মৃতের প্রকৃত সংখ্রা আরও বেশি হবে বলেই ধারণা করছেন কেউ কেউ।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমবার শনাক্ত হয় নভেল করোনাভাইরাস। এটি ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ।

শোকদিবস উপলক্ষে শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় দেশের সবক’টি শহরজুড়ে শুরু হয় গগণ বিদীর্ণ সাইরেন। এসময় দেশের সবগুলো গাড়ি, ট্রেন এবং জাহাজ গতি বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়েছিল এবং সাইরেন দিচ্ছিলো। শনিবার সারাদিনের জন্য চীনে বন্ধ রয়েছে সব রকমের বিনোদন।

চীনের বার্ষিক কিংমিং সমাধিসৌধ পরিচ্ছন্নতা উৎসবের সঙ্গে মিল রয়েছে এই শোকদিবসটির। ওইদিন সাধারণত লাখ লাখ চীনা পরিবার তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় ও তাদের সমাধিসৌধ পরিষ্কার করে থাকে।

এই কিংমিং নামক শোক পালনের দিনটি নিয়ে চীনের প্রসিদ্ধ কবি দু মু’র একটি কবিতার লাইন হচ্ছে-‘শোক দিবসের কান্নার মতো ঝিরঝির ঝরে পড়ছে বৃষ্টি, যা ভ্রমণকারীদের হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করে দেয়।’

গত ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ যেই উহান নগরী থেকেই গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল করোনাভাইরাস, সেই উহানেও পালিত হয়েছে শোক। মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শনিবার সকালে দীর্ঘ ৩ মিনিট ধরে যানবাহনগুলোতে জ্বলেছে লালবাতি। এসময় শহরের ইয়াংজি নদীর ধারে জড়ো হওয়া লোকজন হাত দিয়ে তাদের চোখ ঢেকে রেখেছিল।

এই শোক পালন সম্পর্কে উহানের বাসিন্দা লুও কিয়াং বলেন, ‘আমাদের মানবজাতির জন্য এ ধরনের শোকদিবস খুব খুব জরুরি। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের স্মৃতিগুলো হৃদয়ে খোদাই করে রাখতে পারি।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ওই সাইরেন বাজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমরা নিজেদের ধরে রাখতে পারিনি। মহামারিতে স্বজনদের হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল আমাদের হৃদয়।’

আরও অনেকের মতোই মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে লুও কিয়াং এদিন পরেছিলেন সাদাকালো পোশাক।

শনিবার শোকদিবস উপলক্ষে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের তিয়েনিমিয়েন স্কয়ারের মাঝখানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছিল। আর শহরের চারদিক থেকে ভেসে আসছিল সাইরেনের শব্দ।

চীনের পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র চেংদুতে আগের রাতে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে শহরটিতে এক বিশ্রী পরিবেশ ছড়িয়ে পড়েছিল। আর এই বিষাদময় পরিবেশকে আরও ভারি করে তুলেছিল চৌরাস্তায় থেমে থাকা গাড়িগুলো থেকে ছড়িয়ে পড়া বিকট সাইরেনের শব্দ।

আর করোনায় যারা তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তাদের জন্য তো দিনটি ছিল আরও বিষাদময়। তবে চীন থেকে এখনও পুরোপুরি নির্মুল হয়নি করোনা। এছাড়া করোনা ঠেকাতে চীনা সরকার দেশে একাধিক লোকজনের জড়ো হওয়া নিষিদ্ধ করে যে আদেশ জারি করেছিল, সেটি এখনও বহাল রয়েছে। ফলে শোকদিবসে খুব বেশি মানুষ একত্রিত হতে পারেনি।

শোকদিবসে আগতদের একজন হলেন জিয়াও জিন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬ দিন আগে মারা গেছেন তার মা। এখনও ঘরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে মায়ের স্মৃতি।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমি যে কতবার কেঁদেছি তা গুণে শেষ করা যাবে না। কেঁদে কেঁদে আমার চোখের সব পানি শুকিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আজ যখন সাইরেন বাজানো বন্ধ হলো তখন আমি আবারও কাঁদতে শুরু করলাম। আমার তখন মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিল। মাকে ছাড়া আমি কীভাবে বাকি জীবন কাটাব বুঝতে পারছি না।’

আল জাজিরা অবলম্বনে মাহমুদা আকতার

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত