ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

সাক্ষাৎকারে নিপুণ রায় চৌধুরী

যেখানেই নির্যাতন সেখানেই রুখে দাঁড়াব

  কিরণ শেখ

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২১, ১১:২৯  
আপডেট :
 ২৭ জুন ২০২১, ১৭:৫৩

যেখানেই নির্যাতন সেখানেই রুখে দাঁড়াব
ফাইল ছবি

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে গঠিত নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই নেত্রী নারী ও শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জার্নালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কিরণ শেখ।

বাংলাদেশ জার্নাল: নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম যে লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছে, সেটা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে?

নিপুণ রায় চৌধুরী: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় এই ফোরামটি গঠিত হয়েছে। এই ফোরামটি সারাদেশে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে গঠন করা হয়েছে। সারাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিতির কারণে এবং জবাবদিহিতা না থাকার কারণে ক্ষমতায় অপব্যবহার করে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দ্বারা অনেক জায়গায় নারীরা নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে, কিন্তু তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। সেই সব দিক বিবেচনা করে এই ফোরামটি গঠন করা হয়েছে। আর প্রকৃত অর্থে অনেক সামাজিক সংগঠনগুলো এসব বিষয়ে মুখ খুলছে না। সেই কারণে সব কিছু বিবেচনা করে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একটি অরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন গঠন করেছেন। এই সংগঠনের মূল কাজ হচ্ছে, সারাদেশে যেখানে নির্যাতন ও নিপীড়ন হবে- সেখানেই আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

তিনি আরো বলেন, যারা (নির্যাতিত নারী ও শিশু) লিগ্যাল এইড চাইবে, আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদেরকে এটা দেবো। পাশাপাশি মেন্টাল সাপোর্ট, চিকিৎসার সাপোর্ট এবং আইনি পরামর্শও আমরা দেবো। তবে নারীরাও অনেক খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে, তাদেরকে কাউন্সিলিং করা এবং অসামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে তারা যাতে বিরত থাকে- এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, আমরা এগুলো করছি।

বাংলাদেশ জার্নাল: দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে এ পর্যন্ত আপনারা কি কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?

নিপুণ রায় চৌধুরী: যশোরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা দ্বারা এক নারী ধর্ষিত হয়। আমরা কিন্তু সরেজমিনে সেখানে গিয়েছিলাম। সর্ব প্রথম আমরা প্রতিবাদ জানাতে সেখানে গিয়েছি। আর এখন পর্যন্ত আমরা তার মামলাও পরিচালনা করছি। আর আমাদের আল্টিমেটামের পরে সেই ওসিকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়। নুসরাত হত্যা আপনারা জানেন, আমরা তার বাড়িতে গিয়েছি। সেখানেও আমরা লিগ্যাল এইড সাপোর্ট দিয়েছি। বিশেষ করে একটি হিন্দু নারীকে তার বাড়ি থেকে যুবলীগের এক নেতা জোরপূর্বক-ভাবে তুলে নিয়ে যায়। আমরা সেখানে গিয়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেই। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে নারী ধর্ষণ হয়েছেন, আমরা তার সঙ্গে এবং তার পরিবারের সাথে কথা বলে সব ধরণের সহযোগিতা করেছি। আর আমরা কাজ করছি বলেই সরকারও চাপ রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: নারী নির্যাতন বন্ধে আপনারা কি কোনো রোডম্যাপ করেছেন?

নিপুণ রায় চৌধুরী: বর্তমান রাষ্ট্র একটা অগণতান্ত্রিক সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত না। আর রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা আছেন তারাই যদি বিতর্কিত থাকেন তাহলে এই ধরণের ঘটনা সংগঠিত হবেই। এজন্য আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, সামাজিক আন্দোলনকে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া। এটা হবে সচেতনতার একটা রোডম্যাপ। এর মাধ্যমে নিজের ঘরের মেয়েকে কিভাবে নিজেরাই সুরক্ষা করতে পারবে, তা শেখানো হবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে মাদকের বিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মাদক বন্ধ করাও কিন্তু আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে এটা আমরা একা করলে হবে না। এজন্য সামাজিক সংগঠনগুলোকে এক সাথে আওয়াজ তুলতে হবে। আর সরকারেরও সদিচ্ছা থাকতে হবে। কারণ সরকার প্রশাসনকে বিরোধী দল ও ভিন্নমতকে দমন করার জন্য রেখেছে। এটা না করে যেখানে অত্যাচার ও নির্যাতন হবে, সেখানে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল: দেশে এ পর্যন্ত যত নারী ও শিশু নির্যাতন হয়েছে তার কোনো তালিকা কি আপনারা করেছেন। যদি করেন সেই তালিকা নিয়ে সরকারের সাথে আলোচনা করবেন কিংবা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরবেন কি না?

নিপুণ রায় চৌধুরী: এখনো তালিকা আমরা করি নাই। তবে আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংস্থার তালিকা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এগুলো মিলে আমরা ভবিষ্যতে একটি রোডম্যাপ দেবো। সেটার কাজ এখন হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে আপনারা রাজপথের আন্দোলনে যাবেন?

নিপুণ রায় চৌধুরী: আমরা কর্মসূচি দিয়েই তো কাজ করছি। আর আমরা নারী নির্যাতন বন্ধে যত কর্মসূচি রাজপথে দিয়েছি, তা অন্য কেউ দেয়নি। আর রাজপথে আন্দোলনের কারণে আমাদের বিশ্লেষণটা কম হচ্ছে। এরপরও আমরা গবেষণা করছি।

বাংলাদেশ জার্নাল: নারী ও শিশু নির্যাতন দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে, কি পদক্ষেপ নিলে এটা বন্ধ হবে?

নিপুণ রায় চৌধুরী: যে দেশে জনগণের কথা বলার ও ভোটের অধিকার থাকে না এবং মুক্ত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে না- সে দেশে নারীদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ন হবেই। মূলত একটা অগণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র অনুপস্থিতির কারণে এগুলো হচ্ছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের জনগণ যদি একটু সোচ্চার হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ঐক্যবদ্ধ হন এবং রাষ্ট্রে যদি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসে তাহলে এসকল সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধান হবে। সুতরাং এগুলো অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কারণে হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত