ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

সরকারবিরোধী আন্দোলনে দৃশ্যমান নেতৃত্ব চাই : মেজর জে. (অব:) ইবরাহিম

  মো. আকরাম হোসেন

প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২২, ১৮:১৪  
আপডেট :
 ১৩ আগস্ট ২০২২, ১৮:৩৭

সরকারবিরোধী আন্দোলনে দৃশ্যমান নেতৃত্ব চাই : মেজর জে. (অব:) ইবরাহিম
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (ফাইল ছবি)

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছেড়ে দেশের পক্ষে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেন, যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। সাহসিকতার জন্য পেয়েছেন বীর প্রতীক খেতাব। সৈয়দ ইবরাহিম ১৯৯৬ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন। এক-এগারোর রাজনৈতিক সঙ্কটের সময় ২০০৭ সালে ‘বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তামানে তিনি দলটির চেয়ারম্যান হিসাবে আছেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের এ দলটি ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ বর্জন করেছে। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন যাবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ জার্নালের সঙ্গে দেশের সমসাময়িক ও রাজনৈতিক বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন সৈয়দ ইবরাহিম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলাদেশ জার্নালের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. আকরাম হোসেন

বিডি জার্নাল: দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কীভাবে দেখছেন?

সৈয়দ ইবরাহিম: দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কোনোভাবেই শুভকর নয়। আশঙ্কা ও দুশ্চিন্তায় ভরপুর। জনগণের কষ্টের কোনো শেষ নেই। পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য, জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। নারীর সুরক্ষা একদম চলে গেছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে বলা যায় দেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। একনায়কতন্ত্রবাদী প্রক্রিয়ায় সরকার দেশের উপর নিয়ন্ত্রণ রেখেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশের উপর সরকার নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি, নিয়ন্ত্রণ নাই। প্রশাসন হয়ে গেছে আওয়ামী প্রশাসন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অপব্যাখ্যা দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অপবাস্তবায়ন করে সমস্যা সৃষ্টি করা হয়েছে। সব চেয়ে বড় সমস্যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশের সৃষ্টি, তার অন্যতম ছিল গণতন্ত্র। আমরা সেই গণতন্ত্র থেকে অনেক দূরে। অপরপক্ষে বাংলাদেশ একটি পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে। গত কয়েক বছরে এমন নীতি অনুসরণ করেছে, যার কারণে তিনটা ভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশকে চেপে ধরেছে। ভারত চেপে ধরেছে, চীন চেপে ধরেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেপে ধরেছে। তাদের স্বার্থ আর বাংলাদেশের স্বার্থ এক না হলে সমস্যা হতে বাধ্য।

বিডি জার্নাল: সংকট থেকে উত্তরণ কীভাবে আসবে?

সৈয়দ ইবরাহিম: সংকট থেকে উত্তরণে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হলে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা এ ধরনের সমঝোতায় বিশ্বাস করে না। তারা বিশ্বাস করে দেশটা একমাত্র তাদের। তাদের ব্যাখ্যায় মুক্তিযুদ্ধের ব্যাখ্যা, আর কোনো ব্যাখ্যা হতে পারে না। তাদের অর্থনৈতিক নীতিই একমাত্র নীতি, আর কোনো নীতি হতে পারে না। বর্তমান রাজনৈতিক সরকার একটি ‘স্পন্সর্ড’ সরকার। যেহেতু দেশের মানুষ ভোট দিতে পারে নাই, ভোট দেয়ার অধিকার নেই, সেহেতু এটা বিদেশের স্পন্সর্ড সরকার।

বিডি জার্নাল: বিদেশ বলতে কাকে বোঝাচ্ছেন?

সৈয়দ ইবরাহিম: ২০০৭-০৮ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে আমাদের তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ দেখা করতে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে যে কথা হয়েছে, তা আবার প্রণব মুখার্জির আত্মজীবনীর তৃতীয় খণ্ডে লেখা আছে। সেখানে দেখলে বোঝা যাবে কোন দেশ আমাদের দেশের রাজনৈতিক সরকারকে স্পন্সর্ড করে।

বিডি জার্নাল: আগামী নির্বাচন নিয়ে কল্যাণ পার্টির ভাবনা কী?

সৈয়দ ইবরাহম: কল্যাণ পার্টি বাংলাদেশের জাতীয় নেতৃত্বের অংশীদার হতে চায়। কল্যাণ পার্টি বিশ্বাস করে আমাদের গুণগত পরিবর্তন দরকার। এই পরিবর্তন একজন এমপি দিয়ে হবে না। এর জন্য অনেক এমপি লাগবে, ইনক্লুডিং বিএনপি অ্যান্ড তাদের মিত্রসহ। সবার সম্মত হতে হবে যে, আমরা রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চাই। নমিনেশন বাণিজ্য বন্ধ চাই, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার চাই। ৬৬ অনুচ্ছেদের বাস্তবায়ন চাই। নিরপেক্ষ সরকার পদ্ধতির প্রথা চাই। আর উপজেলাকে শক্তিশালী করতে হবে।

দুর্নীতি বন্ধ করতে চাইলে শুধুমাত্র দুর্নীতি কমিশনের উপর নির্ভর করে বসে থাকলে হবে না। তাদের একার পক্ষে এটা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এর জন্য একটি বৃহৎ আকারের মনিটরিং সিস্টেম করতে হবে। গত ৫০ বছরে দেশটা দুর্নীতির অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে। গত ১৪ বছরে এটা পরিপক্ব হয়েছে। দুর্নীতি ও দুর্নীতির প্রক্রিয়া গত ১৪ বছরে একবারে পরিপক্ব হয়ে গেছে। ১৬ কোটি মানুষের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দুর্নীতিবাজরা সম্পদের পাহাড় গড়ছে বিদেশে। এই প্রক্রিয়া বন্ধ হতে হবে। দুর্নীতির কারণেই আজ জ্বালানিরর সংকট, খাদ্য সংকট। দুর্নীতির কারণেই আমাদের গণতন্ত্র নাই।

বিডি জার্নাল: বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে নতুন করে কোনো রাজনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে?

সৈয়দ ইবরাহিম: আমরা তো সংকটের ভিতরেই আছি। নতুন করে আর কী সংকটের সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে অনির্বাচিত সরকারের মধ্যে রয়েছি। নতুন কিছু তো নাই। এই সরকার তো নির্বাচিত নয়, সরকারের সাহস থাকলে বুকে হাত নিয়ে বলত, তারা তো বলতে পারছে না। একটি অগণতান্ত্রিক সরকারের জন্য আর সংকট কী। কিন্তু এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে এই অগণতান্ত্রিক সরকারের বৈধতা দেয়া যাবে না। বলতেই হবে এটা অবৈধ সরকার। ২০১৮ সালের নির্বাচনে গিয়ে ভুল করেছে বিএনপি ও জোট।

বিডি জার্নাল: বিএনপি একটি বৃহত্তর জোট করতে কাজ করছে, আপনার সঙ্গেও সংলাপ করেছে। জোটের প্রক্রিয়া কেমন হবে?

সৈয়দ ইবরাহিম: জোটের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে কিছু জানি না। জোটের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বিএনপি এখনো কিছু বলেনি। যখন বলবে তখন আপনাদের বলব।

বিডি জার্নাল: জোট নিয়ে আপনি কতটুক আশাবাদী?

সৈয়দ ইবরাহিম: সকল দল মিলে যদি চেষ্টা করি তাহলে একটা ফল আশা করা যায়। নিশ্চুপ বসে থাকলে তো আর ফল আশা করা যাবে না।

বিডি জার্নাল: জোটের শীর্ষ নেতা কে হবেন?

সৈয়দ ইবরাহিম: কিছু জানি না।

বিডি জার্নাল: আপনাদের প্রস্তাব কী?

সৈয়দ ইবরাহিম: আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে দৃশ্যমান নেতৃত্ব চাই। এবং সম্মিলিত নেতৃত্ব চাই। একজন পেরে উঠবে না। সে জন্য এখানে নেতৃত্বের একটি কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

বিডি জার্নাল: জোটে জামায়াতের ভূমিকা কেমন হবে?

সৈয়দ ইবরাহিম: আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। এজন্য উত্তর দিতে পারছি না।

বিডি জার্নাল: জামায়াতের সঙ্গে আপনার সুসম্পর্কের কথা শোনা যায়...

সৈয়দ ইবরাহিম: ২০ দলীয় জোটে কল্যাণ পার্টি ও জামায়াত রয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ২০ দলীয় জোটের অংশীদার হিসাবে। তারা একটি শক্তিশালী দল। তাদের জনসংখ্যা আছে, প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী আছে। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে তাদের কী সম্পর্ক সে ব্যাপারে আমার কিছু জানা নাই।

বিডি জার্নাল: বিএনপি থেকে আপনাদের সঙ্গে কে যোগাযোগ করছে?

সৈয়দ ইবরাহিম: ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী হিসাবে নজরুল ইসলাম খান যোগাযোগ করে। বৃহত্তর ঐক্যের সংলাপে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যোগাযোগ করেছেন। আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরী, জহিরউদ্দিন স্বপন থাকছেন।

বিডি জার্নাল: নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কী?

সৈয়দ ইবরাহিম: এখন পর্যন্ত এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো না বলে সিদ্ধান্ত আছে। সরকার যদি তার মতিগতি বদলায়, তার আচরণ বদলায়, সরকার যদি অঙ্গিক বদলায় তখন আবার সাক্ষাৎকার নিতে আসবেন, তখনকার সিদ্ধান্তের কথা তখন জানাবো।

বিডি জার্নাল: এই মুহূর্তে দেশের মানুষের কাছে আপনার বক্তব্য কী?

সৈয়দ ইবরাহিম: তিনটি কথা বলতে চাই-

এক. মানুষ গুম হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে। নারীর সুরক্ষা নাই। টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, লুট হয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের বাঁচিয়ে দেয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু এই বাংলাদেশ চায়নি। এই বাংলাদেশের জন্য দায়ী বঙ্গবন্ধুর কন্যা।

দুই. মুক্তিযুদ্ধে যে চাওয়া-পাওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের যে চাওয়া-পাওয়া। সেটা এই সরকার অ্যাড্রেস করতে পারেনি। এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের তালিকা, রাজাকারদের তালিকা সব এলোমেলো করে ফেলেছে।

তিন. এই সরকার মারাত্মক ভুল করে ফেলছে। তারা তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতি বিমুখ করে ফেলেছে। যুব সমাজকে বিরাজনীতিকরণ করে ফেলেছে। আমি তার প্রতিবাদ করি। যারা ভালো যুবা, ভালো তরুণ, যারা প্রবীণ তারা যদি রাজনীতিতে মনোযোগ না দেন তাহলে অবশ্যই মন্দ লোক মনোযোগ দেবে। চেয়ার আর প্রক্রিয়া তো বন্ধ থাকবে না, খালি থাকবে না। এটা দেশের জন্য অশনিসংকেত। আমরা শ্রীলঙ্কা হতে চাই না।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত