খালেদাকে মুক্ত করতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০১৯, ১৪:৪২ আপডেট : ০৬ মার্চ ২০১৯, ১৫:০৬
খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে সংগঠনকে শক্তিশালী করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বিএনপি আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এ আহ্বান জানান। দুপুর সাড়ে ১২ থেকে কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১২ টায় মানববন্ধনে দাঁড়ান নেতাকর্মীরা। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন মির্জা ফখরুল।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে আমাদের প্রথম কাজ, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। সেজন্য আইনী লড়াই হবে এবং এর সঙ্গে আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করে জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে ও সকল দলকে ঐক্যবদ্ধ করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, আজকে আমাদের সময় এসেছে, জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে, সংগঠনকে শক্তিশালী করে, দুর্বার অন্দোলন গড়ে তুলে বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য করবো।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম জিয়া অসুস্থ। চিকিৎসা পাওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সেই অধিকার তিনি পাচ্ছেন না। তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আর বর্তমান অবৈধ সরকার বেআইনীভাবে তাকে কারাগারে আটকে রেখেছে। আমরা সবাই জানি, যে মামলাগুলোতে বেগম জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রত্যেকটিতে তিনি জামিনযোগ্য। কিন্তু তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে একটার পর একটা মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, এই আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছিল। আজ তারই আয়োজন তারা সম্পূর্ণ করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারের আমলে ৭৮ হাজারের ওপরে মামলা দেওয়া হয়েছে এবং আসামির সংখ্যা ২৫ লাখের ওপরে! এভাবেই এই দখলদার সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে।
মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মন্ত্রীরা যদি অসুস্থ হয় বিদেশ থেকে ডাক্তার আসে। আর কিভাবে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তা আমরা দেখেছি। আর আমাদের নেত্রী দেশেই চিকিৎসার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে ন্যুনতম চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে আমরা অনেক চেষ্টা করছি। কিন্তু তারপরও তাকে মুক্তি করতে পারি নাই। কারণ সরকারের হিংসা নীতির কারণে বেগম জিয়াকে বের করতে পারছি না। তবে তার মুক্তি আসবে রাজপথে। তাই আন্দোলনের ছাড়া কোন বিকল্প নাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের আশু রোগ মুক্তির কামনা করে বলতে চাই। উনার যেমন চিকিৎসা পাওয়া অধিকার আছে... উনাদের এক নেতা বললেন, কাদের সাহেব ও খালেদা জিয়া এক নয়। আমরা বলতে চাই, বেগম জিয়ার কোন ক্ষতি হলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খাস বলেন, বেগম জিয়া আজকে কারাগারে। কোন বিচারিক কারণে নয়, রাজনৈতিক কারণে তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের সকল মানুষকে বন্দি রাখা হয়েছে। গণআন্দোলনের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে মুক্তি করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বেগম জিয়াকে জেলে রেখে গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার কোন সুযোগ নাই। আর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে পেতে হলে গণতন্ত্রের মাকে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে পেতে হবে।
এর আগে মানববন্ধন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে সমবেত হতে দেখা গেছে। এসময় তারা মুক্তি মুক্তি চাই খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে, খালেদা, জিয়া, তারেক, রহমানসহ বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তোলেন।
অপরদিকে বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিকে কেন্দ্রে করে প্রেসক্লাবের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।।
বাংলাদেশ জার্নাল/কেএস/জেডআই
