ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

মহামারির নাম হাসি: হাসতে হাসতে ‘খুন’

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২১, ১৭:০৩

মহামারির নাম হাসি: হাসতে হাসতে ‘খুন’
ফাইল ছবি

বিশ্বজুড়ে এখন চলছে করোনা মহামারি। প্রতিদিনই এ মহামারিতে আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। এছাড়া আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে কয়েক হাজার মানুষ। কিন্তু মহামারি যে শুধু রোগ থেকে হয় এমন কিন্তু না। আমাদের অনেকের হয়তো অজানা যে হাসি থেকেও মহামারি সৃষ্টি হতে পারে।

হাসি মানেই কি শুধু খুশি? খুশিতে মানুষ হাসেন ঠিকই, প্রকৃতপক্ষে হাসি মানেই কিন্তু খুশি নয়। একটি অসুখের নামও কিন্তু হাসি । করোনা আবহে অতিমারি এবং মহামারি শব্দ দু’টির সাথে আমরা সবাই পরিচিত হয়েছি। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, হাসিও নাকি একবার মহামারির আকার নিয়েছিলো!

১৯৬২ সালে হাসি নামক মহামারিতে তানজানিয়ার কাশাশা গ্রাম আক্রান্ত হয়েছিলো। একের পর এক মানুষ বিনা কারণেই যেন হেসে খুন! পরিস্থিতি এমনই তৈরি হয়েছিলো যে সামনের জনকে হাসতে দেখে উপস্থিত সবাই হাসতে শুরু করছিলেন। কেউই যেনো থামতে পারছিলেন না। এই মহামারি বিশ্বজুড়ে পরিচিত ‌‘টানগানইকা লাফটার এপিডেমিক’ হিসাবে। তানজানিয়ার আগে নাম ছিলো টানগানইকা। সেই সময় জাঞ্জিবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলো তানজানিয়া। উগান্ডার সীমান্তে অবস্থিত তানজানিয়ার কাশাশা গ্রামের একটি স্কুল থেকে এই মহামারির সূত্রপাত হয়েছিলো ।

১৯৬২ সালের ৩১ জানুয়ারি মাসে কাশাশার একটি বোর্ডিং স্কুলের ৩ ছাত্রীর মধ্যে প্রথম এই সংক্রমণ দেখা যায়। তারা বিনা কারণে হাসতে শুরু করে। তাদের থেকে দ্রুত স্কুলের বাকি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এই সংক্রমণ। অল্প সময়ের মধ্যেই স্কুলের ৯৫ জন শিক্ষার্থী, যাদের বয়স ছিলো ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে, সবাই সংক্রামিত হয়ে পড়ে এই রোগে।

তবে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে বা অন্যান্য কর্মীদের মধ্যে এই রোগ ছড়ায়নি। রোগটি শুধুমাত্র ছড়িয়ে পড়েছিল ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের মধ্যেই। তবে সংক্রমণ আটকাতে একটা সময় স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এতেও বেশি একটা কাজ হলো না। কারণ সেখান থেকে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে নসাম্বা নামে একটি গ্রামের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। জানুয়ারিতে শুরু হওয়া রোগটিতে ৪-৫ মাসের মধ্যে ২১৭ জন আক্রান্ত হন।

এদিকে কাশাশা গ্রামের স্কুলটি আবার চালু হয় মে মাসের ২১ তারিখে। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই আবার তা বন্ধ হয়ে যায় পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায়। তারপর আবার বুকোবার নামের পাশের গ্রামের কাছে আরও একটি স্কুলেও ছড়িয়ে পড়ে রোগটি। ৪৮ জন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয় সেই স্কুলের।

আক্রান্তরা টানা ১৬ দিন ধরে শুধু হাসতেই থাকত। এভাবে ১৮ মাস চলতে থাকে। তারপর আর কারো মধ্যে অকারণে হাসির বাড়াবাড়ি দেখা যাচ্ছিলো না। কিন্তু তখন অন্য এক লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। আচমকা জ্ঞান হারানো, শ্বাসকষ্ট, শরীরে র্যাশ হওয়া, হঠাৎ হঠাৎ কেঁদে ওঠা, পরক্ষণেই আবার ভয়ে আর্তনাদ করা, হাসি- আক্রান্তদের মধ্যে এবার এই সমস্ত লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে।

তবে সস্ত্বির কথা হলো, এই রোগে কারো মৃত্যু হয়নি। সব মিলিয়ে তানজানিয়ার মোট ১৪টি স্কুলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিলো। এক হাজার জন সংক্রমিত হয়েছিলো।

কী রোগ এটি? তানজানিয়ায় কেন তা ছড়িয়ে পড়েছিল। এর কারণ সামনে আনেন ইন্ডিয়ানার পারডিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক। তিনি গবেষণায় দাবি করেছিলেন যে, এই রোগে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন মনের উপর অত্যধিক চাপের কারণে।

দেশটি সবে মাত্র স্বাধীন হয়েছিল সে সময়। যা ছিলো স্বাধীনতা আনন্দের, চাপমুক্তি। কিন্তু সেই সময় খুব মানসিক চাপ বেড়ে গিয়েছিলো দেশের শিক্ষার্থীদের উপর। কারণ অভিভাবক এবং শিক্ষকদের অতিমাত্রায় আশা বেড়ে গিয়েছিল শিক্ষার্থীদের প্রতি দেশ স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথে। গবেষণায় বলে মনে করা হয় মূলত সে কারণেই এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিলো তাদের মধ্যে। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

বাংলাদেশ জার্নাল/এনআর/আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত