ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

মৃত্যুকে মুঠোয় নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:০৬  
আপডেট :
 ২২ নভেম্বর ২০১৭, ২০:৩২

মৃত্যুকে মুঠোয় নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কি পেলাম কি পেলাম না সেই হিসাব মেলাতে আসিনি। কে আমাকে রিকগনাইজ করল কি করল না সেই হিসাব আমার নাই। আমার একটাই হিসাব, এই বাংলাদেশের মানুষ। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে কতটুক কাজ করতে পারলাম সেটাই আমার কাছে বড়। সংসদ নেতা বলেন, আমি মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে জীবনকে বাজী রেখে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব কথা বলেন। নিজের কাজ সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৮ ঘণ্টা ১৪ বা ১২ ঘণ্টার হিসাব নাই। অনেক সময় এমনও দিন যায় রাতে ৩ ঘণ্টা থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারি না।

প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম সম্প্রতি পিপলস এ্যান্ড পলিটিক্স নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণা রিপোর্ট সংসদে তুলে ধরে বলেন, ওই রিপোর্টে সৎ সরকার প্রধান হিসেবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাবিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। আর সারা পৃথিবীর মধ্যে কর্মঠ সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ স্থান অর্জন করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চান।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, যাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাদের দেশে জনসংখ্যা কত? আর আমার দেশের জনসংখ্যা কত? এইটা যদি তারা একটু তুলনা করতেন তাহলে হয়তো অন্য হিসাবটা আসতো। দ্বিতীয় কথা আমাদের এই ছোট্ট ভূখণ্ড ৫৪ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে ১৬ কোটির ওপর মানুষ বসবাস করে। তার ওপর আবার জরিপে ১, ২, ৩, ৪ নম্বরে যারা আছেন তাদের কিন্তু জীবনে বাবা-মা ভাই বোন আপনজনকে হারাতে হয়নি। বা অত্যাচারিত নির্যাতিতও হতে হয়নি। জেলের ভাতও খেতে হয়নি, মিথ্যা মামলায়ও জর্জরিত হতে হয়নি। আমাদের দেশের পরিবেশটা একটু আলাদা। আমরা যত ভালই কাজ করি না কেন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা, মিথ্যা প্রবাদ দেয়ার চেষ্টা করা। জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করা এমনকি বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া। এখানে একজনও কিন্তু গ্রেনেড হামলার শিকার হয়নি। ৭৬ কেজি বোমা দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়নি। বার বার আমার জীবনের উপর যে আঘাত এসেছে এরকম যদি একবারও হতো তাহলে অনেকেই ঘরে বসে যেতেন। কিন্তু আমি মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে জীবনকে বাজী রেখে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে নিজের জীবনে অর্থ সম্পদ টাকা পয়সা কি আছে না আছে ও নিয়ে আমি কখনো চিন্তাও করি না। ওটা নিয়ে আমার কোন দু:চিন্তা নাই। আল্লাহ জীবন দিয়েছে জীবন তো চলেই যবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে কিন্তু বাবা, মা, ভাই, বোনকে হারিয়ে বিদেশে রিফুইজি হয়ে থাকতে হয়েছে। যাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাদের এ অভিজ্ঞতা নাই। যারা এই জরিপ করেছেন তারা যদি এই বিষয়গুলো একটু বিবেচনা করতেন হয়তো রেজাল্ট অন্য রকমও হতে পারতো। এটাও ঠিক। আমাদের যে প্রতিকূল অবস্থা, এই প্রতিকুল অবস্থার মধ্য দিয়ে তাদের চলতে হয়নি। আমাদের দেশে কখনো ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল না। প্রতিবারই বাধা এসেছে। আবার আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে। আন্দোলন করতে হয়েছে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। সেই গণতন্ত্র চর্চার মধ্য দিয়েই কিন্তু আজকে দেশের উন্নতি। এই ১৬ কোটি মানুষ মাত্র ৫৪ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে যদি অন্য রাষ্ট্র প্রধানদের দেশ চালাতে হতো তাদের অবস্থা যে কি হতো সেটা বোধ হয় আপনারা চিন্তাও করতে পারেন।

নিজের কাজ সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৮ ঘণ্টা ১৪ বা ১২ ঘণ্টার হিসাব নাই। অনেক সময় এমনও দিন যায় রাতে ৩ ঘণ্টা থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারি না। তাও পারি কি না সন্দেহ। যখনই কাজ আসে সেটা করে যাই। কেন করি? মনের টানে কাজ করি। তিনি বলেন, আমার বাবা দেশটা স্বাধীন করে গেছেন। তার একটা স্বপ্ন ছিলো ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। সেই জন্য তিনি স্বাধীন দেশের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে তাকে জীবন দিতে হয়েছে। আমার একটাই চ্যালেঞ্জ, যে কাজটা আমার বাবা করে যেতে পারেননি সেই অধরা কাজটা আমি সম্পন্ন করে যেতে চাই। দেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তবুও বলবো যারা হিসাব নিকাশ করেছেন তারা তাদের মত করেছেন। এজন্য ধন্যবাদ।

সরকারের দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেদেশে মিলিটারি ডিক্টরশিপ চলে, যে দেশে গণতন্ত্রের অভাব থাকে, যেদেশে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব থাকে সেই দেশে দুর্নীতিটা শেকড় গেঁড়ে যায়। সেই শিকড় উপড়ে ফেলা কঠিন হয়ে যায়। ৭৫’ পর থেকে ২১টা বছর এই অবস্থাই বিরাজমান ছিল। এরপর আবার ২০০১-২০০৮ পর্যন্ত এই অবস্থা। তো ওই রকম একটা অবস্থা আমার লিগেসিটা কি আমি উত্তরাধিকার সূত্রে কি পেলাম। পেয়েছি মিলিটারি ডিকটেটর মিলিটারি রুলস অনিয়ম অবিচার অত্যাচার সেগুলি যার কারণে এই দুর্নামের এখনো ভাগীদার হতে হচ্ছে। তবে হ্যাঁ আমি নিজে সততার সঙ্গে দেশ চালাতে চেষ্টা করছি। আর একটা কথা মনে রাখবেন মাথায় পচন ধরলে সারা শরীরেই ধরে। যেহেতু মাথায় পচন নাই শরীরের কোথাও যদি একটু ঘা টা থাকে ওগুলো আমরা সেরে ফেলতে পারবো। সেটা পারবো। ওই রকম যদি দুর্নীতি হতো তাহলে দেশের জিডিপি ৭.২৮ ভাগে উন্নীত হত না। ওই রকম দুর্নীতি যদি হতো মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত হতো না। এত রাস্তাঘাট, এত বড় বড় জিনিস আমরা তৈরি করেছি। এত অল্প সময়ের মধ্যে সেটা করতে পারতাম না। এই দুর্নীতিকে চ্যালেঞ্জ করেই পদ্মা সেতু তৈরি করছি। সেই চ্যালেঞ্জ দিতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে সততাই শক্তি, সততাই জোর সেটা প্রমাণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধন সম্পদ চিরদিন থাকে না। মানুষকে মরতে হয়। সব রেখে চলে যেতে হয়। তবু মানুষ অবুঝ। সম্পদের লোভে মানুষ অস্থির হয়ে পড়ে। এটা মানুষের একটা প্রবৃত্তি।

মিয়ানমারে হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের অন্যতম:

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা/আরাকানের মুসলমানদের ওপর পরিচালিত হত্যাযজ্ঞসহ সকল কর্মকান্ড পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের অন্যতম। মিয়ানমারে পরিচালিত হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষিতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত লাখো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় প্রদানের ফলে আমাদের উদ্যোগ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন ও তাদের অধিকারের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠিত হয়েছে। এ সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে হওয়ায় মিয়ানমারকেই এ সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিককে নিরাপদে ও সসম্মানে স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী জানান, অসহনীয় নির্যাতন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গঠন ও মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য কূটনৈতিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিজ দেশে নাগরিক হিসেবে বসবাসের অধিকার এবং নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের জোর প্রচেষ্টা চালানোর ফলে রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে আজ বিশ্ব জনমত গঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়টি আজ সকলের দাবি। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকেও সকল রাষ্ট্র কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের পক্ষে মত প্রদান করেছে এবং সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণে মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরকালে আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এ সময়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সংলাপ ও আলোচনায় পক্ষপাতহীন সহযোগিতার আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। মিয়ানমারের নাগরিকদের স্বদেশে নিরাপদে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিকভাবে সকলের প্রত্যাশার অংশ। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দু’পক্ষেই প্রত্যাবাসন চুক্তি দ্রুত সম্পাদন এবং নভেম্বরের মধ্যে ’জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনে সম্মত হয়েছে।

জেকে/জেডএইচ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত