ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

হাত ধরে হাঁটা: ঢাবিতে ছাত্রীকে পেটাল ছাত্রলীগ

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০১৮, ০৯:০০  
আপডেট :
 ১৫ জুলাই ২০১৮, ১১:৩২

হাত ধরে হাঁটা: ঢাবিতে ছাত্রীকে পেটাল ছাত্রলীগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে দিনের বেলায় জনসম্মুখে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি ও ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল শাখা ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। পরস্পর হাত ধরে হাঁটাকে কেন্দ্র করে একই বিভাগের ওই দুই শিক্ষার্থীকে দুই দফা মারধর করে তারা। শনিবার (১৪ জুলাই) বিকালে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী আসাদুজ্জামান এবং লীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্তরা ঢাবির মাস্টার’দা সূর্যসেন হলের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি ঘটনা করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে আসাদ এবং লীনা কার্জন হলে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ভবনের সামনে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময় ১০-১২জন ছাত্র তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। তারা ওই দুই শিক্ষার্থীর কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিনা তা জানতে চান ও প্রমাণস্বরুপ আইডি কার্ড দেখাতে বলেন। তারা তাদের আইডি কার্ড দেখান। তা সত্ত্বেও একাধিক শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামানকে মারধর করে। এসময় তার সঙ্গে থাকা লীনা তাকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।

এসময় ছাত্রলীগ কর্মীরা উক্ত ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। মারধরের পর মারধরকারীরা পরে সূর্য সেন হলের ভেতরে প্রবেশ করেন। এসময় তাদের পরিচয় জানতে আসাদ্জ্জুামানও হলে প্রবেশ করেন। এই পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীকে স্টাম্প দিয়ে মারধর শুরু করা হয়। তার সঙ্গে থাকা ছাত্রী লীনা রক্ষা করতে গেলে তাকেও স্টাম্প দিয়ে মারা হয়। গাছের ডাল দিয়ে লীনাকে বেদম প্রহার করা হয়। মারধরের এক পর্যায়ে ওই ছাত্রীর পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ উঠে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। পরে রাত পৌনে দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল এসে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শোনেন। তিনি ভুক্তভোগীদেরকে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর একটি দরখাস্ত লিখতে বলেন। আহত ওই দুই শিক্ষার্থীকে তিনি চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে প্রাথমিকভাবে মারধরকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। এরা হলেন, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের সিফাত উল্লাহ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আলে ইমরান পলাশ, ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের তাহমীল হাসান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আরাফাত হোসাইন অভি এবং সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের জীম। এরা সবাই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পলাশ ঘটনা জানেন না বলে জানান। তবে হল ছাত্রলীগের পদধারী এক নেতা জানান, সিফাত উল্লাহ ঘটনাস্থলে ছিলেন।

এ বিষয়ে নাহিদ হাসান শাহীন সাংবাদিকদের বলেন, যারা এ কাজ করেছে তাদের শনাক্ত করা হবে।

ভুক্তভোগী লীনা এবং আসাদুজ্জামান বলেন, দিনের আলোতে এমন হামলার কারণ আমাদের জানা নেই। আর নিজ ক্যাম্পাসে এমন হামলার শিকার হবো তা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। তাহলে ক্যাম্পাসে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? আমাদের কে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে মারা হয়েছে, আমরা এর বিচার চাই।

এদিকে, এ ঘটনায় সূর্য সেন হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক তারিক জিয়াউর রহমান সিরাজীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে অন্য দুই জন হলেন হলের আবাসিক শিক্ষক মো. আব্দুল মোমেন এবং মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বাহলুল। তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। অভিযোগ সাপেক্ষে এবং প্রক্টরের পরামর্শে হলের সিসি টিভির ফুটেজ দেখে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে। আমরা চাই ভবিষ্যতে যেন ঢাবি ক্যাম্পাসে এমন ঘটনা না ঘটে।

প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত