ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্র্যাঙ্ক কলের নামে হচ্ছেটা কী?

  কামরুল ইসলাম

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৫:১৫  
আপডেট :
 ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:৪৬

প্র্যাঙ্ক কলের নামে হচ্ছেটা কী?

বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম রেডিও। দিনভর অবিরাম এই মাধ্যমে চলমান থাকে নানান অনুষ্ঠান। দেশে বর্তমানে এক ডজনের বেশি রেডিও স্টেশন রয়েছে। এগুলোর কাজ হচ্ছে শ্রোতাদের বিনোদিত করার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রেডিও স্টেশনগুলোতে কিছু উদ্ভট অনুষ্ঠানের প্রচলন হয়েছে। যেগুলোতে শ্রোতারা বিনোদিত হবেন তো দূরে থাক, উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন!

বিষয়টা একটু বিস্তারিত বলা যাক। বছর দেড়েক আগে স্পাইস এফএম নামক একটি রেডিও স্টেশনের এক আরজের (রেডিও জকি) অশ্লীল গানের সঙ্গে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিমা নিয়ে তোলপাড় হয়। শোবিজজুড়ে বিতর্কের ঝড় বয়ে যায়। কিন্তু থেমে যায়নি সেই আরজে কিংবা তার মতো আরও অনেক আরজে’র উশৃঙ্খল সঞ্চালনা।

সম্প্রতি রেডিও চ্যানেলগুলোতে একটি অনুষ্ঠানের প্রচলন হয়েছে। সেখানে সঞ্চালকরা শ্রোতাদের ফোন করে (প্র্যাঙ্ক কল) নানান উদ্ভট কথা বলেন। শুধু তাই নয়, তাদের এমন আচরণে শ্রোতারা হরহামেশা বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ হন।

একটি উদাহরণ টেনে বলা যায়, স্পাইস এফএম থেকে আরজে তাজ নামক একজন সঞ্চালক সেলিম আহমেদ নামের এক ব্যক্তিকে ফোন করেন। রিসিভ করার পর সেই ব্যক্তিকে বলা হয়, গত সপ্তাহে আপনার স্ত্রীর যে বাচ্চা ডেলিভারি হয়েছে, আমি সেই হাসপাতাল থেকে বলছি। আপনাদের কাছে এখন যেই বাচ্চাটি রয়েছে, সেটা আপনাদের না। বাচ্চা বদল হয়ে গেছে। এজন্য আপনাদের আমরা বেশ মোটা অংকের টাকা দেবো। আর বাচ্চাটি আপনারা ফেরত দিয়ে যান।

আরজের এমন সাবলিল কথাগুলো শুনে আকাশ থেকে পড়লেন সেই দম্পতি। সেলিম নামের লোকটি হন ক্ষুব্ধ আর তার স্ত্রী তো রীতিমত কান্নাকাটি শুরু করে দেন। এমনটাই স্বাভাবিক। কারণ একমাত্র সন্তানকে নিয়ে এমন আজগুবি কথা শুনলে যে কারোর মাথা এলোমেলো হয়ে যাবে। এই প্র্যাঙ্ক কলের ভিডিওটি নিয়ে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।

শুধু এই ঘটনাই নয়, এমন আরও অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। রেডিও চ্যানেলগুলোর ইউটিউব চ্যানেলে গেলেও সেই প্র্যাঙ্ক কলগুলোর ভিডিও পাওয়া যায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যেই রেডিও স্টেশনগুলো শ্রোতাদের বিনোদন দেয়ার জন্য, দিনভর কর্মক্লান্তি দূর করার জন্য কাজ করার কথা, তারাই শ্রোতাদের হয়রানি করছে কোন অধিকারে?

বিষয়টি নিয়ে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বেসরকারি রেডিও স্টেশন রেডিও টুডে’র সিনিয়র আরজে এবং হেড অফ প্রোগ্রাম টুটুল জহিরুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, শ্রোতাদের বিনোদন দেয়ার জন্যই তো আমাদের সব আয়োজন। কিন্তু এর বদলে তাদের হয়রানি করার মানে হয় না। সুস্থ ধারার রেডিও-টেলিভিশন কিংবা সঞ্চালকরা এই ধরণের কাজ করেন না। যারা করেন, তারা বেশি দিন টিকতেও পারেন না।

তিনি আরও বলেন, শুধু রেডিওর প্র্যাঙ্ক কলের কথাই বলবো না, এর আগে থেকেই এই প্র্যাঙ্ক শব্দটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। ফেসবুক-ইউটিউবে প্র্যাঙ্ক ভিডিও করে ছেড়ে দিচ্ছে অনেকে। এগুলোর কারণে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। মানুষকে হয়রানি করার কোনও অধিকার তো তাদের নেই। তাই এসব প্র্যাঙ্ক যতটা সম্ভব প্রতিরোধ করা উচিত।

কিভাবে এই প্র্যাঙ্ক নামের হয়রানি বন্ধ করা যায়? সেই বিষয়ে টুটুল বলেন, এর জন্য প্রয়োজন ভালো কাজের বেশি বেশি প্রচারণা। যারা সুস্থ ধারার বিনোদন দিয়ে যাচ্ছে, নিরলস কাজ করে যাচ্ছে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে, তাদের নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। গণমাধ্যমগুলোতে কেবল মন্দটা নয়, ভালোটাও তুলে আনা দরকার। তাহলে মানুষ ভালো অনুষ্ঠান পাবেন এবং ভালোর দিকে আকৃষ্ট হবেন। ফলশ্রুতিতে এসব উদ্ভট অনুষ্ঠানগুলোও হারিয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে আরও একটা বিষয় বলে রাখা ভালো, মিডিয়ার এজেন্সিগুলো কিন্তু এই ব্যাপারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কারণ তারাই নিজ থেকে অনেক কিছু নির্ধারণ করে দেয়। যার ফলে বাধ্য হয়েও অনেক মিডিয়া কর্মী সস্তা বিনোদনের নামে এসব মানহীন অনুষ্ঠান করেন।

এদিকে কিছু দিন আগেই তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেয়া হয় যে, কোনও ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষাকে বিকৃত করে ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষ করে রেডিও-টেলিভিশনের অনুষ্ঠানগুলোতে এই ভাষা বিকৃতি বেশি দেখা যায়। তবে বর্তমান নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক সঞ্চালককে শুদ্ধ এবং প্রমিত বাংলায় কথা বলতে হবে। কিন্তু সেই নিয়মেরও তোয়াক্কা করছেন না অনেকেই। এখনও কানে হেডফোন লাগিয়ে কোনও রেডিও চ্যানেল চালু করলে কিংবা টেলিভিশন চালু করলে এমন সঞ্চালনা শোনা যায়, যেখানে বাংলা নয়, ইংরেজির জয়জয়কার। এতে করে সাধারণ দর্শক যেমন রুচি হারাচ্ছেন, তেমনি প্রাণের বিনিময়ে অর্জন করা বাংলা ভাষার অবমাননা হচ্ছে।

এই বিষয়টি নিয়ে টুটুল বলেন, যখন থেকে আমাদের দেশের টেলিফিল্মের মতো নাটকে ‘খাইসি, পাইসি’র মতো শব্দ এসেছে, তখন থেকেই এই ভাষা বিকৃতির মাত্রা অধিক হারে বেড়েছে। কারণ তারকারা যখন বিকৃত ভাষায় কথা বলেন, তখন সেটা সাধারণ মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই বিষয়েও আমার একটাই কথা, শুদ্ধ-সুন্দরভাবে এখনও অনেকেই অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন, সুস্থ ধারার বিনোদন এখনও অনেকেই দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের নিয়ে বেশি প্রচারণা হোক। তাহলেই এই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।

কেআই/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত