ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘ওরা জানে, ওদের বাবা একা ভয় পায়’

  বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০১৮, ১৭:১০

‘ওরা জানে, ওদের বাবা একা ভয় পায়’

দু’টুকরো মুরগীর মাংস আর ভাত দেয়া হলো খাবারে। ভুনা মাংসে ঝোল নেই, আমি আবার শুকনো খাবার খেতে পারিনা। শাওনকে ডালের কথা বলবো কিভাবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। পরে কাঁচা লবন চেয়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। প্রতি লোকমা ভাত চিবিয়ে যাচ্ছি অনন্তকাল, গিলতেই পারছিনা। হঠাৎ করে মনে হল পানি তো আছে। লজ্জায় ঠান্ডা পানিও চাইতে পারছিলাম না। পরে পানি দিয়ে গপাগপ খেয়ে ফেললাম। মাংসের প্রতিটি অংশই অনেক এক্সপেন্সিভ (দামি) মনে হচ্ছিলো। খাওয়া শেষে সাবান পাইনা হাত ধোবার, সর্বকনিষ্ঠ বন্দী মাহবুব নিয়ে এলো হ্যান্ড-ওয়াস ।

এদিকে পাঞ্জাবী আর প্যান্ট ও ধোয়া দরকার, ভাবলাম পানিতে ভিজিয়ে রাখি পরে ধুয়ে নিবো। ছোট মাহবুব তা হতে দিলোনা, সে কাপড়গুলো ধুয়ে ফেললো। এবার আর শরীর চলে না। খাওয়ার পর অনন্ত বিশ মিনিট হাঁটি। সেটা আর সম্ভব হলনা। পড়ে গেলাম বিছানায়, শরীরজুড়ে ক্লান্তি আর ক্লান্তি।

বালিশটা প্রথমে বানানো হয়েছিল শিমুল তুলো দিয়েই। মাথা রেখে মনে হলো গ্রানাইট পাথরের সঙ্গে বাড়ি খেয়েছি। পিঠের নীচে বেড শীটটা স্যাঁতস্যাঁতে লাগছিলো। এতো কিছু কে দেখে, চোখ জুড়ে ঘুমের সীমাহীন আক্রমন। কোলবালিশ আর কাঁথা আমার নিত্যসঙ্গী, ভাবার সময় নেই। মশাদের সান্নিধ্যে ভ্যাপসা গরমে ঘুমালাম প্রায় দু’ঘন্টা। আমার রুটিন এখানে চলবে না, তাই ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম ঝটপট। নইলে আবার অভূক্ত থাকতে হবে। তেলাপিয়া মাছের দো পেয়াজা খুব টেষ্টি ছিলো। অমৃতের স্বাদ পেয়েছি, জীবনে এতো ভাল খাইনি। খাওয়া শেষে রুমের প্যাসেজে হাঁটা শুরু।

একজন ডাকলেন, ‘ও গায়ক সাব এইহানে একটু বইয়া একটা বিড়ি খান। আমনে তো মেশিনের লাহান খানা আর আডা শুরু করসেন’। বরিশালের মূলাদীর মানুষ তিনি। পাশে গিয়ে বসলাম, আস্তে আস্তে সবাই আসা শুরু করলেন। আমিও ফর্মে ফেরার সিগন্যাল পেলাম।

রাত জাগা আমার অভ্যাস। জেলে বাতি বন্ধ হয়না, একটু কমানো হয়। দুটো শুটিং মিস হল এই কারাবাসে, অনুতপ্ত বোধ করছি। নানান ভাবনা মনে, নানান ফ্ল্যাশ ব্যাক চোখে। একা একা শুয়ে হাসি আর রণ-রুদ্র’র ৯ (আসিফের দুই ছেলে) কথা ভাবি। ওরা মাত্র ক্লাস সিক্সে হোষ্টেলে ঠিক এমনই পরিস্থিতিতে ছিলো। ওরাও নিশ্চয়ই বাসায় শুয়ে আমার জন্যও ভাবছে। আজ দু’রাত ছেলেদের চুমু দেইনা। ওরা জানে ওদের বাবা একা একা ভয় পায়, একা থাকতে পারে না। ফজরের শেষে ঘুম জড়িয়ে এলো চোখে। ঠিক সকাল সাড়ে সাতটায় ডাক, হাজিরায় যেতে হবে স্বাক্ষর করার জন্য। মেজাজ খিচড়ে গেলো, সামলে নিলাম পরক্ষনেই, এখানে আমি আগন্তুক ,নিয়ম মেনে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। চলবে …

জনপ্রিয় গায়ক আসিফ আকবর নিজের ফেসবুকে কথাগুলো লিখেছেন। গীতিকার, সুরকার ও গায়ক শফিক তুহিনের দায়ের করা মামলায় ৫ দিন কারাগারে ছিলেন আসিফ। সেই দিনগুলোর অভিজ্ঞতাই তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করছেন। এর আগে আরো একটি স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি কারাগারের অভিজ্ঞতার প্রথম পর্ব লেখেন।

প্রথম পর্ব পড়ুন: কেমন ছিলো আসিফের কারাবাস?

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত