ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

স্থবির এনটিআরসিএ

  ভূপেন্দ্র নাথ রায়

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:৩৬

স্থবির এনটিআরসিএ

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান পদটি শূন্য থাকার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পদে কাউকে অধিষ্ঠিত করতে পারেনি। মহামান্য হাইকোর্টের আদেশে এনটিআরসিএ গত জুলাই মাসে একটি জাতীয় সমন্বিত মেধা তালিকা প্রকাশ করলেও নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত বিশাল শুন্যপদ পূরণে কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছেনা। মেধা তালিকার পরে ই-রিকুইজিশন সম্পন্ন করতে প্রতিষ্ঠানটি এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত করে। এদিকে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ এবং যোগদান করতে নাটকীয় খেলার আশঙ্কা জানিয়েছেন সাধারণ নিবন্ধনধারীরা। তাদের ভাষ্যমতে, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে যে কেউ সরকারের আদেশ অমান্য করতে পারে না। তাহলে এই কর্তাব্যক্তিরা কিভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করে?

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান এ এম এম আজাহার গত ১৮ সেপ্টেম্বর অবসরোত্তর ছুটিতে যায়। তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত (ওএসডি) কর্মকর্তা হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়। এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য থাকায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলালকে নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আদেশ প্রদান করে। কিন্তু এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও অজ্ঞাত কারনে তিনি উক্ত পদে যোগদান না করলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয় মাউশি উন্নয়ন শাখার (সেকায়েপ) অতিরিক্ত সচিব ড. মো. মাহামুদ-উল হক’কে। এরপর ১৬ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (বোর্ড প্রশাসন) এস এম আশফাক হোসেনকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিবন্ধনধারীরা আশা করছেন তিনি তার পদ অলংকৃত করে সমস্ত নিয়োগ জটিলতা দুরীভূত করবেন।

এনটিএরসিএ গত ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে জোড়াতালি দিয়ে প্রায় পনের হাজার শূন্যপদের বিপরীতে বারো হাজার সুপারিশ করে। যার মধ্যে একই সনদধারীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ফলশ্রুতিতে চূড়ান্তভাবে ছয়-সাত হাজার শিক্ষক নিবন্ধিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছে বলে জানায় নিয়োগবঞ্চিত শিক্ষক নিবন্ধিতরা। তারা আরো জানায়, উচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত নিবন্ধনপ্রাপ্তরা উপজেলা কোটার কারনে নিয়োগবঞ্চিত হয়। অপেক্ষাকৃত কম নম্বর পেয়ে অনেক নিবন্ধনধারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেয়েছেন। ফলে বঞ্চিত প্রার্থীরা ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে মহামান্য হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয় এবং বাংলাদেশের সকল বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ব্যবস্থা প্রায় দুই বছর স্থবির হয়ে পড়ে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকার পরে চলতি বছর হাইকোর্টের নির্দেশনায় এক বিশাল নিয়োগের প্রত্যাশা করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নিবন্ধিত শিক্ষকরা। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততোই ঘনিভূত হচ্ছে নিবন্ধনধারীদের হতাশা। তারা তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে স্পষ্ট কোন দিক নির্দেশনা পাচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশ বেসরকারি নিবন্ধিত নিয়োগ বঞ্চিত এক্য পরিষদের প্রচার সম্পাদক অবিলম্বে নিবন্ধনধারীদের নিয়োগের দাবীতে ঢাকা প্রেসক্লাব চত্বরে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন। এদিকে এমপিও নীতিমালা/১৮ নিয়েও অন্ধকারে নিমজ্জিত তারা, যা এনটিএরসিএ’র গণবিজ্ঞপ্তি কিংবা সুপারিশ প্রজ্ঞাপনে অস্পষ্টতা কাটবে। অন্যদিকে ৩৫ বয়সি সনদধারীদের কালো নীতিমালায় হয়রানির আশঙ্কা যাচ্ছেনা।

জানা গেছে, এরই মধ্যে পয়ত্রিশোর্ধ সনদধারীরা সুবিচার পেতে এবং তারা এমপিও নীতিমালায় করা এন্ট্রি লেভেলে বয়সের বেড়াজাল ছিন্ন করতে হাইকোর্টের বারান্দায় ধর্ণা দিতে শুরু করেছেন। অনতিবিলম্বে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান যোগদান করে বাংলাদেশের সকল বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রক্রিয়া এবং বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক সংকট দূর করা এখন সময়ের দাবী। নিবন্ধন সনদপ্রাপ্তরা আশায় বুক বাঁধছেন যে, নতুন চেয়ারম্যান তার চেয়ারে আসীন হয়ে রায়ের আলোকে সকল জটিলতার আশু অবসান ঘটাবেন। অন্যদিকে লুকোচুরি খেলার নাটকীয়তা হলে এই দেশ, এই জাতি আরো ত্রিশ বছর পিছিয়ে যাবে। বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক সঙ্কটে ভুগবে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রকৃত শিক্ষা থেকে তারা বঞ্চিত হবে। যার পরিণাম হতে পারে মেরুদন্ডহীন শিক্ষা ব্যবস্থা। যেখানে খেসারত দিতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে। এদের ভবিষ্যতে শিক্ষা প্রতিবন্ধি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান যোগদান ত্বরান্বিতসহ মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের আলোকে নিবন্ধিত শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে এই সঙ্কটাবস্থার সমাধান করা আশু দরকার। অন্যথায় এরকম নাটকীয় অবস্থার সৃষ্টি হলে আদালত অবমাননা সহ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিক্ষকতা পেশায় আসার আগ্রহ হারাতে পারে, যা একটি সুস্থ্য স্বাভাবিক জাতির কাম্য নয়।

লেখক : ভূপেন্দ্র নাথ রায় অধ্যক্ষ, সাইডীরিয়্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত