ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

পানির নিচে কৃষকের স্বপ্ন

  লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:১১  
আপডেট :
 ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:১৭

পানির নিচে কৃষকের স্বপ্ন

কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে লালমনিরহাটে উঠতি আমন ধান ক্ষেত ও সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে ডুবে থাকায় আমন ধানের গাছ গুলো নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে এমন শঙ্কায় কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর জেলার ৫টি উপজেলায় ৮৫ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলে চাষাবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে ৩৬০ হেক্টর জমির আমন ধানের ক্ষেত বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে।

এছাড়াও ৫ হেক্টর সবজি ও ৪ হেক্টর বীজ বাদাম ক্ষেতও ডুবে আছে পানির নিচে। তবে কৃষি বিভাগের মনগড়া এ তথ্য মানতে নারাজ কৃষকরা। তাদের দাবি এর চেয়েও দ্বিগুণ আমন ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে।

জানা গেছে, গত সপ্তাহ জুড়ে টানা ভারী বৃষ্টিতে লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল ডুবে যায়। এতে জেলার ৫টি উপজেলার নিচু অঞ্চলের সব আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। টানা ৫/৬ দিন পানিতে ডুবে থাকায় মধ্য বয়স্ক আমনের চারা গাছ পচে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। যার মধ্যে তুলনামূলক উঁচু অঞ্চলের আমন ক্ষেতের চারা গাছ দেখা গেলেও নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ ধান ক্ষেত এখনো পানিতে ডুবে রয়েছে।

ইতোমধ্যে কিছু ক্ষেতের আমনের চারা গাছ পচে নষ্ট হয়েছে। এভাবে টানা দীর্ঘ সময় পানিতে ডুবে থাকলে বাকি আমন ক্ষেত পচে নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন জেলার চাষিরা।

শুধু পানিতে ডুবেই ক্ষতি হচ্ছে না। নিচু অঞ্চলের অনেক আমন ক্ষেতে কচুরিপানা ও নানান ধরনের আগাছা ভেসে এসেছে। ফলে পানি কমতে শুরু করলে এসব ক্ষেতের পরিচর্যা করতেও দীর্ঘ সময় লাগবে। একইসঙ্গে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে। এছাড়াও ক্ষেতের অনেক চারা গাছ পচে নষ্ট হওয়ায় আমনের উৎপাদনও কমে যাওয়ার শঙ্কা করছেন চাষিরা।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সতী দোলা, করপের দোলা, কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের আমন উৎপাদনের কয়ার দোলা, কালিকুড়ার দোলা, দলগ্রামের বুকশুলার দোলা, আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ও ভাদাই ইউনিয়নের স্বর্ণমতি সতি নদী তীর, সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর রেলগেটসহ তিস্তা ও ধরলা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের শত শত হেক্টর জমির মধ্য বয়স্ক আমন ধান ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে।

ভারী বৃষ্টি ও ধীর গতিতে পানি নেমে যাওয়ায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থা দীর্ঘ হলে এসব অঞ্চলের আমন ক্ষেত চারা গাছ শুন্য হয়ে পড়বে। নিজেদের খাদ্য মেটানো দূরের কথা আমনের খরচই উঠবে না কৃষকের। যার ফলে আমনের উৎপাদন নিয়েও চরম শঙ্কিত জেলার কৃষকরা।

হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিন গড্ডিমারী গ্রামের আব্দুস সামাদ জানান, আমন ধান রোপণের পর থেকে যাবতীয় পরিচর্যা শেষ করেছেন তারা। কিছুদিন পরে ধানের শীষ বের হত। এমন সময় টানা বৃষ্টিতে তাদের ধান ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। টানা ৬ দিন ধরে এ গ্রামের সব চাষির ধান ক্ষেত ডুবে আছে। কিছু কিছু ধান গাছ ইতোমধ্যে পচে গিয়ে নষ্ট হয়েছে। নতুন করে চারা রোপণের মত চারা গাছও নেই। নতুন করে রোপণ করলেও আমন ধান পাওয়া যাবে না। একইসঙ্গে পরবর্তী ফসল পাওয়াও সম্ভব হবে না। সে কারণে ধান গাছ পচে নষ্ট হলে নতুন করে চারা রোপণের কথা ভাবছেন না তারা। আমন ধান ঘরে তুলতে না পারলে পরিবার পরিজন নিয়ে খাদ্যহীনতায় ভুগতে হবে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।

ওই উপজেলার সিন্দুনী পাঠানটারী গ্রামের সাদেকুল ইসলাম জানান, অনেক টাকা খরচ করে রোপণ করা আমন ধানের ক্ষেত পানিতে ডুবে পচে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে ভেসে আসা কচুরিপানাসহ নানান জাতের আবর্জনা জমিতে ভিড় করছে। দ্রুত পানি নেমে গেলে আবর্জনা পরিষ্কার করলে কিছু রক্ষা করা সম্ভব হবে। তবে পানি ধীরগতিতে নেমে যাওয়া এবং বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ শামীম আশরাফ বলেন, অনেক স্থানে আমন ক্ষেত ডুবে আছে। যার মধ্যে কিছু বেঁচে যাবে এবং কিছু পচে নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তবে দ্রুত পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। টানা ২ সপ্তাহ ডুবে থাকলে তা সমূলে নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। দ্রুত পানি সরিয়ে দিতে এবং পানি কমে গেলে সতর্কতার সঙ্গে ক্ষেতের ওপর জমে থাকা কচুরিপানাসহ আবর্জনা সরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত