ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে ৯০ ভাগ সাফল্যের দাবি চসিক মেয়রের

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২১, ০০:২৩  
আপডেট :
 ০৪ জুন ২০২১, ০০:৩৮

পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে ৯০ ভাগ সাফল্যের দাবি চসিক মেয়রের
ছবি- প্রতিনিধি

নগরবাসীকে মশার উৎপাত থেকে রক্ষা করতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম দিয়ে ১০০ দিনের ক্র্যাশ প্রোগ্রামের ৯০ ভাগ সাফল্যের দাবি করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। নাগরিক অসচেতনতা, যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা এবং জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে বিভিন্ন খালের ভেতর বাঁধের কারণে মশক নিধনে শতভাগ সাফল্য আসেনি বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, নাগরিক অসচেতনতার কারণে যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা এবং জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে বিভিন্ন খালের ভেতর বাঁধ দেয়ায় মশার উৎপাত বেড়েছে। আর মশা মারার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও নেই। ফলে মশক নিধনে শতভাগ সাফল্য আসেনি।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) চট্টগ্রাম নগরীর করপোরেশনের আন্দরকিল্লাস্থ পুরাতন নগর ভবনের কে.বি আবদুস ছাত্তার মিলনায়তনে মেয়র হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ পরবর্তী ১০০ দিনের ক্র্যাশ প্রোগ্রামের অগ্রগতি নিয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

মেয়র বলেন, মশক নিধন অভিযানে প্রতিটি ওয়ার্ডে ২ জন শ্রমিক ফগার স্প্রে ও ৫ জন শ্রমিক হ্যান্ড স্প্রের মাধ্যমে তরল ওষুধ ছিটানোর কাজে নিয়োজিত ছিল। নাগরিক অসচেতনতার কারণে এর অশানুরূপ ফলাফল আসেনি। আমি নিজে উপস্থিত থেকে স্কেভেটর দিয়ে নগরীর ফুলতলা খালের ময়লা পরিষ্কার করেছি। ১ সপ্তাহ পর সেই খাল আবারো ময়লা ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা মশার আবাসস্থল। নাগরিকরা যদি খাল-নালা-নর্দমায় ময়লা ফেলে ব্লক করে ফেলে, তাহলে সিটি করপোরেশন কতক্ষণ তদারকি করবে! করপোরেশনের তো আরও অনেক কাজ রয়েছে। নাগরিকদের কি সচেতন হওয়ার প্রয়োজন নেই।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র রেজাউল করিম বলেন, দায়িত্বভার গ্রহণের ১০০ দিনে ক্রাশ প্রোগ্রামে ওয়ার্ডভিত্তিক প্যাচওয়ার্ক আমরা শতভাগ সফল হয়েছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওয়াসার সংযোগ লাইনের জন্য মেরামত করা রাস্তা আবার কাটা হচ্ছে। যেমন সদরঘাট স্ট্যান্ড রোড, মেরামতের পর লাইনের লিকেজের কারণে এই সড়ক ওয়াসা আবারো কাটলো, এতে বিটুমিন উঠে গিয়ে সড়ক নষ্ট হয়েছে। দুর্নাম হয় করপোরেশনের। এলইডি লাইট স্থাপনের ক্ষেত্রে আমরা শতভাগ সফল। ৩০টি রাস্তা ৭৬ কিলোমিটার অংশে ২ হাজার ৯৬০ পোলের সাহায্যে ৫ হাজার ১১টি এলইডি লাইট স্থাপন করা হয়েছে। নগরীর সৌন্দর্য্য বর্ধনের ক্ষেত্রে রাস্তায় মিডিয়ান ও ফুটপাত রং করণের ৭০ ভাগ সম্পন্ন করা হয়েছে।

চসিক মেয়র বলেন, করোনার কারণে করপোরেশনের রাজস্ব আয় কমে গেলেও অন্যান্য ব্যয়ের পাশাপাশি গত ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মোট ৩৩ জনকে ৬৭ লাখ ২৫ হাজার ১১০ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কাজেই গত তিন মাস অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আনুতোষিকের কোন টাকা পরিশোধ করা হয়নি যে অপপ্রচার বিভিন্ন গণ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও সম্পূর্ণ মিথ্যা।

নতুন গাড়ি কেনা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, গাড়ি কিনতে তিনি রাজি ছিলেন না। কিন্তু এই গাড়ি নিয়ে চারবার পথে আটকে গেছেন। দরপত্র দেওয়া হলেও এখনো গাড়ি কেনার অনুমতি দেননি তিনি। রাজনীতি করে এই পদে এসেছেন। তাই ট্যাক্সি নিয়েও আসতে পারবেন।

জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে মেয়র নিজেই আসন্ন বর্ষায় চট্টগ্রাম নগরী গলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন খালে দেওয়া অস্থায়ী বাঁধ অপসারণের পক্ষে মত দিয়েছেন মেয়র। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এ প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন খালের ভেতরের অংশে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। খালে দেওয়া বাঁধের কারণে ময়লা-আবর্জনা জমে মশার উৎপাত বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক জলাবদ্ধতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন বলে জানান মেয়র। তিনি জানান, খাল ও বড় নালা-নর্দমাগুলো সিডিএর আওতায় থাকায় সিটি করপোরেশন এখন ছোট নালাগুলো থেকে মাটি উত্তোলনের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এ সময় করপোরেশনের অস্থায়ী কর্মচারিদের বেতন ২৭ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও জানান।

মেয়র রেজাউল বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে ঠিকাদার, সরবরাহকারী, সড়কবাতি ও স্থাপনা বকেয়া বিলের মধ্যে ২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঠিকাদার, সরবরাহকারীদের পরিশোধ করেছেন ২২ কোটি ১৭ লাখ, ৯৭ হাজার ৮৬০ টাকা, সড়কবাতির বিদ্যুৎ বিল ১ কোটি ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৬ টাকা,বিভিন্ন স্থাপনার বিদ্যুৎ বিল ২ কোটি ৩৮ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৪ টাকা।

তিনি বলেন, চসিক থেকে দীর্ঘদিন থেকে অনেক ঠিকাদারই বিল পাবেন। সেগুলোর মধ্য থেকে কিছু কিছু বকেয়া বিল পরিশোধ করে নিয়মিত কাজগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষার চেষ্টা করছি। এসময় দায়িত্ব নেওয়ার ১০০ দিনে সম্পন্ন উন্নয়ন কাজের বিবরণী তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, আমরা ফুটপাত পুনরূদ্ধার, খাল সম্প্রসারণ, মশক নিধন ও পাহাড় কাটা বন্ধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।

তিনি বলেন, করোনাকালীন নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুবিধায় নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি লালদিঘীস্থ চসিক পাবলিক লাইব্রেরির ভবনে আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে প্রস্তুত রাখা হয়েছে চিকিৎসক, নার্স, অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা।

মেয়র রেজাউল বলেন, আমি আমার ১০০ দিনের কার্যক্রমে কাউকে নগরীর কোন ফুটপাত বা জায়গা ইজারা দেয় নাই। কাউকে কোন বিলবোর্ডও লাগানোর অনুমতি দেয়া হয় নাই, যা দেয়া হয়েছে তা পূর্বে। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারলে আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেমন কাজীর দেউড়িতে ফুটপাত দখলের বিষয়ে জেনে পরদিন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভেঙে দিয়েছি। কাজেই ভুল বুঝার কোন অবকাশ নাই। আগামিতেও কোন অন্যায়কারি দখলবাজ আমার কাছে প্রশ্রয় পাবে না।

রাতে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের বিষয়ে মেয়র বলেন, রাতে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের উদ্যোগ ভাল ছিল। সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির এই কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। তবে এখন যে তা বন্ধ এটা নিয়ে আমি কোন অফিস আদেশ বা মৌখিক নির্দেশও দিইনি। তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় আপাতত রাতে আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে না। পরিস্থিতির উন্নতি হলে শীঘ্রই তা আবার শুরু হবে।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল। মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে সব জানি এ রকম আমি কখনো মনে করি না। কাজেই করপোরেশন পরিচালনা করতে যদি কোন ভুলত্রুটি হয়, আপনারা তা আমাকে ধরিয়ে দিবেন। আমি সংশোধন করে নিবো। এ ব্যাপারে নগরীর সর্বস্তরের জনসাধারণ, সুধীজন, সংবাদ মাধ্যমের সহায়তা কামনা করি।

মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, মো. গিয়াস উদ্দীন, আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর মো. শহীদুল আলম, মো. এসরারুল হক, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চসিক সচিব খালেদ মাহামুদ, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, উপ-সচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ, অতিরিক্ত প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোর্শেদুল আলম চৌধুরীসহ চসিকের পদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত