ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

কচ্ছপ পাচারের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ঢাকা

কচ্ছপ পাচারের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ঢাকা

মিঠে পানির কচ্ছপ চোরাচালানের মাধ্যমে যে ব্যবসা চলছে বিশ্বজুড়ে, তার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হচ্ছে ঢাকা।

আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা ওয়াইল্ডলাইফ জাস্টিস কমিশনের (ডাব্লিউজেসি) দুবছর ধরে চালানো এক অনুসন্ধানের পর প্রকাশ করা এক রিপোর্টে এই তথ্য পাওয়া যায়।

বিবিসি বাংলা থেকে জানা যায়, ওয়াইল্ডলাইফ জাস্টিস কমিশন ২০১৬ সালে ‘অপারেশন ড্রাগন’ নামে এই তদন্ত শুরু করে। তাদের ছদ্মবেশি কর্মীরা বিভিন্ন দেশে গিয়ে এই চোরাচালান নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। দু বছর ধরে চলে এই অনুসন্ধান।

তাদের তদন্তে অনেক চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসে এবং এই চোরাচালান ব্যবসায় উচ্চ পর্যায়ের অনেক অপরাধীকে চিহ্ণিত করা সম্ভব হয়।

মিঠে পানির কাছিম এবং কচ্ছপের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে চীন এবং হংকং। যারা বে-আইনিভাবে চীন এবং হংকং এ এসব পাচার করে, তাদের রয়েছে পুরো দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে বিশাল নেটওয়ার্ক। ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ-শ্রীলংকা-মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড জুড়ে বিস্তৃত এই নেটওয়ার্ক।

ডাব্লিউজেসি বলছে, মোট আটটি বড় অপরাধী চক্র মূলত এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বড় বড় বিমানবন্দর এবং সড়ক ও রেল পরিবহন কেন্দ্রে তারা লোকজনকে হাত করে রেখেছে, যাতে নির্বিঘ্নে এই ব্যবসা চালানো যায়।

তবে ডাব্লিউজেসির তদন্তের ফলে এই নেটওয়ার্কগুলো এবং তাদের সঙ্গে জড়িত অনেককে চিহ্ণিত করা সম্ভব হয়। এর ফলে তাদের পাচার বাণিজ্যে কিছুটা হলেও বাধা সৃষ্টি করা গেছে। এসব চক্রের তিরিশ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর উদ্ধার করা হয়েছে ছয় হাজারের বেশি কচ্ছপ।

ওয়াইল্ডলাইফ জাস্টিস কমিশন তাদের রিপোর্টে তুলে ধরেছে কিভাবে ঢাকা এখন পরিণত হয়েছে বিশ্বের নানা জায়গায় কাছিম, কচ্ছপ পাচারের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে।

প্রথম ধাপে পাচারের জন্য কাছিম ও কচ্ছপ সংগ্রহ করা হয় ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে। সেখানে একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে পর্যন্ত রয়েছে পাচারকারীদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক।

সংগ্রহ করা এসব বন্য কাছিম ও কচ্ছপ এরপর সড়ক ও রেলপথে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতায়। এরপর সেখান থেকে আবার যশোর রোড ধরে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি কোন জায়গায়।

কাস্টমস কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে পাচারকারীরা সীমান্তের অদূরে বনগাঁয় একটি নদীর কাছে থামে। সেখান থেকে কাছিম এবং কচ্ছপ তোলা হয় নৌকায়। তারপর নদীপথে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে আবার সড়ক পথে ট্রাক, প্রাইভেট কার বা ট্যাক্সিতে করে এসব নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার একটি ‘সেফ হাউসে।’

পাচার হওয়া কাছিম ও কচ্ছপের শেষ গন্তব্য বিশ্বের নানা দেশ ও নগরী। ঢাকার সেফ হাউস থেকে এগুলো আনা হয় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখান থেকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের এমন সব বিমানবন্দরে যেখানে পাচারকারী চক্রের নিজস্ব লোকজন আছে। ঘুষ দিয়ে হাত করা কাস্টমস কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এগুলো চলে যায় বিমানবন্দরের বাইরে।

ওয়াইল্ডলাইফ জাস্টিস কমিশন তাদের দুবছরব্যাপী অনুসন্ধানে দেখতে পেয়েছে এশিয়া জুড়েই বেশকিছু কেন্দ্র রয়েছে এই চোরাচালান নেটওয়ার্কের।

তবে এর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ হচ্ছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার এটি ‌‌‌‌‘সেফ হাউস’। এটি মূলত পাচার করে আনা কচ্ছপ এবং কাছিম রাখার জায়গা।

যারা বাংলাদেশ থেকে এগুলো বাইরে রফতানি করে, তাদেরকে রিপোর্টে ‘পার্সন অব ইন্টারেস্ট’ (পিওআই) বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। রিপোর্টে পিওআই-১২ বলে একজন উল্লেখ আছে, যাকে ঢাকা ভিত্তিক পাচারকারীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন বলে বর্ণনা করা হয়। ওয়াইল্ডলাইফ জাস্টিস কমিশন তাদের তদন্তে পাওয়া তথ্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শেয়ার করেন। এরপর ওই ব্যক্তি সহ মোট পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ পরে সেফ হাউসটিতে হানা দেয়। সেখান থেকে একটি ঘড়িয়ালসহ উদ্ধার করা হয় ৬২০টি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত