ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

গৃহঋণ পেতে সরকারি চাকরিজীবীদের আবেদনের হিড়িক

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০১৯, ১৮:৪১

গৃহঋণ পেতে সরকারি চাকরিজীবীদের আবেদনের হিড়িক

শতকরা ৫ শতাংশ সুদে গৃহঋণ পেতে সরকারি চাকরিজীবীদের আবেদনের হিড়িক পড়েছে। বিভিন্ন সরকারি ব্যাংক ও হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনে ইতোমধ্যে স্বল্প সুদে গৃহঋণ পেতে কয়েক শ’ আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। এই সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এসব আবেদনের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৩৪টি আবেদন মঞ্জুর করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। যার মধ্যে আবার তিনজন আবেদনকারী তাদের ঋণের অর্থ ব্যাংক থেকে উত্তোলনও করেছেন। এই ঋণ নেয়ার জন্য আবেদনপত্র গত অক্টোবর থেকে করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যে তিন আবেদনকারী গৃহঋণের অর্থ ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেছেন তারা সবাই অতিরিক্ত সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তা। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একেকজনকে ৬৫ থেকে ৭৫ লাখ টাকা ৫ শতাংশ সুদে গৃহঋণ গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেয়া হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রণীত গৃহঋণ নীতিমালা অনুযায়ী ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ শতাংশ। এর মধ্যে ৫ শতাংশ সুদ দেবে ঋণগ্রহীতা সরকারি চাকরিজীবী এবং বাকি ৫ শতাংশ সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে ভতুর্কি হিসেবে প্রদান করবে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, যে তিনজন অতিরিক্ত সচিব গৃহঋণ নিয়েছেন তাদের ঋণের সুদের ভতুর্কির অর্থ ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বরাবর ছাড় করা হয়েছে। প্রতিটি ঋণের মাসিক ভতুর্কি বাবদ অর্থ ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। গৃহঋণের সুদের ভতুর্কি অর্থ বাজেটে রক্ষিত ভতুর্কি ও অন্যান্য খাত থেকে সঙ্কুলান করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

জানা গেছে, যে ৩৪ জন সরকারি চাকরিজীবী গৃহঋণ পেয়েছেন তাদের ৩৩ জন ক্যাডার কর্মকর্তা। বাকি একজন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা সরকারি এক মন্ত্রণালয়ে পিও (ব্যক্তিগত সহকারী) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

কার জন্য কেমন ঋণ

# জাতীয় বেতন স্কেলে পঞ্চম থেকে প্রথম গ্রেডভুক্ত, অর্থাৎ উপসচিব থেকে সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। জেলা সদরে এই অঙ্ক হবে ৬০ লাখ টাকা, অন্যান্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা।

# নবম থেকে ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তারা সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৬৫ লাখ টাকা, জেলা সদরে ৫৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন গৃহঋণ হিসেবে।

# দশম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডের কর্মকর্তারা সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে পাবেন ৫৫ লাখ, জেলা সদরে ৪০ লাখ এবং অন্য এলাকায় ৩০ লাখ টাকা।

# চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ গ্রেডের কর্মচারীরা সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৪০ লাখ টাকা, জেলা সদরে ৩০ লাখ টাকা এবং অন্য এলাকায় ২৫ লাখ টাকা গৃহঋণ নিতে পারবেন।

# সর্বশেষ পর্যায়ে অষ্টাদশ থেকে বিংশতম গ্রেডের কর্মচারীরা সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৩০ লাখ, জেলা সদরে ২৫ লাখ এবং অন্য এলাকায় ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন আবাসন নির্মাণের জন্য।

গৃহনির্মাণ কাজের ওপর ভিত্তি করে মঞ্জুরিকৃত ঋণ সর্বোচ্চ চারটি কিস্তিতে বিতরণ করা হবে। আর রেডি ফ্ল্যাট অথবা জমিসহ তৈরি বাড়ির কেনার ক্ষেত্রে সব ঋণ এক কিস্তিতে দেয়া যাবে বলেও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। অনিবার্য কারণবশত মাসিক কিস্তি পরিশোধে দেরি হলে ওই দেরির জন্য আরোপযোগ্য সুদ শেষ কিস্তিুর সাথে যুক্ত হবে। এ ছাড়া গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রথম কিস্তিুর ঋণের অর্থ প্রাপ্তির সর্বোচ্চ এক বছর পর এবং ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ঋণের অর্থ প্রাপ্তির সর্বোচ্চ ছয় মাস পর ঋণ গ্রহীতার মাসিক ঋণ আরম্ভ হবে।

ঋণ পাওয়ার জন্য প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী প্রাইভেট প্লটের ঋণের জন্য আবেদনপত্রের সাথে বিভিন্ন দলিল জমা দিতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জমির মূল মালিকানা দলিল; এসএ/আরএস রেকর্ডীয় মালিক থেকে মালিকানা স্বত্বের প্রয়োজনীয় ধারাবাহিক দলিল; সিএস, এসএ, আরএস, বিএস এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিটি জরিপ খতিয়ান জাবেদা নকল; জেলা/সাবরেজিস্ট্রি অফিস কর্তৃক ইস্যু করা ১২ বছরের নির্দায় সনদ (এনইসি)। আর ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে জমা দিতে হবে রেজিস্ট্রি করা বায়নাচুক্তি এবং ফ্ল্যাটের মালিকানা দলিল (বন্ধক দেয়ার আগে)।

সরকারি/লিজ প্লটের জন্য ঋণ আবেদনের সাথে যে প্রমাণাদি জমা দিতে হবে সেগুলো হচ্ছে প্লটের বরাদ্দপত্রের ফটোকপি, দখল হস্তান্তরপত্রের ফটোকপি, মূল লিজের দলিল ও বায়না দলিলের ফটোকপি, ফ্ল্যাট ক্রয়ের রেজিস্ট্রি করা বায়নাচুক্তি, ফ্ল্যাটের বরাদ্দপত্র এবং ফ্ল্যাটের মালিকানা দলিল (বন্ধক দেয়ার আগে)।

এ ছাড়াও উভয় ক্ষেত্রে ঋণ আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে নামজারি খতিয়ানের জাবেদা নকল, হাল সনের খাজনা রসিদ, জমির মালিক কর্তৃক ডেভেলপারের দেয়া রেজিস্ট্রি করা আমমোক্তারনামা দলিল, জমির মালিক এবং ডেভেলপারের সাথে রেজিস্ট্রি করা ফ্ল্যাট বণ্টনের চুক্তিপত্র, অনুমোদিত নকশার ফটোকপি, ফ্ল্যাটের মাটি পরীক্ষার রিপোর্টের ফটোকপি, সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত ছকে ইমারতের কাঠামো নকশার ফটোকপি ও ভারবহন সনদ, ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্ঘস্মারক, সঙ্ঘবিধি ও রিহ্যাবের নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, ডিজাইন মোতাবেক কাজ করার ব্যাপারে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের দেয়া আন্ডারটেকিং, অন্য কোনো ব্যাংক/ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ নাই মর্মে ডেভেলপারের দেয়া স্ট্যাম্প পেপারে ঘোষণাপত্র, আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি, বেতনের সনদপত্র, সত্যায়িত ছবি ও সই। ঋণ নেয়ার জন্য সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান মনোনীত করার আগে অর্থ বিভাগের গৃহঋণ সেলের অনুমতি নিতে হবে। তবে এ কার্যক্রম যখনই বাস্তবায়ন হোক না কেন বয়সসহ সব শর্ত গত ১ জুলাই থেকে বিবেচনা করা হবে।

কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু এবং দুর্নীতি মামলার ক্ষেত্রে চার্জশিট দাখিল হলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ নীতিমালার আওতায় তিনি ঋণ গ্রহণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত কোনো কর্মচারীও এ নীতিমালার আওতায় ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না।

নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, কোনো কর্মচারী ঋণ নেয়ার পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়লে বা বাধ্যতামূলক অবসর, বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত হলে আদেশ জারির তারিখ থেকে ঋণের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য সুদ বাবদ সরকার কোনো ভর্তুকি দেবে না। এ ক্ষেত্রে ঋণের অপরিশোধিত অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর পেনশন সুবিধা বা আনুতোষিক সুবিধা থেকে আদায় করা হবে। ঋণগ্রহীতার মৃত্যু হলে তার পারিবারিক পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা থেকে যতটুকু সম্ভব ঋণ পরিশোধ করা হবে। এরপরও ঋণ পাওনা থাকলে উত্তরাধিকারদের কাছ থেকে তা আদায় করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত