ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

রাঙ্গামাটিতে সেনা টহলে হামলা নিয়ে উৎেকণ্ঠা-বিস্ময়

রাঙ্গামাটিতে সেনা টহলে হামলা নিয়ে উৎেকণ্ঠা-বিস্ময়

পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলায় রোববার সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল দলের ওপর একই দিনে দুইবার হামলার ঘটনায় উদ্বেগের পাশাপাশি বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে। কেননা এর আগে এমনটি দেখা যায়নি।

এই হামলার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াৎ হোসেন বিবিসিকে বলেন, ‘শান্তি প্রক্রিয়ার পর থেকে সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে এ ধরনের হামলার কথা আমি শুনিনি।’

ব্রিগেডিয়ার হোসেন নব্বইয়ের দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে একজন ব্রিগেড কম্যান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

দুই দশকেরও বেশি সময় আগে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে সেনাবাহিনীর ওপর বড় কোন হামলার কথা শোনা যায়নি। তবে, প্রায় বছর খানেক ধরে পার্বত্য এলাকায় আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে পরপর বেশ কয়েকটি সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে।

২০১৮ সালের জুনে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ড এবং তার পরদিনই আরো পাঁচজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পাহাড়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়। এরপর গত কয়েক মাসে পরপর আরো কয়েকটি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেসবের পেছনে আঞ্চলিক দলগুলোর প্রাধান্য বিস্তারের লড়াইকেই দায়ী করা হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ করেই কারা এবং কোন উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীকে টার্গেট করলো?

রোববারের ঘটনা সম্পর্কে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে কয়েক লাইনের যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে তাতে কাউকেই সন্দেহ করা হয়নি।

তবে বিবিসির সাথে কথা বলতে গিয়ে একাধিক পর্যবেক্ষক অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন আরাকান আর্মি নামে মিয়ানমারের সশস্ত্র একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দিকে।

এ প্রসঙ্গে ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, নির্ভরযোগ্য সূত্রে তিনি রোববারের হামলার কিছু ছবি হাতে পেয়েছেন যা দেখে তার মনে হয়েছে হামলাকারীরা দেশের বাইরে থেকে আসা।

তার ভাষায়, ‘তাদের (হামলাকারীদের) হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল যেগুলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের হাতে দেখা যায়, তাদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল। তাদের গড়ন দেখে মনে হয় না, তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর কোনো একটির-ও সদস্য।’

রাঙ্গামাটির সাংবাদিক ফজলে এলাহি বলেন, রাজস্থলী নামে যে এলাকায় এই হামলা হয়েছে সেখানে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দুয়েকটি গোষ্ঠীর উপস্থিতির কথা বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘বছর দুই আগে রাজস্থলী উপজেলা থেকেই আরাকান আর্মির অন্যতম শীর্ষ নেতা রেনিন সোয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সেখানে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দুয়েকটি দলের উপস্থিতির কথা আমরা শুনেছি। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে মগ লিবারেশন পার্টি নামে নতুন একটি দলের নামও শোনা যাচ্ছে।’

ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, আরকান আর্মি তাদের হয়ে লড়াই করার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকা থেকে 'রিক্রুট' করার চেষ্টা করছিল বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

তিনি বলেন, আরাকানের বৌদ্ধদের সাথে পার্বত্য এলাকার কিছু কিছু জনগোষ্ঠীর চেহারা এবং গড়নে অনেক মিল রয়েছে। অনেক সময় তাদের দেখে আলাদা করা কঠিন।

কিন্তু যোদ্ধা রিক্রুট করার সন্দেহ সঠিক হলেও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে টার্গেট করার কারণ কী থাকতে পারে তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকরা।

ব্রিগেডিয়ার হোসেন অবশ্য এই হামলোকে ‘ইচ্ছাকৃত উস্কানি’হিসাবে দেখছেন।

তার ভাষায়, ‘উস্কানি দিলে যদি সেনাবাহিনী বড় কোনো অভিযান শুরু করে তাহলে এই এলাকা থেকে স্থানীয় যুবকদের রিক্রুট করা তাদের (আরাকান আর্মির) জন্য সুবিধা হবে।’

তবে প্রতিহিংসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না ব্রিগেডিয়ার হোসেন। তার অনুমান, কিছুদিন আগে আরাকান আর্মির কিছু সদস্যকে ধরে মিয়ানমারের হাতে তুলে দেওযা হয়েছিল, তার বদলা হিসাবেও এই হামলা হতে পারে।

তবে যদি এটা উস্কানি হয় এবং সেনাবাহিনী যদি সেই উস্কানিতে সাড়া দেয়, তাহলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে ধারণা সাখাওয়াৎ হোসেনের।

স্বাভাবিকভাবেই এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় উৎকণ্ঠার অনেক কারণ রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই শিথিল করেছে। এই ঘটনার পর তারা যদি আবার শক্ত অবস্থান নেয়, তাহলে আরেক ধরনের সমস্যা হতে পারে।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াৎ হোসেন

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত