ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

১২০ বছরেও পাননি বয়স্ক ভাতার কার্ড

  নেত্রকোনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৭ মে ২০১৯, ১১:১২

১২০ বছরেও পাননি বয়স্ক ভাতার কার্ড

গ্রামের সবাই ডাকে খুদ বানু। বয়স আনুমানিক ১২০ এরও বেশি। তিনি একজন বাক প্রতিবন্ধী নারী। ছোটরা তাকে পাগল বলে উপহাস করত। ৫০ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। অন্যের বাড়ীতে থেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে কোনমতে জীবন যাপন করছেন তিনি।

বলছিলাম নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের শিবাশ্রম গ্রামের স্বামী মৃত আবুল হাসেমের স্ত্রী বাক-বুদ্ধি প্রতিবন্ধী খুদ বানু নামে এক বৃদ্ধ নারীর কথা।

জগতে তার আপনজন বলতে কেউ নেই। অভাগা বৃদ্ধাকে কেউ দেখার নেই। বয়সের ভারে অনেক আগেই কর্মশক্তি হারালেও পেটের ক্ষুধা মেটাতে মানুষের ঘরে ঘরে হাত পেতে চলতে হয়। রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে তার দুরগতির শেষ নেই।

একসময় খোলা আকাশের নীচে পড়ে থাকলে এলাকাবাসী তার প্রতি সহানুভতির হাত বাড়িয়ে মাথা গুজার জন্য তাকে একটি ছোট ছাপড়া ঘর তৈরি করে দেয়। সেখানেই তার বসবাস। এ পর্যন্ত তার কপালে বয়স্ক ভাতাসহ সরকারি কোন সাহায্য জোটেনি। বৃদ্ধ খুদ বানুকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি কিছুই বলতে পারেন না। শুধু মাথা নাড়িয়ে ইশারা ইঙ্গিত করেন। যা কিছুই বুঝা যায়নি।

বৃদ্ধার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, দশ জনের সাহায্যে ভাঙা একটি টিনের ছাপড়ায় তার বসবাস। ঘরে আসবাবপত্র বলতে একটি চৌকি। আর কিছু নেই। ঘরের মেঝেতে গজিয়েছে বিভিন্ন ধরনের আগাছা। বসবাসের অযোগ্য ঘরেই থাকেন বৃদ্ধা খুদ বানু।

পাশের ঘরের ৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধা জমিলা আক্তার বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, আমার বয়স যখন ৭ বছর তখন আমার মায়ের নিকট শুনেছি তার বয়স ৫৫। তাদের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ভিক্ষা করে জীবন যাপন ও খোলা আকাশের নীচে বসবাস করতে থাকেন। তার আপনজন বলতে কেউ না থাকায় এলাকাবাসী তার বসবাসের জন্য এ ঘরটি তৈরি করে দিয়েছেন। তবে এ পর্যন্ত সরকারি কোন সাহায্য তার ভাগ্যে জোটেনি।

একই গ্রামের ৭০ বছর বয়সী আব্দুল কাদের বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, আমি ছোট বেলা থেকেই উনাকে এমন দেখে আসতেছি। উনার কেউ নাই। উনাকে সরকারি কোন সাহায্য দিলে হয়তো মৃত্যুর আগে মনের শান্তি পাইতো।

এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ রয়েল বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, আমি শিবাশ্রম গ্রামের শতাধিক বয়সের নিঃস্ব খুদ বানুকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবেশীরা এই কার্ডের টাকা অন্য লোকজন নিয়ে যাবে বললে আমি তাকে কার্ড দেইনি। তবে মাঝে মধ্যে উনার জন্য আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সাহায্য করে থাকি।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, বয়স্ক ভাতার কার্ড এমন বয়সেও পায়নি তা আমার জানা ছিল না। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান উক্ত খুদ বানুর প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছালে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মদন থানার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়ালীউল হাসান বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, বিষয়টি শুনেছি। তার জন্য বয়স্ক ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিপিবি
  • সর্বশেষ
  • পঠিত