ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ভাঙা রাস্তায় ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি

  রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৮ মে ২০১৯, ১১:১৪

ভাঙা রাস্তায় ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি

নাজনীন সুলতানা। একজন গৃহিনী। স্বামী চাকরিজীবী। স্বামীকে পেশার কারণে বাহিরেই থাকতে হয় অনেক সময়। তাই ছোট্ট ছেলে মাহির ও মেয়ে মাইশাকে নিয়ে একাই বের হয়েছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। ইছাখালী রাস্তায় কথা হয় তার সাথে।

তিনি বলেন, ‘কেনাকাটা আর কি করব, রাস্তা ভাঙা। স্থানে স্থানে গর্ত। কোথাও আবার বৃষ্টির কারণে হাটু পানি। গাড়ি চলে হেলেদুলে। ১৫ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে ৪০-৫০ মিনিট। সাথে রয়েছে ভয়ানক যানজট।’

রূপগঞ্জের অধিকাংশ রাস্তাঘাটের খুবই করুণ অবস্থা। অনেক প্রধান সড়কেও বড় বড় গর্ত। ফলে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়িত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। বাড়ছে দুর্ঘটনা। অনেক স্থানে নতুন রাস্তা উঁচু করার, সরু রাস্তা প্রশস্ত করার, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে রাস্তার জায়গা দখলমুক্ত করার ও পুরোনো ইট বিছানো রাস্তা পাকা করার দাবি রয়েছে। রাস্তা গুলি মেরামতে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদসহ জনপ্রতিনিধিরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রূপগঞ্জের ইছাখালী থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত একটি রাস্তার দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল অবস্থা। প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়া পাথর আর পিচ দেখে বোঝা যায় রাস্তটি এক সময় পাকা ছিলো। রাস্তাটি ভরা অসংখ্য ছোট ছোট গর্ত। ইছাখালী তেমোড়া থেকে রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ফজুরবাড়ি পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তার প্রায় শতাধিক গর্ত।

রাস্তার পাশের রূপগঞ্জের নবগ্রাম এলাকার মশিউর রহমান রিপন বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, এয়ারপোর্ট থেকে বিদেশ ফেরৎ যাত্রীরা ঢাকার যানজট এড়াতে এ রাস্তাটি ইদানিং বেশি ব্যবহার করছেন। তাই এ রাস্তার গুরুত্ব আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। এ রাস্তা দিয়ে বড় শ্যালো মেশিন চালিত ট্রাক্টর চলাচল করে। যে কারণে রাস্তাটি দ্রুত ভেঙে যায়। এ ছাড়া গত প্রায় এক যুগ ধরে এ রাস্তাটি সংস্কার হয়নি।

ফলে রাস্তাটির দু’পাশ ভেঙে এটি অত্যন্ত সরু হয়ে গেছে। ভাঙায় পড়ে গিয়ে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। রিক্সা উল্টে যাচ্ছে। রাস্তাটিতে মোড় অনেক বেশি। ভাঙা রাস্তা ও মোড়ের কারণে যানজট লেগেই থাকছে। এ মোড় ভেঙে রাস্তাটি সোজা করা দরকার। এ এলাকায় নতুন রাস্তা নির্মাণেরও প্রয়োজন আছে বলে তিনি জানান।

মোড় ভেঙে রাস্তা সোজা ও সংস্কার করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানালেন, রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হোসেন ভুঁইয়া রানু। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, রাস্তাটি এলজিইডির। তারা অচিরেই রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন।

রূপগঞ্জের সদর ইউনিয়নের আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে কথা হলো এ স্কুলের শিক্ষার্থী রিয়া মনি, ফারজানা, নাদিম, নিপা ও মাহীনুর এর সাথে। তারা বাংলাদেশ জার্নালকে জানালেন, প্রতিদিন ভাঙা রাস্তা দিয়েই তাদের যাতায়াত করতে হয়। বাড়ির সামনে থেকে স্কুল পর্যন্ত কোন রাস্তা ভালো নেই। বর্ষায় অনেক স্থান দিয়ে হাটারও অবস্থা থাকে না। গর্তে জমে থাকা কাঁদায় এমন খারাপ অবস্থা হয়। তারাবো বাজার থেকে হাটিপাড়া সুলতানবাগ রাস্তাটি খুবই সরু। নোয়াপাড়া থেকে বিশ্বরোড, বরাবো ধেকে রসুলপুর, মৈকুলী বাস স্ট্যান্ড থেকে মৈকুলী হয়ে খাদুন, বরপা থেকে সুতালারা, মাসাবো থেকে ঐরাব, কর্ণগোপের রাস্তা, তারাবো থেকে নোয়াপাড়া, কাহিনা গ্রামের রাস্তা সবই ভাঙা।

এসব ব্যাপারে কথা হয় তারাবো পৌরসভার মেয়র হাছিনা গাজীর সাথে। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, অনেক রাস্তার সংস্কার কাজই করেছি। বাকিগুলোও খুব শীঘ্রই সংস্কার করা হবে। উপজেলার রূপসী থেকে কাঞ্চন পৌর এলাকার মায়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার করুন অবস্থা ৭ ভচর ধরে হলেও কেউ যেন খেয়ালই করছেন না।

রূপগঞ্জের উপজেলা সদর হিসাবে ধরা হয় মুড়াপাড়াকে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, মঠের ঘাট থেকে রূপগঞ্জ উপজেলা সদরে যাওয়ার রাস্তাটির করুণ হাল। এই রাস্তা দিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আসা-যাওয়া করলেও রাস্তাটি কারও নেক নজরে আসেনি।

এসব বিষয়ে রূপগঞ্জের সংসদ পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, রূপসী থেকে কাঞ্চন রাস্তার খুব শিঘ্রই টেন্ডার হবে। ইছাখালী রাস্তার চনপাড়া থেকে কাজ শুরু হয়েছে। খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে। তাছাড়া আগের সরকার রূপগঞ্জের উন্নয়নকে অবহেলা করেছে বলেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

আমরা রাস্তা-ঘাট উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। কয়েকটি রাস্তার কাজও শুরু হয়ে গেছে। রাস্তার অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আশা করি আমাদের হাতে নেয়া প্রকল্পগুলি শেষ হলে রূপগঞ্জের মানুষের রাস্তা নিয়ে দাবি-দাওয়া অনেক কমে যাবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিপিবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত