২০১৮ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্যানেল প্রত্যাশীদের প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ মে ২০২০, ১৮:০০
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আসসালামু আলাইকুম, প্রথমেই আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি, সেই সাথে মুজিব শতবর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনি বাংলার শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি সন্তান, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির জনক এর সু-যোগ্য কন্যা, আপনি বিশ্ব মানবতার জননী হিসেবে আজ আখ্যায়িত। বারো লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন। আপনি আমাদের অহংকার ও গৌরব।
স্বপ্ন ভেঙে যখন চুরমার, প্রতিটি মুহূর্ত বেঁচে থাকা যখন দূর্বীষহ সেই মুহূর্তে ভালোবাসা ও আবেগের সর্বোচ্চ আসন থেকে প্রাণের আকুতি নিবেদন করি। আপনার মুখের বাণীই আমাদের একমাত্র আশা, বেঁচে থাকার উপায়।
মা আপনিই তো বলেছেন কোটি বাঙালির অস্তিত্বের স্বীকৃতির মহানায়ক, অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীতে কেউ বেকার থাকবে না। মাগো, আমি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা একটি সাধারণ মেয়ে। আমার বাবার স্বপ্ন ছিলো আমাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে একজন সৎ ও আদর্শবান এবং দেশ ও জাতি গঠনের কারিগর হিসেবে গড়ে তুলবেন।
আজ আমি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছি বটে কিন্তু বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি। আমার বাবা বেঁচে নেই, আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হলাম। বাবা চলে গেলেন বিনা চিকিৎসায়, টাকার জন্য বাবার শেষ চিকিৎসাও আর হলো না। এখন অসুস্থ অবস্থায় বিছানাতে প্রতিনিয়ত কাতরাচ্ছেন আমার জনম দুঃখিনী ‘মা’ যে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমিও অসহায় হয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। তার মুখের দিকে তাকিয়ে অশ্রু বিসর্জন ছাড়া আর যেন কিছুই করার নেই আমার। উচ্চশিক্ষা অর্জনের পর বেকারত্বের বোঝা নিয়ে কেবল এটাই মনে হয় ‘জন্মই যেন আমার আজন্ম পাপ।’
সেবা শুশ্রূষা ছাড়া আর বিনা চিকিৎসায় বাবা মারা যাওয়ার পর পৃথিবীতে মা ছাড়া আমার আর তেমন কেউ নেই, আমি চাই না সেও বিনা চিকিৎসায় মারা যাক। উচ্চ শিক্ষিত মেয়ের জন্য এটা কতটা বেদনার তা আপনি ছাড়া কেউ বুঝবে না কারন, আপনিও আপনার বাবা মা কে হারিয়েছেন।
মাগো আমরা ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮’ এর সুপারিশ বঞ্চিত প্রায় ৩৭ হাজার প্রার্থীর প্রত্যেকেই যে করুন ও বিষাদময় জীবন যাপন করছি তা শোনা মাত্রই আপনার কোমল হৃদয় কেঁপে উঠবে। আপনার নয়ন অশ্রুজলে সিক্ত হবে, আমরা কতটা ভাগ্য নিপীরিত শিক্ষিত মেধাবী যোগ্য সন্তান।
আপনার অসামান্য নেতৃত্বগুণ, দেশপ্রেম, ত্যাগ ও তিতিক্ষার এই স্বপ্নের দেশ গড়তে প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা অংশ নিতে চাই। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আপনি আপনার প্রায় ৩৭ হাজার সন্তানের পরিবারের আর্তনাদ বিশেষ বিবেচনায় রাখবেন।
মমতাময়ী মা আমরা কেউ অযোগ্য নয়, আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড সংখ্যক ২৪ লক্ষ প্রতিযোগী ছিলাম ২০১৮ সালের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়। আমরা গুরুত্বপূর্ণ দুইটি ধাপে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমরা আপনার মেধাবী ও যোগ্য সন্তান। ‘মা’ আপনি দয়া করে আমাদের এই প্রায় ৩৭ হাজার বেকার সন্তান, বাবার কাঁধে বোঝা, সমাজের চোখে বিষাক্ত এক প্রাণী হয়ে বেঁচে থাকা থেকে মুক্তি দেবেন, আপনি আমাদের সম্মানের সাথে, দু’মুঠো খাবারের যোগান দিয়ে বেঁচে থাকার অবলম্বন করে দিবেন। মা মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আপনি আমাদের ৬১টি জেলার প্রতিটি ঘরে একজন করে সরকারি চাকরি দিয়ে, জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার সুযোগ করে দিন। ‘উন্নয়নের বাতি ঘরে’ লাখো বাতি জ্বালিয়ে মুজিব শত বর্ষকে মহিমান্বিত করার সুযোগ দিন।
ইতি
তানিয়া তাসনিম
মহিলা বিষয়ক সম্পাদক,
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশী, কেন্দ্রীয় কমিটি।