ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

একজন শিক্ষকের দুর্ভাগ্যজনক ফিরিস্তি

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০১৯, ১৫:৪৭

একজন শিক্ষকের দুর্ভাগ্যজনক ফিরিস্তি
ফাইল ফটো

দেশের বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন ভাতা নিয়ে এক শিক্ষক তার জীবনের দুর্ভাগ্যজনক ফিরিস্তি লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশ জার্নালের পাঠকদের জন্য নিচে তা তুলে ধরা হল-

বৈষম্যের নিগঢ়ে হাবুডুবু খাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষকদের জীবনের পেন্ডুলাম।

একজন বেসরকারি শিক্ষকের দুর্ভাগ্যজনক ফিরিস্তি

১. ১২,৫০০/- স্কেলে চাকুরি শুরু যা গার্মেন্ট কর্মী বা একজন দিনমজুরের আয়ের চেয়ে কম।

২. অবসর ও কল্যাণ ভাতার জন্য ১০℅ কর্তন যা অন্য পেশায় নাই। তার কোন হিসাব নাই। অনেক সময় টাকার চেক পেতে হয় মৃত্যুর পর।

৩. টাইম স্কেল বন্ধ। মিটিং হয়, সিদ্ধান্ত হয় না।

৪. ১০০০/- টাকা বাড়ি ভাড়া যা অন্যের কাছে বলতে রীতিমত অপমানজনক আর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। বাড়ি ভাড়া নাই, নিয়োগ হয়েছে দূরের কোন গাঁয়, শিক্ষকরা বদলি চায়, আজও কোন নীতিমালা হয় নাই।

৫. চিকিৎসা ভাতা ৫০০/- টাকা যা একবারে একজন ডাক্তারের ফিস।

৬. অন্যান্য কোন ভাতার ব্যবস্থা নেই।

৭. ২৫℅ উৎসব ভাতা। পরিবারের সামনে আমার পরিচয় আমি একজন ভিখারী। যা মাননীয় শিক্ষা সচিব মহোদয় সরকারের কাছ থেকে জোর করে আদায় করে দেন।

৮. আমার বেতন একজন সরকারি অফিসের পিয়নের চেয়ে কম।

৯. যিনি দায়িত্বে আসেন আমার জন্যই আইন প্রনয়ণ করেন।

১০. একজনও বেসরকারি শিক্ষক পাওয়া যাবে না যিনি তার বেতন দিয়ে সংসার চালাতে পারেন।

১১. বছর শেষে দেনার পরিমাণ কয়েক লাখ টাকা।

১২. আমাদের জন্য ব্যাংক সুদ ১৩% যা আর কারো জন্য প্রযোজ্য নয়।

১৩. আমরা গৃহ ঋণের আওতায় পড়ি না।

১৪. একমাত্র আমরাই দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করি।

১৫. দেশের অগ্রগতিতে আমাদের অবদান ৮০℅ বললে অত্যুক্তি হয় না।

১৬. সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয়।

১৭. তার উপর দিতে হয় আয়কর।

১৮. সব পেশায় উপরি আয় আছে আমাদের জন্য কোচিং বন্ধ।

১৯. শিক্ষা ভবনের সভায় কমন এজেন্ডা থাকে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধানদের জন্য টাইম স্কেল কিন্তু তা আলোর মুখ দেখে না।

২০. ন্যায্য দাবি আদায়ের কথা বলতে গিয়ে আমাকে পুলিশি বাঁধার মুখে পড়তে হয়। সবাই পারলেও আমরা শিক্ষক বলে সে বাঁধা টপকাতে পারি না।

এসব কথা বললাম এই কারণে, আমাদের দেশের কর্তাব্যক্তিরা শিক্ষা প্রসারে দিনরাত প্রাণপাত করে চলেছেন। কিন্তু তা কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে তার মাপকাঠিটা তাদের কাছে আছে বলে আমার মনে হয় না। সেবা নিতে গেলে সেবা দিতেও হয়। দেশের সকল স্তরে ত্যাগ স্বীকার করার সব দায় যেন বেসরকারি শিক্ষকদের। এ পেশায় আসাটাই যেন পাপ। আর কর্তৃপক্ষের ভাবটা এমন ‘দেখ কেমন লাগে’। দুর্বল মেধাবীদের এ পেশায় আসার কারণও সরকারের উদাসীনতা। এদিকে গোড়া থেকে বিশেষ নজর না দেওয়া। সরকারের অর্থের সংকট নেই।

সমস্যা দুর্বল ব্যবস্থাপনা। কম বেতন দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে নেওয়ার প্রবনতা আমাদের পেয়ে বসেছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতি করে যে টাকা তছরুপ করেছে, ব্যাংকে যে পরিমাণ ঋণ খেলাপি রয়েছে তা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ সম্ভব ছিল। জাতীয়করণ করার ব্যাপারে সরকার হার্ড লাইনে থাকলে রাষ্ট্র তথা জনগণ পিছিয়ে যাবে এ কথা হলফ্ করে বলা যায়। কারণ উন্নয়নের অন্যতম সূচক মানব সম্পদ তৈরি। আর সেটা এই কথিত অদক্ষ ব্যবস্থাপক বেসরকারি শিক্ষকদের দিয়েই করতে হবে। অদক্ষ ব্যবস্থাপক বললাম এই কারণে কয়েক দিন আগে ডিজি মহোদয় বলেছেন, জাতীয়করণে জন্য টাকা কোন সমস্যা না, সমস্যা ব্যবস্থাপনা।

এসব বিষয় নিয়ে বেসরকারি শিক্ষকবৃন্দ সামাজিক গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু এ পর্যন্ত একটি পোস্টও কোন কর্তাব্যক্তির নজরে পড়েনি। এটাও পড়বে না জানি।

যাই হোক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষকদের ৫% ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা প্রদান করেছেন সেজন্য সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আর আশা করছি বাকি দাবিগুলো তিনি পূরণ করে বেসরকারি শিক্ষকদের দুর্ভোগের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত