সিনেমায় আগ্রহী মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের মিয়ামি

‘এই মঞ্চটা আমার জন্য অনেক প্রাপ্তির। অনেক কিছু শিখেছি, জেনেছি। এগুলো ভবিষ্যতের পথচলায় খুব কাজে দেবে। ফলাফল ঘোষণার পর মনে হচ্ছিলো যে ইশ! আরেকটু যদি ভালো করতাম, যদি আরও সিরিয়াস থাকতাম। বাট এটা নিয়ে আক্ষেপ নেই। কারণ মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’র শীর্ষ পর্যায়ে যারা ছিলেন, তারা প্রত্যেকেই ভালো। সবারই যোগ্যতা রয়েছে সেরা হওয়ার। কিন্তু সবাই তো আর বিজয়ী হতে পারে না! এটা মেনে নিয়েছি আমি। এখন সামনে এগিয়ে যেতে চাই।’ কথাগুলো বলছিলেন এবারের মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগীতার ১ম রানারআপ স্থান অর্জন করে নেওয়া ফাতিহা মিয়ামি। বিজয়ী হতে না পারলেও মনে আক্ষেপ নেই তার। যা পেয়েছেন তাতেই সন্তুষ্ট তিনি।

মিয়ামি নামে পরিচিত হলেও পুরো নাম ফাতিহা খূল্দ মিয়ামি। জন্ম তিতাস পাড় বিধৌত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে। শৈশব ও কৈশোরের বেশিরভাগ সময়টাও সেখানে কেটেছে। বাবা-মা দু’জনেই সরকারি চাকরি করেন। সেই সুবাদে ঘুরেছেন দেশের অনেক জায়গা। অনেকটা সময় কাটিয়েছেন রাজধানী ঢাকাতেও।

স্বামীর মৃত্যুতে নিজেকে শেষ করতে চেয়েছিলেন যে অভিনেত্রী

ছোটবেলা থেকেই মেধাবাী ছাত্রী। স্বপ্ন দেখেছেন বড় হয়ে ডাক্তার হবেন। মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করবেন। সেই স্বপ্ন নিয়ে সাফল্যের সঙ্গেই শেষ করেছেন এমবিবিএস। শেষ করেছেন ইন্টার্নশিপও। কিছুদিনের মধ্যে যেকোনো মেডিক্যালে যোগ দিতে পারেন। ইচ্ছে আছে দেশের বাইরে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করার।

সেই ইচ্ছা পূরণের আগেই সদ্য শেষ হওয়া 'মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ' প্রতিযোগীতার প্রথম রানার আপ হয়ে আলোচনায় চলে আসেন। সেইসঙ্গে জয় করেছেন মিস গ্রান্ড ইন্টারন্যাশনাল খেতাবও।

ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বুকে বয়ে চললেও নিজেকে তিনি বিকশিত করেছেন নানাভাবে। স্বভাবে অনুসন্ধানী। শিখেছেন কারাতে। কারাতে প্রতিযোগিতায় জাতীয়ভাবে ব্রোঞ্জ পদকও অর্জন করেছেন এই সুন্দরী।

ছবি আঁকায় বেশ পারদর্শী মিয়ামি। ২০০৪ সালে শিল্পী জাতীয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় সিলভার পদক পেয়েছিলেন মিয়ামি। নিয়মিত না আঁকলেও এর প্রতি একটা অনুরাগ রয়েছে তার।

এইসব কাজের সুবাদে শোবিজেও জড়িয়েছেন মিয়ামি। মডেল হিসেবে অংশ নিয়েছেন আড়ং, রেড অরিজিন, দেশি দশ, রঙ, ইয়োলোর মতো নামী ব্রান্ডগুলোর ফটোশুটে। র‌্যাম্পেও নিজেকে বেশ পরিচিত করে তুলেছেন তিনি। চিকিৎসকের পাশাপাশি শোবিজেও নিয়মিত নিজের রঙ ছড়াতে চান এই সুন্দরী। কাজ করতে চান শোবিজ অঙ্গনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম চলচ্চিত্রেও।

এই সুন্দরী বলেন, ‘আমি সিনেমায় কাজ করতে চাই। শোবিজ অঙ্গনে এটাই সবচেয়ে বড় মাধ্যম। অনেক বিশাল আয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। তাই সিনেমা নিয়ে আমার মধ্যে ফ্যান্টাসি আছে।

ব্যতিক্রমী-মৌলিক গল্প, মানসম্মত নির্মাণ হলে তবেই কাজ করবো। আমি কিন্তু অনেক আগে থেকেই সিনেমায় কাজের অফার পেয়েছি। কিন্তু তখন শোবিজে নিয়মিত কাজ করার ইচ্ছে ছিলো না। ভেবেছিলাম ডাক্তারি করবো পাশাপাশি র‌্যাম্প ও বিভিন্ন ফটোশুটে মডেলিংটা চালিয়ে যাবো। সেই ভাবনায় পরিবর্তন এনে দিয়েছে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ। শোবিজে কাজ করবো। বিশেষ করে পছন্দমাফিক সিনেমায় কাজ করবো।’

নিজেকে অভিনয়ের জন্য তৈরি করতে কিছু পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছেন মিয়ামি। শিগগির অভিনয়ের উপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেবেন তিনি। শুরু করবেন কোর্স।

মিয়ামি বলেন, ‘র‌্যাম্প মডেল হিসেবে অনেক কাজ করা হয়েছে আমার। আজরা মাহমুদের কাছ থেকে গ্রুমিং নিয়েছি র‍্যাম্পের জন্য। দেশে অনেক শোতে অংশ নিয়েছি। এছাড়া নেপালে অনুষ্ঠিত সার্ক ফ্যাশন উইকে অংশ নিয়েছি। ভারতেও বেশ কিছু র‌্যাম্প শো-তে কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়গুলো আমাকে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ হওয়ার পথে প্রেরণা দিয়েছে।’

‘জীবনে এই প্রথম কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিলাম। যখন একটু একটু করে সামনে এগিয়ে গেলাম এবং সেরা ৩০ এ পৌঁছালাম মনে হলো যে কিছু একটা হতেও পারে।’ যোগ করেন মিয়ামি।

ছোটবেলার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। শোবিজে কাজ করলেও সেটাকে থামিয়ে রাখতে চান না এই সুন্দরী। মিয়ামির জবাব, ‘এটা আমার জীবনের প্রথম স্বপ্ন। অনেক পরিশ্রমও করেছি আমি এটাকে পূরণ করতে। সুন্দরী প্রতিযোগিতা থেকে কিছু একটা ফলাফল যেহেতু এসেছে, তাই আমি এখন মিডিয়াতে কাজ করতে চাই। কিন্তু ডাক্তারিকে বাদ দিয়ে নয়। শোবিজে কাজ, ডাক্তারি দুটোই চালাতে চাই। আমি আসলে সবক্ষেত্রে ‘পারফেকশনিস্ট’ হতে চাই। আর সেজন্যই আমি মনে করি প্রতিটি মেয়েই তার নিজের রাজ্যে সেরা। যদি সে তাকে তার স্বপ্নের মতো করে তৈরি করে নিতে পারে। আমি সেই সেরাদের অন্যতম একজন হতে চাই।’

পাশাপাশি আরও একটি কাজ তিনি করে যেতে চান। সেটি হলো বৃদ্ধদের জন্য নানারকম সেবামূলক ব্যবস্থাপনা। এ নিয়ে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে তার। ধীরে ধীরে সেগুলো বাস্তবায়ন করবেন তিনি।

তবে আপাতত মিয়ামির ব্যস্ততা মিস গ্রান্ড ইন্টারন্যাশনাল হিসেবে। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় এই খেতাব জয় করেছেন তিনি। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংককে বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা মিস গ্রান্ড ইন্টারন্যাশনাল খেতাবজয়ীরা অংশ নেবেন। সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন মিয়ামি খূল্দ মিয়ামি।

বাংলাদেশ জার্নাল/ আইএন