ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫১ মিনিট আগে
শিরোনাম

যে শহরে মসজিদ নিষিদ্ধ

যে শহরে মসজিদ নিষিদ্ধ
এই সুন্দর মসজিদটির অবস্থান ইথিওপিয়ার নেগাশ শহরে

বিশাল একটা শহর। অথচ সেখানে কোনো মসজিদ নেই। বিষয়টা কি আপনারা কল্পনা করতে পারছেন? পারুন আর না পারুন, এটি সত্যি ঘটনা। এই পৃথিবীতে এমন একটা শহর আছে যেখানে মসজিদ তৈরি নিষিদ্ধ। সেটি হচ্ছে আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার আকসুম শহর, সেখানে কোনো মসজিদ নেই।

একদল ধর্মপ্রাণ মুসলিম অনেকদিন ধরেই এখানে মসজিদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু শহরের খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতারা সেখানে কোনো মসজিদ নির্মাণ করতে দেবেন না বলে পণ করে বসে আছেন। তারা বলছেন, আমরা মরে গেলেও এই শহরে কোনো মসজিদ হতে দেবো না।

শহরের সিনিয়র ধর্মীয় নেতা গডেফা মেরহা বলেন, ‘আকসুম একটি পবিত্র স্থান, আমাদের মক্কা। এটা হচ্ছে সিটি অফ মনেস্ট্রি। তাই এখানে কেবল গির্জা থাকবে কোনো মসজিদ নয়।’

তার যুক্তি হলো: ইসলামের পবিত্র স্থানগুলোতে যেমন গির্জা নিষিদ্ধ তেমনি আকসুমেও কোনো মসজিদ থাকতে পারেনা।

গডেফা মেরহা আরো বলেন, ‘এখানে কেউ যদি মসজিদ নির্মাণ করতে আসেন তাহলে আমরা মরব। কখনোই এটা মেনে নেয়া হবেনা। আমাদের জীবদ্দশায় এটা আমরা অনুমোদন করবো না।’

যদিও 'জাস্টিস ফর আকসুম মুসলিম' ব্যানার নিয়ে একদল মুসলিম ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা বলছেন, মসজিদ নির্মাণ ও প্রার্থনার সুযোগ পাওয়া তাদের অধিকার। আর মুসলিমদের এ তৎপরতায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে সেখানকার অর্থোডক্স খ্রিস্টানরা।

যদিও সেখানকার অনেকে বিশ্বাস করেন যে এ বিতর্ক অর্থহীন কারণ প্রাচীন এ শহরটি অনাদিকাল থেকেই ধর্মীয় সহনশীলতার জন্য সুপরিচিত। ধর্ম দুটির অনুসারীদের মতে, ইসলামের সূচনালগ্নে মক্কায় অমুসলিম শাসকদের অত্যাচারে পালিয়ে প্রথম মুসলিমরা এসেছিলো এই শহরে। তখনকার খ্রিস্টান রাজা তখন তাদের স্বাগত জানিয়েছিলেন। আর মূলত আরব উপত্যকার বাইরে এটাই ছিলো মুসলিমদের প্রথম কোনো উপস্থিতি।

বর্তমানে আকসুমের লোকসংখ্যা ৭৩ হাজার। এদের মধ্যে মাত্র দশ শতাংশ মুসলিম, আর ৮৫ ভাগ হচ্ছে অর্থোডক্স খ্রিস্টান। আর পাঁচ শতাংশ খ্রিস্টান ধর্মের অন্য ধারার অনুসারী।

খোলা স্থানে নামাজ পড়েন মুসলিমরা

শহরে কোনো মসজিদ না থাকায় খোলা স্থানে নামাজ পড়তে বাধ্য হন মুসলিমরা। এছাড়া খ্রিস্টানদের একটি বাড়ি তারা কয়েক প্রজন্ম ধরে নামাজের জন্য ব্যবহার করে আসছেন। তবে খ্রিস্টানরা তাদের মাইকে আজান দেয়া বা নামাজ আদায়ের কাজ করতে বাধা দেয়।

৪০ বছর বয়সী আব্দু মোহাম্মেদ আলী বলেন, ‘আমাদের তেরটি অস্থায়ী মসজিদ আছে। শুক্রবারে আমরা যদি মাইক ব্যবহার করি তাহলে তারা বলে যে আমরা সেন্ট ম্যারিকে অসম্মান করছি।’

চিকিৎসক আজিজ মোহাম্মেদ প্রায় বিশ বছর ধরে আকসুমে বাস করছেন। তিনি বলছেন, মসজিদ না থাকায় অনেক মুসলিম খোলা জায়গায় প্রার্থনা করতে বাধ্য হয়। এখানে আমরা মুসলিম ও খ্রিস্টানরা একসাথেই বসবাস করি। খ্রিস্টানরা আমাদের কোনো কিছুতেই বাধা দেয় না। কিন্তু আমাদের মসজিদ বানাতে দেয় না। তাই বহু বছর ধরেই আমরা রাস্তায় নামাজ আদায় করছি। আমাদের একটি মসজিদ দরকার।’

‘আমাদের শান্তিতে থাকতে হবে'

প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে যখন ইথিওপিয়ায় সম্রাট হাইল সেলেসি ক্ষমতায় ছিলেন তখন আকসুমেও একই রকম মতপার্থক্য দেখা দেয়। রাজ পরিবারের সদস্য, যিনি শহরের তখনকার নেতা ছিলেন তিনি একটি সমঝোতা করে দেন। যার ফলে মুসলমানরা ভুকিরো-মারে শহর থেকে প্রায় পনের কিলোমিটার দূরে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিল।

ওই শহরে মুসলিমদের জন্য রান্নার কাজ করেন কেরিয়া মেসুদ। তিনি বলেন, ‘মসজিদ বানানোর জন্য আমরা জোর করতে পারি না। আমাদের শান্তিতে থাকতে হবে।’

গডেফা মেরহা অবশ্য বলছেন উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে এবং উভয়ের মধ্যে ইব্রাহীম নবী সম্পর্কীয় কিছু একই বিশ্বাস কাজ করে।

তিনি জানান, তার বেস্ট ফ্রেন্ড হলো একজন মুসলিম এবং তারা এক সাথেই বিয়ে, শেষকৃত্যের মতো অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দেন। তার বিশ্বাস ইথিওপিয়ার অন্য অঞ্চলের মুসলমানরা আকসুমে মসজিদ বানানোর এই প্রচারণার পেছনে আছে।

কিন্তু অর্থোডক্স খ্রিস্টানরা আকসুমের পবিত্রতা রক্ষায় সেটি হতে দেবেনা।

তবে অনেকেই আশা করছেন সম্রাট হেইলি সেলাসিসের সরকার একটি সমঝোতা তৈরি করতে পারবেন। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবিই আহমেদের বাবা একজন মুসলিম ছিলেন আর মা খ্রিস্টান। রিজিওনাল কাউন্সিল অফ মুসলিম বলছে তারা খ্রিস্টানদের সাথে আলোচনা করবেন।

কাউন্সিল কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাহসে আশা করছেন, খ্রিস্টানরা তাদের মসজিদ নির্মাণে সহায়তা করবে। যদিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

আকসুমের মুসলিম নারীরা

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত