ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

শাহেদের আদ্যোপান্ত

  সুশান্ত সাহা

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২০, ২২:২০

শাহেদের আদ্যোপান্ত

রিজেন্ট হাসপাতাল কাণ্ডের পর শাহেদের নানা অপকর্ম বেরিয়ে আসছে। নানাভাবে ভিআইপি ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন তিনি। এমএলএম ব্যবসা থেকে শুরু করে এক পর এক জালিয়াতি ও নানারকম প্রতারণা অতঃপর রিজেন্ট হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে ধরা খেয়ে গেলেন তিনি। কথায় আছে চোরের ১০ দিন আর গৃহস্থের একদিন।

আরো পড়ুন: শাহেদকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলো ‘আসল’ রিজেন্ট গ্রুপ

২০১১ সালে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় এসে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা দিয়ে শাহেদ ওরফে শাহেদ করিম ওরফে কাজী শাহেদের উত্থান শুরু হয়। পরবর্তীতে এমএলএম ব্যবসা করে গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এমননিভাবে শাহেদ খুব অল্পদিনে অবৈধ টাকার পাহাড় গড়ে তোলেন। প্রতারণা মামলায় অসংখ্যবার জেলও খেটেছেন।

আরও পড়ুন: যার তথ্যে ধরা পড়লেন শাহেদ

শাহেদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০টি মামলা খুঁজে পেয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। বেশিরভাগই প্রতারণা মামলা। কিন্তু তার নানাবিধ অপকর্মের নাগাল পায়নি কেউ। কারণ তিনি নিজেকে কখনও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, কখনও গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠ, আবার কখনও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সংশ্লিষ্ট বলে পরিচয় দিয়ে বেড়াতেন। মামলার খবর ঢেকে রেখে নিজেকে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে বেগ পেতে হয়নি শাহেদকে। তবে মহামারি করোনাভাইরাস চিকিৎসার নামে প্রতারণা এবং জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার খবর ফাঁস হতেই একে একে বেরিয়ে আসছে তার আরো অপকর্মের ফিরিস্তি।

আরও পড়ুন: রিজেন্টের চেয়ারম্যান শাহেদ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

শাহেদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের ছবি যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে, তেমনি বিএনপি আমলের কয়েকজন হোমরা-চোমরার সঙ্গেও তার ছবি আর পেপার ক্লিপিং বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।

কমেন্টে বলা হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধে ফাঁসিতে ঝোলা জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী এবং দুর্নীতির দায়ে জেলে থাকা গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল শাহেদের।

জানা যায়, প্রতারক শাহেদের প্রতারণা, জালিয়াতি ও আত্মসাৎ থেকে রেহাই পায়নি রিকশাচালক, বালু ব্যবসয়ী, রিজেন্ট কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল সার্টিফিকেট দেয়া ও বেসরকারি খাতের পদ্মা (সাবেক ফারমার্স) ও এনআরবি ব্যাংক।

জালিয়াতির মাধ্যমে দুটি ব্যাংক থেকে তিনি অর্থ আত্মসাৎ করেন। ব্যাংক দুটির করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়, কিন্তু ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি অধরাই থেকে গেছেন।

২০১১ সালে ধানমন্ডি ১৫ নম্বর সড়কে একটি এমএলএম কোম্পানি খোলেন তিনি। যার নাম ছিল বিডিএস ক্লিক ওয়ান। মূলত এই এমএলএম কোম্পানির মাধ্যমেই তার উত্থান শুরু। এমএলএম কোম্পানি খুলে ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তখন মাহেদ নিজেকে মেজর ইফতেখার করিম চৌধুরী নামে পরিচয় দিতেন। এই পরিচয় দেয়ায় তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় দুটি ও বরিশালে একটি মামলা রয়েছে। মামলার পর কয়েক বছর তিনি ভারতের বারাসাতে সপরিবারে আত্মগোপন করে থাকেন। পরে নানা কৌশলে মামলাগুলো থেকে জামিন নিয়ে দেশে ফিরে এসে নতুন কারবার শুরু করেন।

বিডিএস কুরিয়ার সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার নামে অনেকের কাছ থেকে শাহেদ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে উত্তরাসহ বেশ কয়েকটি থানায় ৮টি মামলা হয়েছে। মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক বিমানবন্দর শাখা থেকে ৩ কোটি টাকা ঋণ নেন শাহেদ। সেখানে দাখিল করা নথিপত্রে নিজেকে কর্নেল (অব.) ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী পরিচয় দেন। এই ভুয়া পরিচয় দিয়ে কাগজপত্র দাখিল করায় তার বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা চলছে।

সূত্র জানায়, রাজনীতিক, আমলা, ইঞ্জিনিয়ার, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কে, কিসে খুশি হন প্রথম দর্শনে কথাবার্তার মধ্যেই বুঝতে পারতেন ধূর্ত শাহেদ। এ জন্য রিজেন্ট হাসপাতালসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে রাখতেন সুন্দরী নারী। আর এই নারীদের নানাভাবে কাজে লাগাতেন তিনি। কাউকে নারী সাপ্লাই দিয়ে খুশি করতেন; আবার কখনো নারীর ভয় দেখিয়ে কাজ বাগিয়ে নিতেন। মূলত উপরতলায় শাহেদকে অবাধ যাতায়াতের সুযোগ করে দিয়েছে ‘সুন্দরী নারী’।

আরও পড়ুন: শাহেদের গোপন আস্তানায় যেতেন কারা?

এদিকে বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান শাহেদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। এর আগে বুধবার ভোর ৫টার দিকে সাতক্ষীরার সীমান্তের দেবহাটা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সকাল ৮টায় তাকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়।

র‍্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সকাল থেকে তার অপকর্মের চাঞ্চল্যকর বেশকিছু তথ্য বের করেছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই সবকিছু গণমাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত