ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

সুলতানা ফেরদৌসির একগুচ্ছ কবিতা

  শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক

প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:৫৯  
আপডেট :
 ২০ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:১০

সুলতানা ফেরদৌসির একগুচ্ছ কবিতা

(আদিমতার একাল)

ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা, মুখে আচলঁ চাপা দিয়ে

বলে উঠলো কৌতুহলী কিছু মহিলা!

ওর মধ্যে একজন মহিলা খুব হিংস্র ছিল,

মুখ বেকিয়ে বলে উঠল, ইশ!

আমার বেটার লগে নষ্টামি করলি?

মহিলার হাতের মুঠোয় মেয়েটার এক গোছা চুল!

অনেকেই না বুঝে মাঝ রাতে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে!

কেউ বলছে পরকীয়া প্রেমের গল্প, ধরা পড়েছে।

যে পুরুষটা জড়িত ছিলেন তার কোন খোঁজ নেই,

মেয়েটির বাবা মা ক্ষীণ গলায় বলার চেষ্টা করেছিল,

প্রকৃতির ডাকে মেয়েটি বেরিয়েছিল, ওই লোকটি

ওৎ পেতে ছিল, কিশোরী মেয়েটি তীব্র প্রতিবাদ করে,

হায়রে কপাল; কেউ শুনতে চাইল না, ধরা পরার পর

মেয়েটি কে দোষী সাব্যস্ত করে!

বয়স তার চৌদ্দ, সদ্য কৈশোর;

ওর ভিজে কাপড় খানা ছিঁড়ে কেমন লেপটে গেছে!

বৃষ্টির ধারা অঝোরে পড়ছে তার চোখ বেয়ে,

সে কি কাঁপছে নাকি কাঁদছে, আদিম অবস্থান!

মুখে কামড়ের দাগ, সারা শরীরে খামচাখামচির রেশ,

যন্ত্রণার গল্পটা বেদনা ছড়িয়েছিল ঘৃণার ফিসফিসানিতে,

ওরা শরীরের দিকে তাকিয়েছিল, মেয়েটির ইচ্ছে করছিল

শরীরটাকে গুটিয়ে হাতের মুঠোয় ছুঁড়ে মারে অনেক দূর!

আজ যেন তার নিস্তার নেই, বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রশ্ন!

ফাঁকে ফাঁকে গালি, বেশরম মাইয়া মানুষ!

কোন অপরাধ না করেও ফতোয়াবাজির কাঠগড়ায়,

নিভে যাবে অস্তিত্বের বিপুল পিপাসা আদিম জোর থাপ্পড়ে!

এই আধুনিক যুগে দাঁড়িয়ে, এই লজ্জা কিভাবে লুকিয়ে রাখব?

মেয়েটি অবশেষে মারা যায়, ওর আপনজন বিচার চায় না!

তারা জানেন, বহুদিনের তপ্ত মাটি সহজে শীতল হবে না!

তবে, গ্রামের মানুষ একটা ব্যাপার খেয়াল করল, বিচারের

দিনে সমস্ত আকাশ বড্ড বেশি ছাইভস্ম হয়ে উঠেছিল!

সেটাই ছিলো পৃথিবীর প্রতিবাদ নাকি অন্য কিছু।

(হঠাৎ পায়রা উড়ে চলে গেল)

সেদিন আমার মন ভালো ছিল না, বেলা শেষে এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি হয়েছে!

পরে জানতে পারলাম, আজকে আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সন্মান জানাব,

মন আমার ভালো হয়ে গেলো! আমরা বাঙালি, আবেগের বশবর্তী হয়ে যাওয়া, সহজ।

এখানে ছোট বড় সবাই মিলে, পুরাতন সেই দিনগুলোর সাথে, মিলিত হয়ে যাই।

যখন অনাগত দুপুর বেলা, সাধারণ বাঙালি ভাত ঘুমের ঘোরে, ঠিক তখনই পায়রা!

পায়রাগুলো খুব অপেক্ষা করতে থাকে, কখন আসবেন সেই অনন্য দাতা, পেটপুরে

খাওয়ার জন্য পাখিরা তার অপেক্ষা করত!

বঙ্গবন্ধুর কথা বলছি...

যিনি আমাদের নিজস্ব এক ঠিকানা দিয়ে গিয়েছেন, অনবদ্য এক সৃষ্টি!

খোলা আকাশের চত্বর এখন আমার তোমার সবার। পায়রা জানে?

সময়ের পশ্চিমে সেই ধু ধু করা তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে পায়রাগুলো

চলে গেল, অভিশাপ দিয়ে! ওদের প্রিয়জনকে মেরে ফেলার জন্য।

দিন যায় রাত আসে, বঙ্গবন্ধু হৃদয়ের মাঝে বাংলাদেশ আছে, থাকবে।

(বৃক্ষেরা ভিজে যায়)

কেউ চাইলে ভিজতে পারে, এই কথাটি শম্পা জানতো না!

সে জানতো মিথ্যে অভিযোগ চকচকে প্রলোভন,

সূক্ষ্ম গোলকধাঁধা, বেল্লিক বালকের মতো দুঃখ চাওয়া।

দিন বদলের স্বপ্ন দেখতে দেখতে এক ফালি চাঁদ পাওয়া!

মাঝেসাঝে সে অনুভব করে, নিরবে,

অভিমান করে পাখি গান ভুলে যায়।

দিন বদলের পর, শম্পা জানতে পারল;

ভালোবাসার বীজে আকাশ বৃষ্টি ছড়ায়!

বৃক্ষেরা চাইলেই ভিজতে পারে।

হয়তো এভাবে অভিমান ভুলে নতুন নদীর তীরে এসে হাজির,

আশ্চর্য ভালোবাসার নৌকা; যার আছে নিজস্ব সংগীত।

পৃথিবীর সকল প্রান্ত সীমানা পেরিয়ে পুরো নদীর দেখা।

বৃক্ষেরা সারাদিন ভিজতে থাকে! তারপর ইতিহাস।

শম্পা এবার জানতে পারল...

তার নামের অর্থ বহন করে "বিদুৎ"।

(গলখেসিয়া)

এক প্রকার সংযোজন, সাদা রঙের মেঠো ফুল,

তাকিয়ে থাকে, আমার হৃদয় জমির আল বেয়ে!

ফুটে উঠেছে নিঃশব্দ অহংকারে;

ছুঁয়ে যাওয়া এলোকেশে প্রজাপতির খেলা!

খুঁজে বেড়ায় মেঠো পথ ফুলের গন্ধে মাতাল হাওয়া,

যেন, রূপালী রোদে পুড়ে মনটা সোনা হয়ে গেল!

অপেক্ষা করে নন্দিনী দিনের পর দিন! তারপর

বুদ হয়ে থাকে, অপার কোন ভালোবাসায়;

এই রকম পথ পরিক্রমায় নন্দিনী কান্না ভুলে

ফিক করে হেসে উঠল!

চারিদিকে তখন বেশ নিস্তব্ধতা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত