ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

দশ সেকেন্ডেই প্রাইভেটকার চুরি করতো চক্রটি!

  সুজন কৈরী

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৫৮

দশ সেকেন্ডেই প্রাইভেটকার চুরি করতো চক্রটি!
প্রাইভেটকার চোর চক্রের সদস্য।

রাজধানীসহ ময়মনসিংহ, নরসিংদী, গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রাইভেটকার চোর চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. পারভেজ (২৫), কামাল হোসেন গাজী (৩৪), বাবু মিয়া ওরফে নাজমুল হাসান (২২) ও মো. সুমন (৩১)।

বুধবার তাদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ৪টি চোরাই প্রাইভেটকার, পাঁচটি চোরাই কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও দুটি মাস্টার চাবি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপপ্তারকৃতরা বর্তমানে ডিবি পুলিশের রিমান্ডে রয়েছেন।

ডিবি পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার পারভেজ ২০০৭ সালে প্রথমে ঢাকায় এসে লেগুনা চালাতেন। এরপর ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বাসের চালক ছিলেন। পরে ওই বছর পারভেজ গাড়ি চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। প্রথমে বিভিন্ন গাড়ির ব্যাটারি, পরে প্রাইভেটকার ও মোটর সাইকেল চুরি করতে থাকেন। চুরির অপরাধে গ্রেপ্তারের পর বেশি কিছুদিন কারাবন্দি থাকেন। কারাগারে পরিচয় হয় কামাল নামে আরেক চুরির মামলার আসামির সঙ্গে। এতে চুরির পথ আরও খুলে যায় পারভেজের। কারাগারেই দুইজন পরিকল্পনা করেন এক সঙ্গে চুরির কাজ করার।

কারাগার থেকে বের হয়ে এক সঙ্গে গাড়ির ব্যাটারি চুরি শুরু করেন। এরপর মোটরসাইকেল চুরি কার শুরু করেন। কিছুদিন পর শুরু করেন প্রাইভেটকার চুরি। গত পাঁচ বছর ধরে দুটি মাস্টার চাবি দিয়ে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার চুরি করেছেন। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হলেও ছাড়া পাওয়ার পর আবারও চুরি করেন তারা। চুরি করা গাড়ি অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করছিলেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প অঞ্চল থানায় একটি গাড়ি চুরির মামলা হয়। চোরাই গাড়ি উদ্ধার করতে গিয়ে এই চোর চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। চক্রটি মাত্র ১০ সেকেন্ডেই একটি গাড়ি চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারে।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার বিভিন্ন স্থানের সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পারভেজকে শনাক্ত করেন গোয়েন্দারা। পরে তাকে তেজগাঁও শিল্প অঞ্চল থানাধীন পূর্ব নাখাল পাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যে তার সহযোগী কামাল, বাবু ও সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা পাঁচ বছর ধরে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, ধানমন্ডি লেকপাড় রোড, উত্তরা, গাজীপুরের শ্রীপুর, মাওনা বাজারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাইভেটকার চুরি করতেন। তারা একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। এই চক্রের মূলহোতা ছয় মামলার আসামি পারভেজ।

সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে গোয়েন্দারা দেখতে পান, ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার একটি সড়কে গাড়ি পার্কিং করে অফিসে ঢোকেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাইদুল হাসান। এরপরই টি-শার্ট পরা এক যুবক গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ান। ফোনে কথা বলার ভঙ্গি করে আশপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। আশপাশে কারও উপস্থিতি না দেখে টার্গেট প্রাইভেটকারটির দরজা খুলে ভেতরে ঢোকেন। সঙ্গে থাকা মাস্টার কি দিয়ে দেয়া হয় স্টার্ট। গাড়ি নিয়ে দেন চম্পট।

গোয়োন্দারা বলছেন, চক্রটিকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্যারেজ মালিকদের প্রলোভনে চুরির পথে নামেন তারা। কারওয়ান বাজার ও উত্তরা এলাকার নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থেকে মাস্টার কি সংগ্রহ করেন। মূলত পুরনো মডেলের প্রাইভেটকার তাদের টার্গেট।

গোয়েন্দারা বলছেন, চুরির পর গ্যারেজে দালাল বা সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করা হয় গাড়ি। তারা আবার দোকানে দোকানে পার্টস আলাদা করে বিক্রি করেন।

ডিবি পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার চোর চক্রটির সদস্য সুমন চোরাই গাড়িগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পেইজ ও বিক্রয় ডটকমের মাধ্যমে বিক্রি করছিলেন। ১৫-২০ লাখ টাকার গাড়ি তারা ৩-৪ লাখ টাকায় বিক্রি করতেন। তবে মালিকানা পরিবর্তনের জন্য কোনো ক্রেতা তাদের চাপ দিতেন না। কারণ অল্প টাকায় এমন গাড়ি সমস্যা থাকতে পারে ভেবেই কিনতেন তারা।

যে কৌশলে গাড়ি চুরি করতো চক্রটি:

পারভেজ ও কামাল হোসেন গাজী প্রাইভেটকার চুরি করার সময় স্পটে থাকেন। কামাল হোসেন গাজীর কাজ হচ্ছে প্রাইভেটকারের মালিকের গতিবিধি লক্ষ্য করা। আর পারভেজের কাজ হচ্ছে প্রাইভেটকারটি কিছু সময় পর্যবেক্ষণ করে, মাত্র ৪০-৫০ সেকেন্ডের মধ্যে মাস্টার চাবি দিয়ে প্রাইভেটকার চালু করে সহযোগীকে নিয়ে পালিয়ে যান।

বিক্রির পদ্ধতি:

প্রথম গ্রুপ ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে চুরি হওয়া মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার নরসিংদী পলাশ থানার নাজমুল হাসানের গ্যারেজে জমা করেন। পরে তার কাছে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো। দ্বিতীয় গ্রুপ নাজমুল হাসান গাড়ি মেরামত, যন্ত্রপাতি পরিবর্তন ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর, চেসিস নম্বর পরিবর্তন করেন। তৃতীয় গ্রুপ সুমনের নেতৃত্বে গাড়ির বিক্রির জন্য বিভিন্ন অনলাইন পেইজ ও বিক্রয় ডট কমের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ খুঁজে বের করতেন। পরে তারা ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় বিক্রি করতেন।

গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ী চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, প্রাইভেটকার চোর চক্রের মূলহোতা পারভেজের নামে নামে রাজধানীসহ বিভিন্ন থানায় ছয়টি ও তার সহযোগী কামাল হোসেন গাজীর নামে বেশ কয়েকটি চুরির মামলা আছে। আর এই ঘটনায় তাদের চারজনের নামে আরও একটি চুরির মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, গাড়ি কোথাও পার্কিং করে রেখে যাওয়ার সময় গাড়ির কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। কারণ গাড়িতে কাগজপত্র রেখে যাওয়ার জন্য চোরাইকৃত গাড়ি বিক্রি করতে চোর চক্রকে বেগ পেতে হয় না। পাশাপাশি তিনি গাড়িতে বিভিন্ন টেকার ডিভাইস্ ও জিপিএস ব্যবহার করার পরামর্শও দেন।

ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, একটা গ্যারেজের মালিকের সঙ্গে তারা চুক্তিবদ্ধ হন। গ্যারেজ মালিককে তারা ব্যাটারি, গাড়ি ও মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে দিতো। আর মালিক সেগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করতেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত