ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

তাপস-সাঈদ দ্বন্দ্বে যা বলছে আওয়ামী লীগ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২১, ১১:৫৫  
আপডেট :
 ১১ জানুয়ারি ২০২১, ১২:১৭

তাপস-সাঈদ দ্বন্দ্বে যা বলছে আওয়ামী লীগ
ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন এবং বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপস

ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে মামলা করার পর করপোরেশনের বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।

শুরুটা হয় ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখে ডিএসসিসির ফুলাবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর অবৈধ দোকান উচ্ছেদ নিয়ে। সেদিন নকশা বহির্ভূত এমন অভিযোগ এনে ৯১১টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়। এই উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপস।

সে সময় সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন দাবি করেন দোকানগুলো অবৈধ নয়। আদালতের নির্দেশে বৈধতা দেয়া হয়েছে।

কিন্তু বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপসের দাবি দোকানগুলোর কোনো বৈধতা নেই। সেগুলো রাস্তা ও মার্কেটের ভিতরের, লিফটের ও সিঁড়ির জায়গা দখল করে বানানো হয়েছে।

অন্যদিকে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে দেয়া টাকার বিনিময়ে ওইসব দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারা কাগজপত্র দেখান, যেখানে পাঁচটা পে অর্ডারের মাধ্যমে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা দেয়া হয় সিটি করপোরেশনকে। এসব পে অর্ডার আদালতে দাখিল করে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যবসায়ীরা।

পরে সাঈদ খোকনসহ নগরভবনের আরো দুই কর্মকর্তাসহ মোট সাতজনের বিরুদ্ধে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

এরপরই সাবেক এবং বর্তমান দুই মেয়রের দ্বন্দ্ব সামনে চলে আসে।

এ ব্যাপারে দেশের একটি দৈনিককে সাঈদ খোকন বলেন, ‘সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে ডিএসসিসি। এখানে দোকানদার যারা আছেন এবং মার্কেট যেখানে আছে সেটা বৈধ।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি নিজে হাতে এসব দোকানদারদের কাগজপত্র দিয়ে এসেছি, বকেয়া রসিদ দিয়ে এসেছি। আমি আদালতের নির্দেশে আমাদের বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই দোকানগুলোর নকশার সংশোধনপূর্বক দোকানদারদের কাছ থেকে টাকা জমার আহ্বান জানিয়েছি।’

‘তাদের কাছ থেকে ৭/৮ বছরের টাকা বকেয়া ছিল। আমরা সেই বকেয়া টাকা বুঝে নিয়ে রসিদ দিয়েছি এবং তাদেরকে ব্যবসা পরিচালনা করার অনুমতি দিয়েছি’ বলেন তিনি।

‘তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জন্য বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে দায়ী করেন’ ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন।

এদিকে গত শনিবার ঢাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের এক প্রতিবাদ সমাবেশে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেন।

সেখানে তিনি দাবি করেন, ‘তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন এবং শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করছেন। অন্যদিকে, অর্থের অভাবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গরিব কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।’

এসব কারণে ফজলে নূর তাপস ডিএসসিসি আইনের লঙ্ঘন করে মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এমন কথার জবাবে রোববার এক অনুষ্ঠানে ফজলে নূর তাপস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা ওনার (সাঈদ খোকন) ব্যক্তিগত অভিমত। এটা কোনো গুরুত্ব বহন করে না। ব্যক্তিগত আক্রোশের কোনো বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয়াটাও সমীচীন মনে করি না।’

কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না এই অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ভ্রান্ত কথা। এমন বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই।’

আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে?

সদ্য বিদায়ী বছরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন। আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসকে।

তাপসের ছেড়ে দেয়া আসনে সাঈদ খোকন নির্বাচন করতে চাইলেও সেটাও তাকে না দিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনকে।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হিসেবে আছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক এই মেয়র।

ডিএসসিসির সাবেক ও বর্তমান দুই মেয়রের বিবাদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা নুহ উল আলম লেনিন বলেন, ‘এই দু’জন দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের যদি কোনো বিষয়ে ভিন্নমত থাকে তা তারা পারস্পরিক আলোচনার মধ্যে দিয়ে এটার সমাধান করতে পারেন। অথবা পার্টির উচ্চতর ফোরামে উত্থাপন করতে পারেন।

দলের মধ্যে এ নিয়ে কোনো অস্বস্তি আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তাদের বেশ কিছু বিকল্প আছে, প্রকাশ্যে এই বিতর্কটা খুব শোভন না। পার্টির ডিসিপ্লিন মানতে হলে পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয় বাইরে যাবে না।’

এ বিষয়ে রোববার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এখানে দলের কোনো কিছু নেই। এটা সাবেক এবং বর্তমান দুই মেয়রের ব্যক্তিগত বক্তব্য।’

আরো পড়ুন

মেয়র থাকার যোগ্য নয় তাপস​

সাঈদ খোকনের বক্তব্যের জবাবে যা বললেন তাপস​

বছরের শুরুতেই কাঁদলেন তাপস!​

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত